দেশ-বিদেশ থেকে উনিশের অতিথিরা পৌঁছতে শুরু করেছেন শিলচরে। কেউ পশ্চিমবঙ্গ থেকে, কেউ বা বাংলাদেশ। রয়েছেন গুয়াহাটির বিশিষ্টজনেরাও। ভাষাশহিদ দিবস উপলক্ষে গত কাল শহরে অনুষ্ঠান করেছেন বাংলাদেশের লোকগীতি শিল্পী ভূপতিভূষণ বার্মা, দিতি সরকার, ভজন ক্ষ্যাপা, শ্রাবণ কুমার ও মাসুমা সুলতানা সাথী। বরাক লোকমঞ্চের আমন্ত্রণে তাঁরা কাল গেয়েছেন লোকগানের ঝর্ণাতলায় অনুষ্ঠানে।
আজ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের ডাকে কলকাতা থেকে উড়ে এসেছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী অদিতি গুপ্ত। শিলচরে নেমেই তিনি বলেন, ‘‘আগে যখন এখানে এসেছিলাম, তখনই বাবা বলেছিলেন, বহু জায়গায় গানবাজনা করতে পারো, কিন্তু শিলচরের ব্যাপারটা আলাদা। এ তোমার এক বিশেষ পাওনা। আজ আসতে আসতেও বারবার মনে হচ্ছিল, বিশ্বের অন্য কোথাও ভাষার জন্য এত লোকের প্রাণদানের ঘটনা ঘটেনি।’’ আগামী কাল তাঁর অনুষ্ঠান রয়েছে শিলচর জেলা গ্রন্থাগার প্রেক্ষাগৃহে। একই অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করবেন দেবেশ ঠাকুর। পশ্চিমবঙ্গের এই বাচিক শিল্পী ১৯ মে ভাষাশহিদ দিবসে শহরের প্রতিটি কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করবেন। কয়েক দিন লাগাতার তাঁর অনুষ্ঠান রয়েছে বরাক উপত্যকার এখানে-ওখানে। আগামী কাল থেকে তিন দিনের উচ্চারণ কর্মশালায় তিনিই মুখ্য প্রশিক্ষক। ভাষাশহিদ স্টেশন শহিদ স্মরণ সমিতি ১০০ জনকে উচ্চারণ শেখানোর ব্যবস্থা করেছে।
স্মরণ সমিতির আমন্ত্রণে কলকাতা থেকে গাইতে আসছেন শুভেন্দু মাইতি এবং তানিয়া পালও। শিলচরে আসার জন্য কাগজপত্র তৈরি করে নিয়েছেন বাংলাদেশের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, চলচ্চিত্র ও নাট্য পরিচালক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মুক্তিযোদ্ধা মেজর সামসুল আরেফিন এবং সঙ্গীত-নাট্যশিল্পী শিমূল ইউসুফ, আবৃত্তিকার ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা। ২০ মে রেলস্টেশন প্রাঙ্গণে আয়োজিত মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান রয়েছে শ্রীহট্টের অ্যাকাডেমি ফর মণিপুরি কালচার অ্যান্ড আর্ট শিল্পীদের। থাকবেন কণ্ঠশিল্পী লাভলি লস্কর, সূর্যলাল দাস ও আমিনুল ইসলাম লিটন।
ভারত-বাংলাদেশ উনিশ সন্ধ্যা-য় মঙ্গলবার গাইবেন লোপামুদ্রা মিত্র। আগামী কাল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতি আয়োজিত উনিশের আবাহনে বক্তৃতা করতে গুয়াহাটি থেকে আসছেন বিশিষ্ট লেখক প্রসূন বর্মন। শুভপ্রসাদ নন্দীমজুমদার, কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য, রাজীব দাস, সৌমেন ভারতীয়া, অরূপরতন আচার্যরা এই অঞ্চলের মানুষ হলেও কর্মসূত্রে অনেক দিন থেকে বরাকের বাইরে। কিন্তু শুধু উনিশের টানে তাঁরা চলে আসেন নিজের শহরে। অনুষ্ঠান করেন, ভাষাশহিদের শ্রদ্ধা জানান। রেলের স্টেশনমাস্টার রবি বসু মঞ্চশিল্পী না-হলেও প্রতি বছর উনিশে-তে বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে ছুটে আসেন এখানে। এমন কত লোক যে শুধু ভাষাশহিদ দিবস উপলক্ষে ছুটি নিয়ে বরাক উপত্যকায় আসেন!