ফাইল চিত্র
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মার্চের শেষে সমস্ত বিরোধী নেতৃত্বকে চিঠি লেখেন বৈঠকে বসার জন্য। সেই সূত্র ধরে মুম্বইতে সলতে পাকানোর কাজ শুরু করলেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, তিনি একটি তালিকা তৈরি করে কথা বলতে শুরু করেছেন বিরোধী নেতাদের সঙ্গে। সেই তালিকা চূড়ান্ত করার আগে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছেন পওয়ার। সকলের সময় পেলে মুম্বইয়েই বিরোধী নেতাদের বৈঠকের তারিখ স্থির হবে। মে মাসের গোড়ায় সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসা যাবে বলেই আশা করছে পওয়ারের শিবির।
কারা রয়েছেন এই তালিকায়? আর কীসের ভিত্তিতেই বা বিরোধী নেতাদের এই তালিকা? রাজনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, যে তালিকা ধরে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, সেখানে রয়েছেন মহারাষ্ট্র, বাংলা, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ড, তেলঙ্গনা, কেরল, রাজস্থান, দিল্লি, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীরা। পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে পওয়ার, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে অখিলেশ সিংহ যাদব এবং কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবুদল্লা এই বৈঠকে থাকবেন।
বার্তা স্পষ্ট। ডাকা হচ্ছে, অ-বিজেপি প্রাক্তন এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীদের। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, এই ভাবে তালিকা তৈরির পিছনে রয়েছে কার্যত তৃণমূল কংগ্রেসেরই কৌশল। যে কারণে বিরোধী বৈঠক দিল্লিতে না করে মুম্বইয়ে করা স্বস্তিজনক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের পক্ষে (দিল্লিতে করলে স্পষ্টতই জোট বৈঠকের নেতৃত্বস্থানে সনিয়া গান্ধী থাকবেন)। আবার এই প্রাক্তন এবং বর্তমান অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর তালিকায় কংগ্রেসের দুই মুখ্যমন্ত্রী (রাজস্থানের অশোক গহলৌত, ছত্তীসগঢ়ের ভূপেশ বঘেল) থাকলেও এড়ানো যাবে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে।
আর যে মুখ্যমন্ত্রীরা থাকবেন, জাতীয় স্তরের বিরোধী রাজনীতিতে ধারে ও ভারে তাঁরা প্রায় কেউই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধারে কাছে নেই। তিন জন তো প্রথম বারের মুখ্যমন্ত্রী (তামিলনাড়ুর এম কে স্ট্যালিন, মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরে, ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন)। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন বারের মুখ্যমন্ত্রীই শুধু নন, সাত বারের সাংসদ এবং রেল মন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন একাধিকবার। ফলে মুম্বইয়ের বৈঠকের রাশ ও নেতৃত্ব মমতার হাতেই অনেকটা থাকার কথা।
শরদ পওয়ার অবশ্যই মমতার থেকে রাজনীতিতে প্রবীণ। কিন্তু পওয়ারকে কোনও ভাবেই আগামী দিনের জোট নেতৃত্বে মমতার ‘প্রতিপক্ষ’ হিসাবে দেখছে না তৃণমূল। পওয়ারের দল মমতার মতো একাই রাজ্যে ক্ষমতায় নেই। তারা কংগ্রেস এবং শিবসেনার উপর নির্ভরশীল। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “পওয়ার এখন রাজনীতিতে পিতামহের ভূমিকায়। তা ছাড়া, কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল হওয়ার সুবিধাও রয়েছে। সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে কোনও রকম দরকষাকষির ক্ষেত্রে পওয়ারের ভূমিকাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।”
সূত্রের খবর, কথা বলে পওয়ার ‘নিশ্চিত’ যে টিআরএস-এর কে চন্দ্রশেখর রাও প্রস্তাবিত বিরোধী বৈঠকে যোগ দেবেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউই নিশ্চিত নন যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবাল যাবেন কি না। কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাত ক্রমশ বাড়ছে কেজরীবালদের। কংগ্রেসের সঙ্গে এক মঞ্চে থাকার ক্ষেত্রে তাঁর অস্বস্তি রয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, পওয়ারের উদ্যোগে শীতলতা দেখালেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাকলে আপ নেতা আসতে পারেন।