সংসদে ‘রংবোমা’ নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন দু’জন। — ফাইল চিত্র।
সেই মুচির খোঁজ এখনও চলছে। দিল্লি পুলিশ এ বার এই বিষয়ে সাহায্য চাইল লখনউ পুলিশের। জুতোর মধ্যে ‘রংবোমা’ নিয়ে নতুন সংসদ ভবনে ঢুকেছিলেন সাগর শর্মা, মনোরঞ্জন ডি। তাঁদের জুতোর মধ্যে সেই ছোট শিশি রাখার পকেট করে দিয়েছিলেন যে মুচি, তাঁর খোঁজই চালাচ্ছে দিল্লি পুলিশ। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, ওই মুচিকে এই মামলায় সাক্ষী করতে চাইছে তারা।
দিল্লি পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাগর প্রথমে নিজেই জুতোয় ‘রংবোমা’ রাখার একটি খোপ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি পারেননি। শেষ পর্যন্ত সেই মুচির দ্বারস্থ হন। তিনি সাইকেলে চেপে এসেছিলেন লখনউয়ের আলমবাগে। চলতি মাসের শুরুতেও এক বার সেই মুচির খোঁজে লখনউয়ে এসেছিল দিল্লি পুলিশের একটি দল। আলমবাগে গিয়ে বেশ কয়েক জন মুচির সঙ্গে কথা বলেন ওই দলের সদস্যেরা। কিন্তু সেই মুচির খোঁজ মেলেনি।
গত ১৩ ডিসেম্বর দুপুর ১টা নাগাদ লোকসভায় ‘জিরো আওয়ার’-এ দর্শক গ্যালারি থেকে চেম্বারে ঝাঁপ দিয়ে পড়েন সাগর এবং মনোরঞ্জন। জুতো থেকে হলুদ ধোঁয়া ভরা বোমা বার করে ছোড়েন তাঁরা। চারদিক হলুদ রঙের ধোঁয়ায় ভরে যায়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাংসদেরা। সাগর স্পিকারের চেয়ারের দিকে এগোতে থাকেন। তাঁকে ধরে ফেলেন দু’জন সাংসদ। সংসদের বাইরে সে সময় স্লোগান দিতে থাকেন নীলম, অমল। তারাও লাল, হলুদ ধোঁয়া ভরা বোমা ছোড়েন। এই ঘটনায় সাগর, মনোরঞ্জন ডি, অমল শিন্ডে এবং নীলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে ললিত ঝা, মহেশ কুমাওয়াতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সূত্রের খবর, পুলিশি জেরায় সাগর জানিয়েছিলেন, তিনি লক্ষ করেছিলেন সংসদে প্রবেশের সময় জুতো পরখ করা হয় না। সে কারণে তিনি জুতোয় একটি খোপ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন, যাতে ওই রংবোমা নিয়ে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়া যায়। তিনি নিজে সেই কাজটি করতে পারেননি। দিল্লি পুলিশের একটি সূত্র বলে, ‘‘নিজে ব্যর্থ হয়ে লখনউয়ের আলমবাগে এক মুচির কাছে গিয়েছিলেন সাগর। জেরায় তিনি জানিয়েছেন, বাড়ির কাছের এক দোকান থেকে দু’জোড়া জুতো কিনেছিলেন তিনি। এক-একটির দাম ৫৯৫ টাকা। সেই জুতো নিয়ে আলমবাগে মুচির কাছে যান তিনি।’’
এফআইআরে বলা হয়েছে, জুতোর বাঁ দিকের সোল কেটে খোপ তৈরি করা হয়েছিল। তার পর জুতোর নীচে রবারের তৈরি অতিরিক্ত সোল লাগিয়ে সেটি উচু করা হয়েছিল, যাতে ভিতরের জিনিসে কোনও ভাবেই চাপ না পড়ে। গর্ত বোঝা না যায়। ডান পায়ের জুতোর সোলের অংশও কাটা হয়েছিল। লখনউয়ের আলমবাগের রামনগরে সাগরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে এক জোড়া জুতো, জুতোর সোল এবং জুতো মাপার স্কেল উদ্ধার করেছে দিল্লি পুলিশের দলটি। একটি ডায়েরি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিংহকে নিয়ে বেশ কয়েকটি বইও উদ্ধার করে পুলিশের দলটি। সাগরের পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, তিনি ভগৎ সিংহকে খুব শ্রদ্ধা করেন। সমাজমাধ্যমে ভগৎ এবং কিউবার বিপ্লবী চে গেভারাকে নিয়ে বেশ কিছু পোস্ট দিয়েছিলেন সাগর।
পুলিশ জানিয়েছিল, ব্রিটিশ আমলে সংসদের ভিতর যে ভাবে বোমা ছুড়েছিলেন ভগৎ, সে রকমই কিছু করতে চেয়েছিলেন অভিযুক্তেরা। সাগর দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করেছিলেন। লখনউতে ই-রিকশা চালাতেন। তাঁর বাবা রোশনলাল শর্মা পেশায় ছুতোর। মা বধূ। সাগরের পরিবারের সদস্য এবং লখনউয়ের যে দোকান থেকে তিনি জুতো কিনেছিলেন, সেই মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।