—ফাইল চিত্র।
নিজের মেয়ের কাছ থেকে প্রাণের আশঙ্কা রয়েছে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেত্রী শেহলা রশিদের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ আনলেন তাঁর বাবা আব্দুল রশিদ শোরা। শুধু তা-ই নয়, তাঁর আরও দাবি, দেশবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত শেহলার সংগঠন।
শোরার দাবি, তাঁদের শ্রীনগরের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য সশস্ত্র দেহরক্ষীদের দিয়ে হুমকি দিয়েছেন শেহলা। তাঁর অভিযোগ, শেহলার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সায় না দেওয়ার জন্যই এমনটা করছে তাঁর মেয়ে।
সোমবার শেহলার বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ এনে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন শোরা। যদিও বাবার আনা সমস্ত অভিযোগই ‘ন্যক্কারজনক এবং ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন শোহলা। তাঁর পাল্টা দাবি, বাবার বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ করার পর ভুয়ো অপবাদ দিচ্ছেন তিনি।
আরও পড়ুন: আজ কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন রাজনাথ
শেহলার পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী জুবেদা শোরা, আর এক মেয়ে আসমা এবং শেহলার দেহরক্ষীদের থেকেও প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে বলে দাবি শোরার। শেহলার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ ছাড়াও তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, দেশবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত শেহলার সংগঠন। ওই সংগঠনের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশি তদন্তের দাবি তুলেছেন শোরা। জম্মু ও কাশ্মীরের ডিজিপি দিলবাগ সিংহের কাছে লেখা তিন পাতার একটি চিঠিতে শোরার দাবি, কাশ্মীর উপত্যকায় রাজনীতিতে নামার জন্য জঙ্গি কার্যকলাপের লিপ্ত দু’জন ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছেন শেহলা। পুলিশের কাছে শেহলার আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখারও আর্জি জানিয়েছেন শেহলার বাবা।
আরও পড়ুন: ২৬/১১ হামলার চক্রী তাহাউর রানা চেয়েছিল পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক পদক
পুলিশের কাছে চিঠিতে শোরা লিখেছেন, ‘কাশ্মীর উপত্যকার রাজনীতিতে যোগদানের জন্য প্রাক্তন বিধায়ক ইঞ্জিনিয়ার রশিদ এবং জরুর বটালি নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গত বছর ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছেন শেহলা। ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে আর্থিক মদতের অভিযোগে তদন্ত করছে এনআইএর।’
প্রসঙ্গত, উপত্যকার প্রাক্তন আইএএস শাহ ফয়জলের পার্টি জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্টে (জেকেপিএম)-এ যোগ দেওয়ার কথা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন শোরা। ওই পার্টিতে যোগ দিলেও গত বছর সেই দল থেকে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেন শেহলা।
মেয়ের বিরুদ্ধে দেশবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে পুলিশের কাছে শোরা লিখেছেন, ‘সন্ত্রাসে আর্থিক মদতের অভিযোগে ইউএপিএ-তে গ্রেফতার হওয়ার দু’মাস আগে শ্রীনগরে রশিদের বাড়িতে আমাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সেটা ছিল ২০১৭-র জুন মাস। জেএনইউ-তে শেহলার শেষ সেমেস্টার চলছিল। সে সময় জেকেপিএম-এ যোগ দেওয়ার জন্য আমার মাধ্যমে শেহলাকে ৩ লক্ষ টাকার পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যদিও ওই সময় জেকেপিএম গঠিত হয়নি। সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিই। তবে পরে জানতে পারি, ওই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছিল আমার স্ত্রী জুবেদা, মেয়ে আসমা এবং শেহলার দেহরক্ষী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া সাকিব আহমেদ নামে শ্রীনগর শহরতলির একটি ছেলে। টাকা নেওয়ার কথা বা ওই দু’জনের সঙ্গে দেখা হওয়া নিয়ে আমাকে মুখ খুলতে নিষেধ করেছিল শেহলা। না হলে আমার প্রাণসংশয় হতে পারে বলেও শাসিয়েছিল সে।’
শোরার গুরুতর অভিযোগ নিয়ে টুইটারে মুখ খুলেছেন শেহলা। তিনি লিখেছেন, ‘অনেকেই আমার জন্মদাতার উল্টোপাল্টা অভিযোগের সম্পর্কে জানেন। আমার মা এবং বোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। খুব সংক্ষেপে বলতে চাই, তিনি স্ত্রীকে পেটানো, একজন ইতর, চরিত্রহীন মানুষ। আমরা শেষমেশ তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং তাঁরই প্রতিক্রিয়া এই স্টান্ট’। অপর একটি টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মা সারাজীবন হিংসা এবং মানসিক অত্যাচার সহ্য করেছেন। পরিবারের খাতিরেই চুপ করেছিলেন। এখন আমরা মুখ খুলতে শুরু করেছি। এবং তিনি (শোরা) আমাদের পাল্টা নির্যাতন শুরু করেছেন’।
শেহলার আরও দাবি, গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ আনার পরই কাশ্মীরের একটি আদালতের নির্দেশে ১৭ নভেম্বর শ্রীনগরের শ্রীনগরের চানাপোরা এলাকার বাড়িতে ঢোকা বন্ধ হয়েছে শোরার। যদিও পুলিশের কাছে শোরার দাবি, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাড়িতে দেশবিরোধী কার্যকলাপ চলছে।”
শেহলার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের পর গোটা ঘটনা নিয়ে পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। শোরার লেখা অভিযোগপত্রটি আইজিপি (কাশ্মীর রেঞ্জ)-এর কাছে পাঠানো হয়েছে।