‘মরাঠা স্ট্রং ম্যান’ শরদ পওয়ার। —ফাইল চিত্র
বারবারই জল্পনার জলে ঢেউ তুলছেন ‘মরাঠা স্ট্রং ম্যান’ শরদ পওয়ার। বিরোধীরা সরকার গড়লে, তাতে নেতৃত্ব দিতে ‘অনীহার’ কথা বলে আবারও জোট রাজনীতির বাজারকে সরগরম করলেন তিনি। পওয়ারের বক্তব্য, তিনি সরকারের নে্তৃত্ব দিতে চান না। বরং যিনি সরকারকে নেতৃত্ব দেবেন, তাঁকে সমর্থন করার পাশাপাশি পথও দেখাতে আগ্রহী তিনি।
পওয়ারকে নিয়ে দীর্ঘদিনের গুঞ্জন, তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। প্রশ্ন উঠছে, এই ‘পথ দেখানোর’ প্রসঙ্গ তুলে তিনি কি রাষ্ট্রপতি পদে নিজের দাবিটিকেই আগাম জানিয়ে রাখলেন? অথচ এর আগে গত এক বছরে বিরোধী জোটের প্রশ্নে বারবার তাঁকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে। ডিসেম্বরের গোড়ায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুম্বইয়ে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে বাইরে এসে ইউপিএ-কে অস্তিত্বহীন বলেছিলেন। তার মাস দুয়েক আগে কংগ্রেসকে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন পওয়ার। বলেছিলেন কংগ্রেসের অবস্থা উত্তরপ্রদেশের জমিদারদের মতো। তাঁর কথায়, “এক কালে তাদের হাজার হাজার একর জমি ছিল। হাভেলি ছিল। এখন সেই জমি নেই, আয় কমে যাওয়ায় হাভেলি মেরামত করারও সঙ্গতি নেই। তবু জমিদার সকালে ঘুম থেকে উঠে বলেন, আশেপাশের সব জমির তিনিই মালিক!”
মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে শরদ পওয়ারের কংগ্রেস সম্পর্কে এ হেন তির্যক মন্তব্য ফের বিজেপি-বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। প্রশ্ন ওঠে পওয়ার কি তা হলে কংগ্রেসকে গুরুত্বহীন করে দিয়ে মমতার নেতৃত্বে জোট গঠনের কথা ভাবছেন, যেখানে কংগ্রেসও বাইরে থেকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়? জাতীয় স্তরে নেতৃত্বের প্রসঙ্গটিকে এড়িয়ে কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ আজ বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত ক্ষণ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, কংগ্রেসের তত ক্ষণ কোনও সমস্যা নেই। রাহুল গাঁধী তাঁকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেন।” পওয়ারের মতে, “এক সময় কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত কংগ্রেসের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। এই বাস্তব পরিস্থিতি তাদের মেনে নিতে হবে। কংগ্রেস নিজের মনোভাব বদলাতে পারলেই অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক মজবুত হবে।”
এর আগেও পওয়ার এক বার জানিয়েছিলেন, তাঁর সরকারি পদের আকাঙ্ক্ষা নেই। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পরেও পওয়ারের দাবি ছিল, তাঁর প্রশান্ত কিশোরকে প্রয়োজন নেই। সরকারি পদের কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষাও নেই তাঁর। কিন্তু বারবার এই একই কথা বলায়, আজ রাজনৈতিক শিবিরে এই প্রশ্নও প্রশ্ন উঠছে যে, পওয়ার কি তবে সমবায় ক্ষেত্রে নিজের প্রভাব বজায় রাখতে সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহকে হাতে রাখতে চাইছেন? নাকি তাঁর ও তাঁর দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি-র তদন্তের চাপে বিরোধী জোটে সমস্যা তৈরি করছেন? বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।