প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
দৃশ্য এক— ব্রিটেনের বিদেশসচিব লিজ ট্রুস বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লি এসে ভারতকে অনুরোধ জানালেন রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে।
দৃশ্য দুই— তার কিছু ক্ষণ পরেই নয়াদিল্লি পৌঁছলেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। আগামী কাল বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি বলবেন, পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না-করে মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্য এবং সে দেশ থেকে অশোধিত তেল আমদানি আরও বাড়াতে।
দৃশ্য তিন— বুধবার গভীর রাতে আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া ভারতের কড়া সমালোচনা করে বলেছে, নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কথা বলে, নিরাপত্তার প্রশ্নে শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করছে ভারত। একই সঙ্গে জয়শঙ্করের সঙ্গে আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ফোনে কথা বলে জানিয়েছেন, নয়াদিল্লি যেন ‘আঞ্চলিক অগ্রাধিকার’ খতিয়ে দেখে।
এক দিকে রাশিয়া। অন্য দিকে আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া। মাঝখানে ভারত।
আজ নয়াদিল্লির কূটনৈতিক মঞ্চ টানটান এই ত্রিকোণ নাটকে! রাশিয়া প্রশ্নে ভারসাম্যের নীতি গত এক মাস ধরে অনুসরণ করে চলছে সাউথ ব্লক। কিন্তু আজ একই সঙ্গে এই দ্বিমুখী চাপে স্পষ্ট হয়ে গেল মোদী সরকারের বর্তমান কিছুটা কোণঠাসা ছবিটাও।
আজ বিকেলে নয়াদিল্লি পৌঁছে সন্ধ্যায় জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন লিজ ট্রুস। আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ইউক্রেন সঙ্কট। তাঁর শুরুর সংলাপেই ট্রুস বলেন, “সার্বভৌমত্বের নীতি, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” আলোচনার আগে ব্রিটিশ হাই কমিশনের দেওয়া বিবৃতিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল ট্রুস রাশিয়ার আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশগুলির একযোগে কাজ করার বিষয়টিতে জোর দেবেন। যাতে আক্রমণকারীকে দুর্বল করা যায়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিদেশসচিব ট্রুস ভারতে এসেছেন রাশিয়ার বেআইনি ভাবে ইউক্রেন আক্রমণের বিরুদ্ধে সার্বিক কূটনৈতিক প্রয়াসকে জোরদার করতে।’ ব্রিটেনের বিদেশসচিবের কথায়, “ভারত এবং ব্রিটেনের গভীর সম্পর্ক, ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করবে। দু’টি দেশেরই কর্মসংস্থান বাড়াবে। রাশিয়ার ইউক্রেনের উপর একতরফা আক্রমণের প্রসঙ্গে ভারত-ব্রিটেন মৈত্রী খুবই জরুরি। এই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উদার গণতান্ত্রিক দেশগুলির একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।”
অন্য দিকে আমেরিকার বাণিজ্য সচিব গিনা কেইমন্ডো, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনার প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেছেন, “এখন ইতিহাসের সঠিক দিকে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। আমেরিকা এবং আরও বহু দেশের সঙ্গে থাকার সময় এসেছে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব এবং ইউক্রেনবাসীর পাশে থাকার সময় এসেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে অর্থ জোগানোর সময় এটা নয়।” সরব হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যসচিব ড্যান টেহানও। তাঁর কথায়, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে গোটা পৃথিবীতে যে আইনের শাসন চলছে, তাকে মান্য করা প্রয়োজন।”
বুধবার রাতে বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয় আমেরিকার বিদেশসচিব ব্লিঙ্কেনের। আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, ব্লিঙ্কেন ভরতকে আঞ্চলিক অগ্রাধিকার, ইউক্রেনবাসীর ভয়াবহ পরিস্থিতি এবং উন্মুক্ত ও অবাধ ভারত প্রশান্তমহাসগারীয় অঞ্চলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
বিদেশ মন্ত্রকের এই তৎপরতার পাশাপাশি আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রবাবশালী সদস্য নেদারল্যান্ডসের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভ্যান লিউয়েনের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে বৈঠক করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। আলোচনা হয়েছে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে।