জঙ্গি রুখতে জনশূন্য দ্বীপে বাড়তি নজরদারি

এই সূত্রেই উপকূলীয় রাজ্যগুলি থেকে জনমানবশূন্য দ্বীপগুলির সবিস্তার তথ্য জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে দিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র বা ইসরোর উপগ্রহ।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তইবা ‘সমুদ্র শাখা’ খুলেছে। এই অবস্থায় চার পাশের ঘন জঙ্গলাকীর্ণ, জনমানবহীন ১৩০০ দ্বীপ থেকে ভারতে জঙ্গি হানার আশঙ্কা সব চেয়ে বেশি বলে জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি।

Advertisement

এই সূত্রেই উপকূলীয় রাজ্যগুলি থেকে জনমানবশূন্য দ্বীপগুলির সবিস্তার তথ্য জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে দিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র বা ইসরোর উপগ্রহ। রাজ্যগুলির রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই সব দ্বীপে নজরদারি ও নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, ইসরোর উপগ্রহ ১৩০০ দ্বীপের ছবি তুলেছে এবং তার অধিকাংশই আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। বাকি দ্বীপগুলি গুজরাত, কেরল, মহারাষ্ট্র, সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে। কেন্দ্র সুন্দরবনের ২২টি জনশূন্য দ্বীপের সবিস্তার তথ্য চাইলেও রাজ্যের উপকূল নিরাপত্তা বিভাগ জানাচ্ছে সুন্দরবন বদ্বীপে বসতিহীন দ্বীপ রয়েছে শতাধিক। সেই ঘন জঙ্গলে বাঘ, হরিণ-সহ নানা বন্যপ্রাণী থাকলেও মানুষের পক্ষে সেখানে নামা বিপজ্জনক। রাজ্যের উপকূল নিরাপত্তা বিভাগ দিল্লিকে একশোর বেশি দ্বীপের কথা জানিয়েই রিপোর্ট পাঠাচ্ছে। কেন্দ্র অবশ্য শুধু বসতিহীন ‘অফশোর’ বা বারদরিয়ার দ্বীপের নিরাপত্তা জোরদার করার কথাই ভেবেছে। কারণ, নজরদারির অভাবে ওই সব দ্বীপে জঙ্গিরা ঘাঁটি গাড়তে পারে অথবা বৈদ্যুতিন নজরদারির মাধ্যমে ভারতের উপকূল নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর।

Advertisement

কেন এই তৎপরতা? স্বরাষ্ট্রকর্তারা জানাচ্ছেন, মুম্বই হামলার সময় থেকে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলির মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে জলপথে হামলা চালানো। আইএসআইয়ের মদতে বাংলাদেশ ও মায়নমারের রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠীও সক্রিয় হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গারা মাঝেমধ্যেই নৌকা নিয়ে নেমে পড়ছে আন্দামানে। বাংলাদেশ থেকেও রোহিঙ্গারা সুন্দরবন হয়ে ঢুকতে পারে পশ্চিমবঙ্গে। চিনও যখন-তখন রণতরী পাঠাচ্ছে ভারত মহাসাগরে। চট্টগ্রাম, কলম্বো, করাচি বন্দরে চিনের ডুবোজাহাজের উপস্থিতির কথাও জেনেছে ভারতের নৌসেনা। আন্দামান বা সুন্দরবনের মাঝবরাবর চলাচল করছে চিন ও পাকিস্তানের জাহাজ। ফলে ভারত উপকূলের দ্বীপগুলির নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়ানো খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভিমত।

ওই মন্ত্রকের নথি জানাচ্ছে, ভারতীয় উপকূলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ৪৬টি রেডার স্টেশন তৈরি করছে। তার মধ্যে ৪৪টির কাজ শেষ। সাগরদ্বীপে যেখানে রেডার বসানোর কথা, ঘূর্ণিঝড়ে সেই এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা এখনও বসানো যায়নি। আন্দামানে নরকোন্ডাম দ্বীপে পরিবেশ ছাড়পত্র না-মেলায় রেডার বসাতে পারেনি সেনাবাহিনী। দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৮টি রেডার বসাতে চায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তার অনেক বেশ কয়েকটি বসবে বসতিহীন দ্বীপে।

মুম্বই হামলার পর থেকে দেশের উপকূলে ১৮৩টি থানা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০৪টি দ্রুতগামী টহলদারি ভেসেল রয়েছে উপকূল পুলিশের হাতে। ১৪টি থানা তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ১৫৮ কিলোমিটার উপকূলে। ১৮টি ভেসেল রয়েছে উপকূল পুলিশের হাতে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাই বাড়তি বন্দোবস্ত, বাড়তি নজরদারির প্রস্তুতি চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement