ফাইল চিত্র।
ফোনে আড়ি পাতার পেগাসাস স্পাইওয়্যার নরেন্দ্র মোদী সরকার কিনেছে কি না, তা দেশের নিরাপত্তার কারণে বলা সম্ভব নয়। মোদী সরকার পেগাসাস স্পাইওয়্যায় কেনেনি, সেটাও নিরাপত্তার কারণে বলা সম্ভব নয়।
কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেলের এই যুক্তি সত্বেও আজ সুপ্রিম কোর্ট পেগাসাস-কাণ্ডে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি নিয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি করল। নোটিস জারির পরে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কেন্দ্রের বক্তব্য শোনার পরেই পেগাসাস-কাণ্ডে তদন্তের জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি তৈরির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চ আজ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, কেন্দ্রকে কোনওভাবেই দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করতে বলা হচ্ছে না। কিন্তু দেশের বেশ কয়েক জন নাগরিক, তাঁদের মধ্যে অনেকেই বিশিষ্ট ব্যক্তি, তাঁরা নিজেদের ফোন হ্যাক করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। সরকারের এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানাতে সমস্যা কোথায়?
পেগাসাসে বিরোধী নেতা থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সমাজকর্মী, সাংবাদিক, বিচারপতি, আইনজীবীদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ ওঠার পরে প্রথমে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সংসদে বলেছিলেন, ‘‘কারও ফোনে বেআইনি ভাবে আড়ি পাতা হয়নি।’’ মোদী সরকারই সকলের ফোনে আড়ি পাতছে বলে অভিযোগ ওঠার পরে সোমবার তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু সরকার পেগাসাস কিনেছে না কেনেনি, সে প্রশ্নের উত্তর দেননি। মামলাকারীদের দাবি ছিল, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কারও ফোনে আড়ি পাতার অনুমতি দেয়। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের বদলে তাদের হলফনামা দিতে বলা হোক।
আজ কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা যুক্তি দেন, ‘‘মামলাকারীরা চাইছেন, আমরা পেগাসাস ব্যবহার করেছি কি না, তা বলি। সকলেই জানে, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারকে ফোনে আড়ি পাততে হয়। সফটওয়্যার ব্যবহার হয়। ওঁরা জানতে চান, কোন সফটওয়্যার ব্যবহার হয়। কোনও সরকার তা বলবে না। তাতে সন্ত্রাসবাদীদের সুবিধে হয়ে যাবে। কোন সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে না, তার সঙ্গেও দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। এটা জনগণের আলোচনার বিষয় হতে পারে না।’’ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর বেঞ্চে মেহতা যুক্তি দেন, সরকার কিছুই গোপন করতে চাইছে না। সরকার যে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করবে, সেখানেই সরকার সব জানাবে।
বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘‘দেশের নাগরিক, যাঁদের মধ্যে অনেকেই বিশিষ্ট ব্যক্তি, তাঁরা তাঁদের ফোন হ্যাকিং বা আড়ি পাতার অভিযোগ তুলেছেন। সরকারি নিয়মে সাধারণ নাগরিকের ফোনে আড়ি পাতা যায়। তবে সে জন্য সরকারের নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন। তাতে কোনও ভুল নেই। সরকারের কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সামনে হলফনামা দেন, তা হলে সমস্যাটা কোথায়? ওই হলফনামায় দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত একটি শব্দও রাখার দরকার নেই। দেশের নিরাপত্তার বিষয় এই মামলার আওতার বাইরে।’’
মামলাকারীদের হয়ে কপিল সিব্বল জানান, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা যতখানি সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, ততখানিই সাধারণ মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যে সরকারের বিরুদ্ধে পেগাসাস ব্যবহারের অভিযোগ, সেই সরকারই তদন্ত কমিটি গঠন করবে এটা হতে পারে না। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ১০ দিন পরে এই মামলার ফের শুনানি হবে। আইনজীবীরা মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে ফোনে আড়ি পাতার অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকেই হলফনামা দিতে হবে।