—প্রতীকী চিত্র।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে এ বার আদালতে গেল বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে তারা। তাতে সিএএ-র সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। ওই আবেদনে বলা হয়েছে, যে ভাবে বিশেষ কয়েকটি সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
মাত্র তিন পাতার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনেপাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, খ্রিস্টানধর্মাবলম্বীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বরের আগে যাঁরা এসেছেন, তাঁরাই এ দেশের নাগরিকত্ব পাবেন। অর্থাৎ পড়শি দেশ থেকে আসা মুসলিমরা যে এ দেশের নাগরিকত্ব পাবেন না, তা কার্যত স্পষ্ট।
এখানেই আপত্তি তুলেছে এসএফআই। তাদের দাবি, দেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আইনের চোখে সবাই সমান। ধর্ম, জাত, বর্ণ, লিঙ্গ এবং জন্মস্থানের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করা যায় না।কিন্তু সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ঠিক সেটাই করছে।
আরও পড়ুন: স্কুলের মধ্যে ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা পুলিশ অফিসারের, অভিযোগ ঘিরে রণক্ষেত্র হাড়োয়া
কোনও কারণ না দেখিয়ে যে ভাবে বিশেষ কয়েকটি বিশেষ ধর্মের মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়েও আপত্তি তুলেছে বাম ছাত্র সংগঠন। তাদের দাবি, যে কোনও আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য ও কার্যকারণ বলা থাকে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এ বিষয়ে নীরব। কেন এই আইন আনা হচ্ছে, কেন আইনে সংশোধন দরকার, তারও ব্যাখ্যা নেই। ধর্মীয় নিপীড়ণের শিকার বিশেষ কিছু সম্প্রদায়ের মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়া হলেও, তাঁরা যে সঠিক তথ্য দিচ্ছেন, তা কী ভাবে যাচাই হবে, বলা নেই তা-ও।
আজকের দিনে ১৯২০ সালের পাসপোর্ট আইনের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে এসএফআই। ব্রিটিশ আমলের এই আইন অনুযায়ী, পাসপোর্ট ছাড়া কেউ ভারতে ঢুকতে পারবে না। তবে পরিস্থিতি বুঝে এ ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি বা শ্রেণিকে ছাড় দিতে পারে সরকার। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনেও এর উল্লেখ রয়েছে। ওই আইনে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হবে না বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘এঁদের জন্যই ধর্ষণ বন্ধ হয়নি’, ইন্দিরা জয়সিংহকে তোপ আশাদেবীর
বর্তমানে ব্রিটিশ আমলের এই পাসপোর্ট আইনের কার্যকারিতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে এসএফআই।তাদের প্রশ্ন, ব্রিটিশ আমলের ওই আইন অনুযায়ী, চাইলে যে কাউকে ছাড় দিতে পারে সরকার। কিন্তু কাদের এই ছাড় দেওয়া হবে? সরকার চাইলে তো যা খুশি করতে পারে? আজ নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করতে ধর্মের নিরিখে এর প্রয়োগ করছে। কাল অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে, সে অন্য ভাবে করবে। সেই কারণে পাসপোর্ট আইনে এই ছাড় দেওয়ার ক্ষমতাটিই অসাংবিধানিক বলে দাবি করেছেন এই মামলার সঙ্গে যুক্ত অন্যতম আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়।