আংটি বদল দুই বাঙালিনির।
গত বছরে দু’জনের প্রথম দেখা। পরিচয়, বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। সম্পর্ক এগিয়েছে স্বাভাবিক ছন্দেই। যাতে সিলমোহর দিতে সম্প্রতি আংটি বদলও সেরে ফেলেছেন পেশায় চিকিৎসক এই দু’জন। স্বপ্ন, গোয়ায় ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ করার। আদ্যোপান্ত আর পাঁচটি প্রেমের গল্পের মতো হলেও এই গল্পটি শিরোনামে উঠে আসার একমাত্র কারণ, এখানে পাত্র এবং পাত্রী দু’জনেই মহিলা। কর্মসূত্রে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের বাসিন্দা হলেও আদতে দু’জনেই বাঙালি।
বিয়ে তো দূরের কথা সমলিঙ্গের সম্পর্কের দিকেও ভ্রুকুটিই যেখানে দস্তুর, সেখানে দাঁড়িয়ে পারমিতা মুখোপাধ্যায় এবং সুরভি মিত্রের এই পদক্ষেপ এক নয়া দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বলেই মনে করছে সমাজকর্মীরা। এই সিদ্ধান্তে দু’জনেই পাশে পেয়েছেন তাঁদের পরিবারকে।
পারমিতার কথায়, ‘‘আমার যে মেয়েদেরই পছন্দ তা ২০১৩ সাল থেকেই আমার বাবা জানতেন। মাকে কিছুদিন আগেই জানিয়েছি বিষয়টি। প্রথমে খানিকটা চমকে গেলেও পরে মেনে নিয়েছেন তিনি। মা শুধু চান যে আমি খুশি থাকি।’’ সুরভির ক্ষেত্রে যদিও প্রথম থেকেই সবটাই বেশ সহজ ছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমার পরিবার কখনই আমার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে বিরোধিতা করেনি। এ ক্ষেত্রেও তাই। আমি যখন বিষয়টি আমার মা-বাবাকে জানাই তখন তাঁরা বেশ খুশিই হয়েছিলেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি এক জন মনোবিদ। আমার কাছে এমন অনেকেই এসেছেন যাঁরা নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ সমাজের সামনে জোর গলায় তুলে না-ধরতে পারার জন্য দ্বৈত জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।’’
তবে নিজের আসল সত্তা নিয়ে রাখ-ঢাকের ঘোর বিরোধী পারমিতা এবং সুরভি। তাই সমাজের সামনে পছন্দের জীবনসঙ্গীকে বেছে নেওয়ার কথা জোর গলায় জানিয়ে আংটি বদল সেরে ফেলেছেন গত বুধবার। সেখানে দু’তরফের পরিবারের লোকজন ছাড়া উপস্থিত ছিলেন তাঁদের খুব কাছের কয়েকজন বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়েরা। এসেছিলেন ‘এলজিবিটিকিউ’ সম্প্রদায়ের বন্ধুরাও।
এ বার হইচই করে বিয়েটা সেরে ফেলতে চান এই দুই কন্যা। পছন্দের জায়গা গোয়া। সেখানেই আগামী বছর সামাজিক বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চান পারমিতা ও সুরভি। সেই মর্মে খুব তাড়াতাড়িই আদালতে আর্জি জানাতে চলেছেন এই যুগল।