সাধ্বী প্রজ্ঞা। —ফাইল চিত্র।
সাধ্বী প্রজ্ঞার গডসে মন্তব্য নিয়ে হুলস্থুল লোকসভায়। নিজের মন্তব্যের জন্য শুক্রবার ক্ষমা চান বিজেপি নেত্রী। তাঁর মন্তব্য বিকৃত করা হয়েছে বলেও দাবি। পাশাপশি এ দিন সংসদে দাঁড়িয়ে রাহুল গাঁধীকে নিশানা করেন প্রজ্ঞা। কী ভাবে কংগ্রেস সাংসদ তাঁকে ‘সন্ত্রাসী’ বলেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এর জন্য রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি। তাতে ফুঁসে ওঠেন কংগ্রেস এবং বিরোধীরা। সংসদে দাঁড়িয়ে গাঁধীর হত্যাকারীকে ‘দেশভক্ত’ বলায় সাধ্বীকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে বলে পাল্টা দাবি তোলেন তাঁরা। তা নিয়ে তরজা চরমে ওঠে।
এ দিন অধিবেশনের শুরুতেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে ক্ষমা চান সাধ্বী প্রজ্ঞা। তিনি বলেন, ‘‘আমার মন্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। মহাত্মা গাঁধীকে শ্রদ্ধা করি। শ্রদ্ধা করি দেশের প্রতি ওঁর অবদানকে। যে ভাবে আমার মন্তব্য বিকৃত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তবুও কেউ আহত হয়ে থাকলে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’’ এর পরই কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীকে নিশানা করেন তিনি। গতকাল টুইটারে তাঁকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন রাহুল গাঁধী। সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রজ্ঞা বলেন, ‘‘আদালতে দোষী প্রমাণিত না হলেও, এই লোকসভারই এক সাংসদ প্রকাশ্যে আমাকে সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করেছেন, আইনত যা অপরাধ। একজন মহিলার পক্ষে অসম্মানজনকও।’’ সাধ্বীর এই মন্তব্যকে সমর্থন করেন বিজেপির সাংসদরা। রাহুলের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনার দাবি তোলেন তাঁরা।
তাতেই ফুঁসে ওঠেন কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, বিএসপি-সহ বিরোধী দলের সাংসদরা। প্রশ্ন ওঠে, সংসদে দাঁড়িয়ে গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে দেশভক্ত বলার পর নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার বদলে, প্রজ্ঞা নিজের স্বপক্ষে যুক্তি সাজাচ্ছেন কী ভাবে? লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘‘সংসদে দাঁড়িয়ে নাথুরাম গডসেকে দেশভক্ত বলা নিয়েই বিতর্ক হওয়া উচিত। ইচ্ছাকৃত ভাবে তা অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সংসদের ভিতরে যা হয়েছে, তার সঙ্গে সংসদের বাইরের ঘটনার কী সম্পর্ক? আমরা চাই উনি নিঃশর্ত ক্ষমা চান।’’
আরও পড়ুন: ‘সন্ত্রাসবাদী গডসেকে দেশপ্রেমী বানিয়ে দিলেন সন্ত্রাসবাদী প্রজ্ঞা’, কটাক্ষ রাহুলের
কিন্তু সাধ্বী প্রজ্ঞার নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে যুক্তি সাজাতে শুরু করেন বিজেপি সাংসদরা। যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন নিশিকান্ত দুবে। তিনি বলেন, ‘‘মহাত্মা গাঁধীর হত্যাকাণ্ডের তুলনায় একজন মহিলা সাংসদকে সন্ত্রাসবাদী বলা আরও লজ্জাজনক।’’
পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন স্পিকার ওম বিড়লা। তিনি বলেন, ‘‘শুধু ভারতই নয়, গোটা বিশ্ব মহাত্মা গাঁধীর আদর্শ মেনে চলে। এই নিয়ে রাজনীতিকরণ না হওয়াই শ্রেয়। নইলে বিষয়টি সর্বত্র চাউর হয়ে যাবে। তাই বলেছি, এই ধরনের মন্তব্য রেকর্ড হবে না। সংসদের ভিতরে হোক বা বাইরে, মহাত্মা গাঁধীর হত্যাকে মহিমান্বিত করায় একেবারেই অনুমোদন নেই আমাদের। গতকালই সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুরও ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।’’
কিন্তু স্পিকারের মধ্যস্থতাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং একজন সাংসদ হয়ে জাতির জনকের হত্যাকারীকে মহিমান্বিত করার আগে সাধ্বী প্রজ্ঞারই ভাবা উচিত ছিল বলে জানান এমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। ওম বিড়লার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনি বলছেন ওঁর মন্তব্য রেকর্ড করা হয়নি। কিন্তু একজন সাংসদ হিসাবে এ তো সংসদের নিয়মেরই মারাত্মক লঙ্ঘন! সংসদের সদস্য হয়ে উনি এমন আচরণ করলেন কী ভাবে? গডসে যে কোনও দেশভক্ত নয়, বরং একজন সন্ত্রাবাদী, গাঁধীর হত্যাকারী, এ ব্যাপারে সমস্ত সাংসদের একমত হওয়া উচিত।’’ ওয়েইসির মন্তব্য সমর্থন করেন বিরোধীদের সকলেই। একযোগে ‘ডাউন ডাউন গডসে’ স্লোগান দিতে শুরু করেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত সংসদের অধিবেশন স্থগিত করে দেন স্পিকার ওম বিড়লা। বিষয়টি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হতে পারে বলেও দিল্লি সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: গডসে-মন্তব্য: প্রজ্ঞা বাদ কমিটি থেকে
তবে মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত সাধ্বী প্রজ্ঞাকে ‘সন্ত্রাসী’ বলা নিয়ে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। সংসদের বাইরে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনুক বিজেপি। যা ইচ্ছা করুক। নিজের অবস্থান জানিয়েছি আমি। ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’’ ইতিমধ্যে মহাত্মা গাঁধীর বেশে সংসদভবনের বাইরে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন কংগ্রেস সাংসদরাও। সাধ্বী প্রজ্ঞাকে সাসপেন্ড করার দাবি তুলছেন তাঁরা।