ফাইল চিত্র।
দিনটা জাতির জনকের জন্মদিন এবং এ বার সেই গাঁধী-জয়ন্তীতেও ‘অফার’!
কলকাতার পরিচিত গ্যারাজ থেকে জয়পুরের জনপ্রিয় রেস্তরাঁ— নানা ঘাটে জন সাধারণের জন্য ‘বাপু অফার’ বা ‘বাপু ফেস্ট’-এর আকর্ষক সব হাতছানি। এখানেই উঠছে প্রশ্নটা, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর আদর্শের সঙ্গে এ সব বিজ্ঞাপনীয় মায়া কতটা খাপ খায়? কলকাতার একটি গ্যারাজ ২ এবং ৩ অক্টোবর গাড়ি-সংক্রান্ত পরিষেবা নিলে ছাড় ঘোষণা করেছে। কয়েকটি রেস্তরাঁয় গাঁধী-জয়ন্তীতে ছাড় দিচ্ছে। পূর্ব ভারতের হোটেল, রেস্তরাঁ সমিতির কর্তা সুদেশ পোদ্দারের কথায়, ‘‘ড্রাই ডে বলে ২ অক্টোবর রেস্তরাঁয় ভিড় কম হয়। খাবারে আকর্ষক ছাড় দিয়ে লোক টানতে পারলে এই ঘাটতি পুষিয়ে যাবে!’’
গাঁধী-চর্চায় অভিজ্ঞ ইতিহাসবিদেরা কিন্তু এতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছেন না। প্রবীণ ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়ের কথায়, ‘‘কনজ়িউমারিজ়ম বা উপভোক্তাবাদের সঙ্গে গাঁধীর সম্পর্ক নেই। তবে গাঁধী ব্যবসা-বিরোধী ভাবার কারণ নেই। বিড়লা, সারাভাই, যমুনালাল বজাজের মতো অনেক শিল্পপতিকেই তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের দোসর ভাবতেন। বরং গাঁধীর আদর্শের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেও নরেন্দ্র মোদীর মতো কেউ নানা ভঙ্গিতে নিজেকে গাঁধীবাদী প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন বা বলা ভাল গাঁধীর আদর্শ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেন। আমার কাছে এটা ঢের বেশি ভয়ঙ্কর এবং অমার্জনীয় কাণ্ড। গাঁধীর নামে কেনাকাটায় কেউ অফার দিলে বরং তাতে বিশেষ মাথাব্যথার কিছু দেখছি না।’’
এ যুগে চে গেভারার টি-শার্ট বা টুপি পণ্য হিসেবেও সারা দুনিয়ায় জনপ্রিয়। তাই গাঁধীকে ঘিরে বিপণননের বিষয়টায় অবাক নন বিজ্ঞাপন বিশারদ সৌভিক মিশ্রও। বাস্তবিক বলিউডে মুন্নাভাইয়ের কাহিনিই বলছে, কারও কারও কাছে গাঁধীর অনুষঙ্গে টাকার নোটে তাঁর ছবি বা জন্মদিনে ‘ড্রাই ডে’র বিষয়টিই অনেকের সবার আগে মাথায় আসে! এবং এ সব নানা সূত্রেই সাধারণ দেশবাসীর মধ্যে গাঁধী-চর্চা উসকে দেওয়াটা একেবারে খারাপ বলেও সবাই ভাবেন না।