অস্বস্তিতে এনসিপি নেতৃত্ব। ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে শরদ পওয়ার বিরোধী ঐক্যের ডাক দিতে না দিতেই তাঁর সঙ্গে মোদী এবং অমিত শাহের ‘যোগাযোগ’ নিয়ে প্রশ্ন উঠল।
শনিবার দিল্লিতে এনসিপির কার্যকরী কমিটির বৈঠকে পওয়ার ফের দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এনসিপির রাজনৈতিক প্রস্তাবে বিরোধী ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল পটেল বলেছেন, পওয়ারই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি গোটা বিরোধী শিবিরকে এককাট্টা করতে পারেন। এরই মধ্যে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার মুখপত্রে লেখা হয়েছে, ‘যখন ইউপিএ সরকার মোদী-শাহের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল, সেই সময় পওয়ার ও মোদীর মধ্যে সুন্দর যোগাযোগের ফলেই শাহ গোধরার একটি মামলায় জামিন পেয়েছিলেন।’
যাঁর নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোট সরকার গড়ে পওয়ার ভেলকি দেখিয়েছিলেন, সেই যে উদ্ধব ঠাকরেই এখন দলীয় মুখপত্রের সম্পাদক। সেখানেই পওয়ারের সঙ্গে মোদী-শাহের ‘যোগাযোগের’ দাবি ওঠায় এনসিপি নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন। সেনার মুখপত্রে লেখা হয়েছে, অমিত শাহ বার বার মহারাষ্ট্র সম্পর্কে খারাপ ভাষা ব্যবহার করছেন। তাঁর মহারাষ্ট্র ও মরাঠি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। ‘যখন ইউপিএ সরকার মোদী-শাহের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল, সেই সময়ে পওয়ার ও মোদীর মধ্যে সুন্দর যোগাযোগের ফলেই শাহ গোধরার একটি মামলায় জামিন পেয়েছিলেন।’ শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতকে ইডি গ্রেফতার করার পরে উদ্ধবই এই মুখপত্রের সম্পাদকের দায়িত্বে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, বালাসাহেব ঠাকরে একাধিক মামলায় ‘সরকার’-এর মতো অমিত শাহকে সাহায্য করেছিলেন। রাউত এ বিষয়ে আরও বলতে পারবেন।
এনসিপির সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল পটেলের দাবি, এই অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পওয়ারের সঙ্গে এ সবের কী সম্পর্ক! অমিত শাহকে সাহায্য করার কোনও প্রশ্নই উঠছে না, তা-ও আবার গোধরার মামলায়।’’ কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, পওয়ার নিজে বিরোধী ঐক্যের কথা বললেও তাঁকে যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী হতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুরোধ করেছিলেন, তিনি তাতে রাজি হননি।
শনিবার এনসিপির রাজনৈতিক প্রস্তাবে বিরোধী ঐক্যের ডাক দিয়ে বলা হয়েছিল, পওয়ার একই মতাদর্শ নিয়ে চলা দল ও ব্যক্তিদের একজোট করে বিজেপির মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। রবিবার তালকাটোরা স্টেডিয়ামে এনসিপির জাতীয় সম্মেলনে পওয়ার নিজে বলেছেন, ‘‘শিবাজি বলেছিলেন, দিল্লির গদির সামনে মাথা নত করব না। আজ সেই একই পরিস্থিতিতে আমরা জমায়েত হচ্ছি।’’
প্রফুল্ল পটেলের যুক্তি, পওয়ার নিজে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার নন। কিন্তু তিনি বিরোধী জোটের রূপরেখা দেখাতে পারেন। সেই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কে চন্দ্রশেখর রাও, এম কে স্ট্যালিন থেকে নীতীশ কুমার, সকলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। পটেল এই দাবি করলেও তৃণমূল সূত্র বলছে, পওয়ার বিরোধী জোটের দিশানির্দেশ করবেন, এমনটা না-ও হতে পারে। রাজনৈতিক বাস্তবতা সে কথা বলে না। পটেল আজ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের উদাহরণ টেনে বলেছেন, মমতা ২১টি দলের বৈঠক ডেকেছিলেন। সেই বৈঠকে সবাই পওয়ারের নাম বলেছিলেন। কারণ সকলের বিশ্বাস, এই একজনই বিরোধী শিবিরকে একজোট করতে পারেন। তৃণমূল নেতারা বলছেন, সবাই বললেও পওয়ার রাজি হননি। প্রথমে সায় দিয়েও পরে পিছিয়ে যান।