ফাইল চিত্র।
প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর বোমারু বিমানের হামলা চলছে। এ দিকে হস্টেলে বা বাঙ্কারে আটকে থাকা ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের খাবার, জল ফুরিয়ে এসেছে। পানীয় জল দূরের কথা, শৌচালয়ে ব্যবহারের জলও নেই। শূন্যের নীচে তাপমাত্রা। বাইরে বরফ পড়ছে। সেই বরফ তুলে এনেই গলিয়ে জলের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এ দিকে হস্টেল বা বাঙ্কার ছেড়ে রাস্তায় বার হলে যে কোনও সময় গোলাগুলি ছুটে আসতে পারে। ভিডিয়ো বার্তায় তাঁরা সরকারের কাছে একটাই আর্জি জানাচ্ছেন, ‘আমাদের বাঁচান’, ‘আমাদের উদ্ধার করুন’।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের খারকিভ ও সুমিতে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধার করতে আজ নরেন্দ্র মোদী সরকার রাশিয়া ও ইউক্রেনের কাছে ‘সংঘর্ষ বিরতি’র দাবি জানাল। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, খারকিভ ও সুমিতে যে ভাবে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলছে, তাতে সেখান থেকে ভারতীয়দের বার করে আনতে কিছুটা হলেও যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন। পুরোপুরি না হলেও অন্তত স্থানীয় স্তরে। কিন্তু রাশিয়া বা ইউক্রেনের তরফে এ বিষয়ে কোনও ইতিবাচক সাড়া যে মেলেনি, তা মানছে বিদেশ মন্ত্রক। তবে ভারতের তিন হাজার পড়ুয়াকে ইউক্রেন পণবন্দি করে রেখেছে বলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দাবি খারিজ করে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। এর আগে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও একই দাবি করেছিল। তা-ও ভারত নাকচ করে দিয়েছিল।
খারকিভে তিনশোর বেশি ভারতীয় আটকে রয়েছেন বলে বিদেশ মন্ত্রকের হিসেব। সুমিতে আটকে সাতশোর বেশি ভারতীয়। রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলে বুধবার দুপুরে নয়াদিল্লির তরফে ভারতীয়দের খারকিভ থেকে বেরিয়ে কাছাকাছির মধ্যে তিনটি শহরের যে কোনও একটিতে চলে যেতে বলা হয়েছিল। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, সেই পরামর্শ অনুযায়ী খারকিভ থেকে পিসোচিনে ন’শো থেকে এক হাজার জন ভারতীয় চলে গিয়েছেন। শুক্রবার থেকে পিসোচিন থেকে বাসে করে পড়ুয়াদের পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, মলডোভা সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। কারণ তাঁরা পিসোচিনে ‘সেফ জ়োন’-এ রয়েছেন। কিন্তু খারকিভ ও সুমিতে আটকে থাকা পড়ুয়াদের ভাগ্যে কী রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, “খারকিভ, সুমির মতো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পড়ুয়াদের উদ্ধার করাটাই এখন অগ্রাধিকার। আমরা সুমি নিয়ে উদ্বিগ্ন। সমস্ত রকম উপায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু ওখানে যুদ্ধ চলছে। কিন্তু দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষই পড়ুয়াদের বার করে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় বাধা। আমরা সকলের সঙ্গে কথা বলছি। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ছাত্রছাত্রীরা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু যেখানে রয়েছেন, সেখানে অন্তত প্রাণের ঝুঁকি নেই।’’
প্রাথমিক ভাবে পরিকল্পনা ছিল, খারকিভ ও সুমি থেকে পড়ুয়াদের রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। সেখান থেকে তাঁদের বিমানে করে দেশে ফেরানো হতে পারে। রাশিয়ার ন্যাশনাল ডিফেন্স কন্ট্রোল সেন্টারের প্রধান কর্নেল মিখাইল মিজ়িন্টসেভ বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, তাঁরা ভারতীয় পড়ুয়াদের জন্য রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য খারকি ও সুমিতেই ১৩০টি বাস তৈরি রেখেছেন।
বিদেশ মন্ত্রক রাশিয়ার এই দাবি মানতে চাননি। মুখপাত্রের বক্তব্য, পড়ুয়াদের আস্তানা থেকে যেখানে বাস রয়েছে, তার দূরত্ব ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, গোলাগুলির মধ্যে পড়ুয়াদের এতখানি রাস্তা নিরাপদে নিয়ে যাওয়াটাই আসল চ্যালেঞ্জ। রাশিয়া পৌঁছে গেলে তাঁদের জন্য বায়ুসেনার আইএল-৭৬ বিমান মস্কোয় পাঠানো হবে। কিন্তু পিসোচিন থেকে যে-ভাবে বাসে করে পড়ুয়াদের সরিয়ে নিয়ে আসা যাচ্ছে, যুদ্ধবিরতি না হলে তা খারকিভ, সুমিতে সম্ভব হচ্ছে না।
প্রাথমিক ভাবে ২০ হাজারের মতো ভারতীয় ইউক্রেনে ছিলেন বলে বিদেশ মন্ত্রকের অনুমান ছিল। সরকারি হিসেবে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার ভারতীয় ইউক্রেন থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তার পরেও অন্তত হাজার দুয়েক ভারতীয় ইউক্রেনে আটকে থাকার অর্থ, সকলে দূতাবাসে নাম নথিবদ্ধ করাননি। ইউক্রেন থেকে আশেপাশের দেশে পৌঁছে যাওয়া ভারতীয়দের মধ্যে ১০,৩৪৫ জনকে ৪৮টি বিমানে করে দেশে নিয়ে আসা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আরও ১৬টি বিমান চলবে। যাতে অধিকাংশ ভারতীয়ই দেশে ফিরে আসবেন বলে বিদেশ মন্ত্রকের দাবি।