ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে রাজস্থানের স্পিকার অভিযোগ জানিয়েছিলেন, রাজস্থান হাইকোর্টে তাঁর অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। সুপ্রিম কোর্ট পাল্টা প্রশ্ন তুলল, গণতন্ত্রে কি বিধায়কদের কণ্ঠরোধ করে দেওয়া যায়!
রাজস্থান হাইকোর্টের পর আজ সুপ্রিম কোর্টেও সচিন পাইলট ও তাঁর অনুগামী কংগ্রেস নেতাদের স্বস্তি মিলেছে। সচিন ও তাঁর অনুগামী বিধায়করা মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের ডাকা বৈঠকে গরহাজির থাকায় কংগ্রেস দাবি তুলেছিল, তাঁদের বিধায়ক পদ খারিজ করা হোক। স্পিকার সি পি জোশী তাঁদের নোটিস পাঠান। সচিনেরা রাজস্থান হাইকোর্টের যান। হাইকোর্ট স্পিকারের নোটিসে স্থগিতাদেশ জারি করলে স্পিকার তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আসেন। আজ সুপ্রিম কোর্ট রাজস্থান হাইকোর্টের সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিতে রাজি হয়নি। হাইকোর্ট স্পিকারের বিধায়ক পদ খারিজের প্রক্রিয়ায় শুক্রবার পর্যন্ত যে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল, তাতেও সুপ্রিম কোর্ট নাক গলাতে রাজি হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের এই অবস্থানে সচিনদের মুখে হাসি ফুটলেও আজ রাজস্থানের গহলৌত জানান, তাঁর সরকারের কোনও বিপদ নেই। তাঁর পক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। খুব শীঘ্রই বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হবে বলেও আজ ইঙ্গিত দেন তিনি। বুধবার ইডি গহলৌতের ভাই অগ্রসেনের বাড়ি ও দফতরে হানা দিয়েছিল। আজ রাজস্থান পুলিশের চার্জশিটের ভিত্তিতে জয়পুরের আদালত আবার একটি অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। যে কেলেঙ্কারিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত অন্যতম অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধেই কংগ্রেস বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগ তুলেছিল। গত বছর সঞ্জীবনী নামের একটি সংস্থার বিরুদ্ধে লগ্নিকারীদের ৯০০ কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠে। সেই মামলাতেই অভিযুক্ত শেখাওয়াত ও তাঁর স্ত্রী।
স্পিকারের অভিযোগ ছিল, তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের প্রক্রিয়ায় নাক গলানোর এক্তিয়ার হাইকোর্টের নেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্পিকার আর এগোতে পারবেন না। তাঁকে হাইকোর্টের শুক্রবারের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সোমবারও শুনানি চলবে। হাইকোর্ট যে রায়ই দিক, সুপ্রিম কোর্টের রায়ই শেষ কথা বলবে।
আজ শীর্ষ আদালতের বিচারপতি অরুণ মিশ্র ‘বৃহত্তর’ প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে কি বিধায়কদের ভিন্ন মত প্রকাশের কণ্ঠরোধ করা যায়?’’ সচিনদের প্রথম থেকেই যুক্তি ছিল, তাঁরা দল ছাড়ছেন না। বিচারপতি মিশ্র বলেন, ‘‘এটা সরল বিষয় নয়। এঁরা জনতার ভোটে নির্বাচিত। বৃহত্তর প্রশ্ন হল গণতন্ত্র এবং সেটা কী করে বাঁচবে, তা নিয়ে। আমাদের কাছে এটা শুধু কোনও বিধায়কের সদস্যপদ খারিজ হওয়ার বিষয় নয়।’’
স্পিকারের আইনজীবী কপিল সিব্বলের যুক্তি ছিল, সচিনদের যদি দলের বিরুদ্ধে সরব হতে হয়, তা হলে তাঁরা দলীয় বৈঠকে আসতে পারেন। তাঁরা পরিষদীয় দলের বৈঠকে ছিলেন না বলেই তাঁদের সদস্যপদ খারিজের দাবি জানানো হয়েছিল। তাঁরা সরকারে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। যোগাযোগ বন্ধ করে তাঁরা হরিয়ানার হোটেলে রয়েছেন। তাঁরা মিডিয়ায় সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের দাবি তুলছেন। স্পিকার নোটিস পাঠিয়ে তাঁদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের আর এক বিচারপতি বি আর গাভাই প্রশ্ন তোলেন, হাইকোর্ট স্পিকারকে ‘অনুরোধ’ করেছে। কিন্তু সিব্বল
যুক্তি দেন, হাইকোর্ট স্পিকারকে ‘নির্দেশ’ দিয়েছে। হাইকোর্ট তা দিতে পারে না বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, এটি গুরুতর বিষয়। এ বিষয়ে দীর্ঘ শুনানি প্রয়োজন।