শিবশঙ্কর মেনন —ফাইল চিত্র
করোনা অতিমারি শুরু হওয়ার পর, গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আত্মনির্ভর ভারতের মন্ত্র গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন। ভারত যে গোটা বিশ্বের ঔষধালয়, আন্তর্জাতিক মানচিত্রে ভারত যে সবাইকে বাঁচার সঞ্জীবনী জোগাবে— এমনটাই ছিল তাঁর বার্তা।
চলতি বছরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সম্পুর্ণ বিপর্যস্ত সরকারি প্রশাসন। দেশ জুড়ে মানুষের অসহায়তা— ঘরে-বাইরে চলছে সমালোচনা। এই পরিস্থিতিতে মুখ খুললেন দেশের প্রাক্তন বিদেশসচিব ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বই, ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড এশিয়ান জিয়োপলিটিক্স’। সেই বইয়ে এবং সেই সংক্রান্ত সাক্ষাৎকারগুলিতে নাম না করে মোদী সরকারকে আক্রমণ করেছেন মেনন। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত আর বিশ্বগুরুর মর্যাদা দাবি করতে পারে না।’’ প্রাক্তন বিদেশসচিবের বক্তব্য, দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর ভারত তো বটেই প্রায় সব দেশেরই অর্থনৈতিক ক্ষমতা খর্ব হয়েছে বা হবে। আর্থিক এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাড়বে সংরক্ষণবাদ। এই পরিস্থিতিতে এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে নয়াদিল্লিকে আরও বেশি করে সংযুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘এখনও যদি ভাবমূর্তির কাজে ব্যস্ত থাকা হয়, তা হলে তার খেসারত দিতে হবে।’’
তাঁর নতুন বইটির বিষয় নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, “ভারত যখন বাইরের দেশগুলির সঙ্গে বিনিময়ের মধ্যে থাকে তখনই তার অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সুযোগ সবচেয়ে বাড়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত গত কয়েক বছর ধরে আমি দেখছি, আমাদের দেশ ক্রমশ নিজের মধ্যে গুটিয়ে যাচ্ছে। যেন ধরেই নিয়েছি আমরা ব্যতিক্রমী, অনন্য। হয়তো সত্যিই তাই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বিশ্বকে আমাদের প্রযোজন নেই। এই বইয়ে আমি সে কথাই লিখেছি।” প্রাক্তন বিদেশসচিবের মন্তব্য, “আমি মনে করি না যে বিশ্বগুরুর দাবি আমরা করতে পারি। আমরা জ্ঞান বা প্রযুক্তির মহান আবিস্কারক নই। আসলে বিভিন্ন প্রযুক্তি আমরা আমদানি করি।…কয়েক বছরে বিদেশনীতিকে ব্যবহার করা হয়েছে ঘরোয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। দেশের ভিতর নিজেদের ভাবমূর্তি তৈরি করার জন্য।”
প্রাক্তন এই আমলার মতে, যে ভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলা করা হয়েছে তাতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। ভারত তো বটেই কোভিড সঙ্কটে মন্থর হবে সব দেশের অর্থনীতিই। ফলে স্বাভাবিক প্রবণতা থাকবে সংরক্ষণশীলতার। তাই সরকারের শীর্ষ কর্তাদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, নিজেদের ভাবমূর্তির দিকে না তাকিয়ে, দক্ষতার সঙ্গে হাঁটতে হবে সামনের দিকে।