Diplomats Meet

টানা বৈঠকে চার চ্যালেঞ্জের দিশা খুঁজবেন জয়শঙ্কর

এই বদলে যাওয়া প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পকে কী ভাবে সামলাবে ভারত? বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, একটি চার-দফা আলোচ্যসূচি সঙ্গে নিয়ে ওয়াশিংটনের বিমানে উঠেছেন জয়শঙ্কর।

Advertisement

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৪:৫৬
Share:

এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শুভেচ্ছাপত্র হাতে নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ওয়াশিংটন ডিসি-তে পা দেওয়ার আগে যিনি বলেছিলেন, “আমরা সম্ভবত একটি নতুন জমানা দেখতে চলেছি। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আন্তর্জাতিক কূটনীতির পালাবদল হতে পারে।”

Advertisement

ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টা ধারাবাহিক বৈঠক করবেন জয়শঙ্কর। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ২০১৭ সালে ট্রাম্প যখন প্রথম বার শপথ নিয়েছিলেন, তৎকালীন বিশ্ব পরিস্থিতির তুলনায় আকাশপাতাল পার্থক্য তৈরি হয়েছে পরের আট বছরে। এমনকি ২০১৯-এ টেক্সাসে ‘হাওডি মোদী’ অনুষ্ঠানে গিয়ে মোদী যখন স্বর তুলেছিলেন ‘আগলি বার ট্রাম্প সরকার’, আজকে তাঁর শপথ গ্রহণের সময়ের পরিস্থিতিও অনেকটাই ভিন্ন।

এই বদলে যাওয়া প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পকে কী ভাবে সামলাবে ভারত? বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, একটি চার-দফা আলোচ্যসূচি সঙ্গে নিয়ে ওয়াশিংটনের বিমানে উঠেছেন জয়শঙ্কর। এই কর্মসূচি তৈরি করা হয়েছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে জোরদার করা এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়। চেষ্টা করা হচ্ছে আগামী মাসেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের একটি বৈঠক করানোর। প্যারিসে কৃত্রিম মেধা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেবেন মোদী এবং ট্রাম্প। দুই নেতাকে সেখানে পার্শ্ব বৈঠকে বসানো যায় কি না, দেখা হচ্ছে।

Advertisement

সূত্রের খবর, জয়শঙ্করের কর্মসূচিগুলিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বাণিজ্য এবং অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের মতিগতি আঁচ করা এবং ভারতের স্বার্থের সঙ্গে তাকে মাপসই করার চেষ্টা করা। এর আগে অভিবাসন নীতি আরও কড়া করা, ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতিকে বাস্তবায়নের জন্য ভিন্ দেশের পণ্যের উপরে শুল্ক চড়ানোর মতো বিষয়গুলি সাউথ ব্লকের রক্তচাপ বাড়িয়েছে। এ দিন শপথের পরে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘আমেরিকার বাণিজ্য ব্যবস্থা আমি পুরোপুরি বদলাব। আমরা অন্য দেশের উপরে কর ও শুল্ক চাপিয়ে আমাদের নাগরিকদের সম্পদ বাড়াব।’’ ভারতের বাজারে আমেরিকার বেশ কিছু পণ্যের জন্য ১০০ শতাংশ কর ধার্য রয়েছে।

দ্বিতীয়ত ট্রাম্প জমানার অভিবাসন নীতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে দিল্লি। কড়া অভিবাসন নীতি প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর কথা বলেছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পরে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তৎপর ট্রাম্প। আমেরিকার অভিবাসন দফতর ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫ লক্ষ অবৈধ অভিবাসীর তালিকা তৈরি করে ফেরত পাঠানো শুরু করেছে। প্রথম দফার তালিকায় রয়েছেন ১৮ হাজার ভারতীয়।

তৃতীয় যে বিষয়টি উদ্বেগ তৈরি করছে সাউথ ব্লকের, তা হল বেজিং প্রশ্নে ট্রাম্প নরমপন্থা নেন কি না। এই চিন্তা অবশ্য যে সব দেশ চিনের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সবারই। ভোটের আগে চিনের প্রসঙ্গে গরম প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল ট্রাম্পকে। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর ইঙ্গিতে স্পষ্ট, চিনকে নিয়ে চলার কথাই ভাবছেন ট্রাম্প। জয়শঙ্করের কাঁধে দায়িত্ব, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখা। চিনের দিকে ঝুঁকে পড়া থেকে আমেরিকাকে নিরস্ত করা।

ভারতের চতুর্থ চিন্তার বিষয়, দূষণ প্রশমনে বাইডেনের আমলের জলবায়ু চুক্তি ও প্রতিশ্রুতিগুলি থেকে পিছিয়ে আসতে পারেন ট্রাম্প। তিনি মনে করেন দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির ক্ষমতা বাড়ালে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, কাজ বাড়বে। এ ব্যাপারে পাশে পাবেন শ্রমিকদের। পরিবেশ দূষণের ক্ষতি রুখতে আর্থিক সহায়তার জন্য ভারত উন্নত দেশগুলির কাছে যে দাবি জানিয়েছে, তাকে ট্রাম্প কতটা গুরুত্ব দেবেন সেটাও চিন্তার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement