সংবিধান দিবস উপলক্ষ্যে সংসদে আলোচনা ডেকে অসহিষ্ণুতার অসন্তোষ ধামাচাপা দিতে চাইছে মোদী সরকার। আজ সেই সংবিধান দিবস নিয়েই প্রশ্ন তুললেন সীতারাম ইয়েচুরি। রাজ্যসভায় মোদী সরকারের কাছে তাঁর প্রশ্ন, ৬৫ বছর পরে ২৬ নভেম্বরকে সংবিধান দিবস হিসেবে উদ্যাপন করার কথা কেন মনে পড়ল বিজেপির? নতুন করে এই দিনটির কী তাৎপর্য খুঁজে পেলেন বিজেপি নেতারা?
১৯৪৯-এর ২৬ জানুয়ারি সংবিধানের খসড়া গৃহীত হয়। সংবিধান সভার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাতে সই করেন বি আর অম্বেডকর। এর দু’মাস পর ২৬ জানুয়ারি থেকে সংবিধান কার্যকর হয়। সেই দিনই প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়। মাঝের দু’মাস ব্রিটিশ সরকারের ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট কার্যকর ছিল। ইয়েচুরি অভিযোগ তোলেন, ‘‘বিজেপির এক বর্ষীয়ান নেতা প্রধানমন্ত্রীকে দুর্দান্ত ইভেন্ট ম্যানেজার হিসেবে বর্ণনা করেছেন। লন্ডন থেকে মালয়েশিয়া, আসিয়ান, তার পর প্যারিস, সেই ইভেন্টই চলছে। ২৬ নভেম্বরও মোদী সরকারের তেমনই এক নতুন ইভেন্ট। এই দিনটিকে উদ্যাপন করে স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেদের ভূমিকা দেখাতে চাইছে বিজেপি। বিজয়ীরাই নতুন ইতিহাস লেখে। এখানে বিজয়ীরা পুরনো ইতিহাস বদলাতে চাইছে।’’
ইয়েচুরির আক্রমণে এক দিকে কংগ্রেস নেতারা বাহবা দিয়েছেন। উল্টো দিকে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। ইয়েচুরি প্রশ্ন তোলেন, সামাজিক ন্যায় মন্ত্রক কী ভাবে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২৬ নভেম্বরকে সংবিধান দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে পারে? কী ভাবেই বা স্মৃতি ইরানির মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক স্কুলে স্কুলে এই দিনটি উদ্যাপনের নির্দেশ দিতে পারে? ইয়েচুরির বক্তৃতার পর রাজ্যসভায় হাজির সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করেন, ‘‘সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, ইয়েচুরি খোলা তলোয়ার হাতে নেমে পড়েছেন।’’ ইয়েচুরি সরাসরি অভিযোগ তোলেন, বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য হল কট্টর হিন্দুত্বকে সামনে নিয়ে আসা। সেই কারণেই গরু রক্ষার রাজনীতি করছে। আধুনিকতার সঙ্গে বিভাজনের রাজনীতি করছে। কিন্তু বিজেপি ভুলে গিয়েছে, অম্বেডকর সামাজিক ন্যায়ের জন্য উচ্চবর্ণের হিন্দুদের শোষণের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। সেই লড়াইয়ের জন্যই তিনি হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন।
ইয়েচুরির আজ বিতর্ক শেষে তেলঙ্গনা যাওয়ার কথা ছিল। তাই তিনি একটু আগে, শরদ যাদবের বদলে বলার জন্য অনুমতি চান। শরদ রাজি হলেও তাতে আপত্তি তোলেন তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর যুক্তি ছিল, জেডি (ইউ) না বললে তার পরে তৃণমূলকে বলতে দিতে হবে। রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়ানের অনুরোধে লাভ হয়নি। তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায় বলার পর শরদ যাদব মত পাল্টে নিজেই বক্তৃতা করেন। এর পরে এডিএমকে-র সাংসদ বিতর্কে অংশ নেন। সব মিলিয়ে ঘণ্টাখানেক দেরি হয়ে যাওয়ায় ইয়েচুরিকে তাঁর কর্মসূচি বাতিল করতে হয়।