‘এক্স’, ‘ওয়াই’ এবং ‘জেড’। ইংরেজি বর্ণমালার শেষ তিন অক্ষরের ব্যঞ্জনা পাল্টে যায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার শব্দকোষে। ভারতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে হাই প্রোফাইল ব্যক্তিত্বদের যে নিরাপত্তা দেওয়া হয়, তার স্তরবিন্যাসে ব্যবহার করা হয় এই অক্ষরগুলি।
নিশ্ছিদ্র এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মূলত ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। ‘এক্স’, ‘ওয়াই’, ‘ওয়াই প্লাস’, ‘জেড’, ‘জেড প্লাস’ এবং ‘এসপিজি’ বা ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’।যাঁর জীবন যতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তাঁর জন্য তত নিবিড় নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, প্রথম সারির রাজনীতিক এবং শীর্ষ আমলারা সাধারণত এই চার স্তরের নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে এই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয় পেতে পারেন শিল্পপতি, তারকা, খেলোয়াড়-সহ অন্যান্য বিশিষ্ট নাগরিক। প্রয়োজনে, সাধারণ নাগরিককেও এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হতে পারে।
ব্রিটিশ ঘরানা অনুসরণ করে ভারতের রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে ‘প্রেসিডেন্টস বডিগার্ড’ বা ‘পিবিজি’। ভারতীয় সেনার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলির মধ্যে অন্যতম এই ‘পিবিজি’।
বাকি ক্ষেত্রে ‘এক্স’ ‘ওয়াইড ‘জেড’ এবং ‘এসপিজি’ সংক্রান্ত নিরাপত্তার যে বিন্যাস, তার দেখাশোনার দায়িত্বে মূলত থাকে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা সিআরপিএফ এবং সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিয়োরিটি ফোর্স বা সিআইএসএফ।
ভারতে স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ বা এসপিজি-র নিরাপত্তা পান শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী। তার জন্য বার্ষিক ব্যয়ের পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা।
আগে সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার জন্যেও বরাদ্দ ছিল এসপিজি নিরাপত্তা। ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বর কেন্দ্র সরকারের নির্দেশে এসপিজি-র পরিবর্তে তাঁদের জন্য বরাদ্দ করা হয় ‘জেড প্লাস’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এসপিজি-র জন্য নিরাপত্তারক্ষীদের নেওয়া হয় সিআরপিএফ এবং আরপিএফ থেকে। তবে আধিকারিকরা আসেন আইপিএস এবং সিআরপিএফ থেকেই।
অত্যাধুনিক অস্ত্রের পাশাপাশি এই নিরাপত্তা বলয়ের বৈশিষ্ট বিএমডব্লু, রেঞ্জ রোভার, মার্সিডিজ, টাটা সাফারি-র গাড়ি। আকাশপথে যাতায়াতের সময় ব্যবহার করা হয় এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং বিমান অথবা এম আই-১৭ হেলিকপ্টার।
এক্স শ্রেণির নিরাপত্তায় সারাক্ষণের জন্য থাকেন ২ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা আধিকারিক বা পিএসও। অর্থাৎ বিভিন্ন শিফ্টে দিনভর দায়িত্ব পালন করেন মোট ৬ জন পিএসও।
ওয়াই শ্রেণিতে ২ জন পিএসও-র পাশাপাশি দায়িত্বে থাকেন আরও এক জন সশস্ত্র প্রহরী। যিনি নিরাপত্তা পাচ্ছেন, তাঁর বাড়িতে এই ৩ জন সব সময় মোতায়েন থাকেন। পাশাপাশি রাতের বেলার জন্য বরাদ্দ করা হয় বাড়তি নিরাপত্তা। ১ অথবা ২ জন কম্যান্ডো-সহ ১১ জন থাকেন নিরাপত্তারক্ষার দায়িত্বে।
ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ১ জন সিআরপিএফ কম্যান্ডার, ৪ জন কনস্টেবল-সহ মোট ৫ জন নিরাপত্তারক্ষী সব সময় বাড়ির চারপাশে মোতায়েন থাকেন। পাশাপাশি, ৬ জন পার্সোনাল সিকিয়োরিটি অফিসার বা পিএসও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে থাকেন ঘুরেফিরে বিভিন্ন শিফ্টে।
জেড নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ৪ থেকে ৫ জন এনএসজি কম্যান্ডো-সহ ২২ জন নিরাপত্তারক্ষী দিনভর মোতায়েন করা থাকে বাড়ির চার পাশে। বাড়ির বাইরে যে কোনও সফরে সর্বক্ষণের জন্য থাকেন নিরাপত্তারক্ষী এবং সশস্ত্র প্রহরী।
জেড প্লাস ব্যবস্থায় জেড-এর সব সুযোগ সুবিধে তো পাওয়াই যায়। সেইসঙ্গে যোগ হয় বুলেটপ্রুফ গাড়ি এবং বাড়তি কিছু নিরাপত্তা। ১০ জনের বেশি এনএসজি কম্যান্ডো-সহ ৫৫ জন নিযুক্ত থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তার দায়িত্বে।