Nirmala Sitharaman

আজ ফাইনাল, নির্মলার দর্শনেই কি নিশ্চিন্তি দর্শকের

দু’টি দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছরে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালের ভারত-পাক দ্বৈরথে ঐতিহাসিক তাৎপর্য থাকতে পারত বলে অনেকে মনে করেন।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২২ ১১:২৯
Share:

নির্মলা সীতারামন। ফাইল চিত্র।

কে বলে ফাইনালে ভারত নেই! তবে আজ, রবিবার টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল শুরুর আগে রোহিত শর্মা বা বিরাট কোহলির বদলে নির্মলা সীতারামনকেই মনে পড়ছে।

Advertisement

সেই যে তিনি বলেছিলেন, ‘টাকার দর কমছে না। ডলারের দর বাড়ছে।’ নির্মলা তাইয়ের ধাঁচেই অভিনব ‘ভারতীয় দর্শন’ বলছে, আমরা বর্তমানের আনন্দ হারিয়ে ফেলিনি, ছেলেরা নির্ভার চাপমুক্ত ভবিষ্যৎ এনে দিয়েছে। ইংল্যান্ডের কাছে গোহারান হেরে ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারের আশঙ্কা থেকে মুক্তি তো ঘটল! সমাজমাধ্যমের রসিকতায় কেউ কেউ আবার হারকেই জয়েও পাল্টে ফেলছেন। জনপ্রিয় ‘মিমে’ নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের সান্ত্বনা, ‘মন খারাপ ক’রো না মিত্রোঁ, ইংল্যান্ড এখন অখণ্ড ভারতেরই অংশ’!

দু’টি দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছরে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালের ভারত-পাক দ্বৈরথে ঐতিহাসিক তাৎপর্য থাকতে পারত বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ফাইনাল হলেও ভারতীয়ের একাংশের তীব্র পাকিস্তান বিরোধিতায় যুক্তি খুঁজে পান না ইতিহাসবিদেরা। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী হাসেন, ‘‘আসলে ভারত বা পাকিস্তান খেললে দু’টি দেশের লোকই ১৬ বছরের নাবালকের মতো ছেলেমানুষি করে! এ তো সিবলিং-রাইভ্যালরি (ভায়ে ভায়ে ঝগড়া)!’’ পরশুরামের ‘তিন বিধাতা’র পীর সাহেব বলেছিলেন, গডের প্রজা তেজি শরাব, আল্লার প্রজা মিঠা শরবতে তাও মিল হতে পারে। কিন্তু ব্রহ্মার প্রজাদের সঙ্গে মিল অসম্ভব। অনেকটা সেই ধাঁচেই খেলার মাঠে অন্য দেশের প্রতি টান ক্ষমা করা গেলেও বাবর আজ়মদের দলের কারও প্রতি দুর্বলতা আজকের ভারতে যেন গর্হিত কাজ।

Advertisement

প্রাক্তন সংস্কৃতি সচিব, সাংসদ তথা প্রাবন্ধিক জহর সরকার বলছেন, ‘‘ভারত-পাক খেলাকে উপলক্ষ করে খোদ রাষ্ট্রের উদ্যোগে এক ধরনের প্রতিবেশী বিদ্বেষ বা সংখ্যালঘু বিদ্বেষ প্রচার করা হচ্ছে। পাকিস্তানে আত্মীয়স্বজন বা শিকড়ের জন্য পাক-প্রীতি থাকলেও সে না কি দেশদ্রোহী।’’ গত বছরই ক্রিকেটে পাকিস্তানকে সমর্থনের দরুন ইউএপিএ ধারায় মামলার নজিরও রয়েছে। দীপেশ বলছিলেন, ‘‘অথচ, ব্রিটেনে ভারতীয় বংশোদ্ভুত কেউ ইন্ডিয়াকে সমর্থন করলে আমরাই পুলকিত হই!’’

কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক শমিতা সেনের মনে পড়ছে, ‘‘১৯৮৭তে অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করতে প্রথম বার বিলেতে গিয়ে অবাকই লাগছিল, লন্ডন শহরটার সঙ্গে সত্যিই আমাদের দেশের বড় শহরের কীই মিল!’’ তাঁর কথায়, ‘‘আবার এখন কেম্ব্রিজে আমাদের অন্তরঙ্গতম বন্ধুদের মধ্যে জনৈক পাকিস্তানি বিজ্ঞানী রয়েছেন। বিলেতে গিয়ে ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের মধ্যে সদ্ভাব স্বাভাবিকতম ঘটনা।’’

তবু খেলার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক সারা দুনিয়াতেই বিরল কিছু নয়। বিশ্বকাপ ফুটবলে মারাদোনার আর্জেন্টিনা ইংল্যান্ডকে হারালেও তার মধ্যে কেউ কেউ ফকল্যান্ড যুদ্ধে বদলার ছোঁয়াচ পেয়েছিলেন। বলিউডে ‘লগান’-এর গল্প দেশ মাতায়। পরাধীন ভারতে খালি পায়ে মোহনবাগানের শিল্ড জয়ও লোকগাথায় পরিণত হয়। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তনিকা সরকারের কথায়, ‘‘বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভালমন্দ থাকে। দেশের সরকারও অনেক সময়ে যথেষ্ট দমনমূলক ভাবে সরকার চালায়। ইতিহাসের নানা অনুষঙ্গ থাকলেও খেলার মাঠটাকে হিংসাত্মক রাজনীতির আখড়ায় পরিণত করা হলে তা খেলার চরিত্র নষ্ট করে দেয়। দর্শকেরা যুদ্ধং দেহি মেজাজে মাঠে যায়। এটা কখনও ঠিক নয়। ফাইনালে, কে কাকে সমর্থন করল, তাতে কিছুই আসে যায় না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement