সে দিন নাগপুরের অনুষ্ঠানে প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং মোহন ভাগবতের ভাষণ পরস্পরের পরিপূরক ছিল বলে সঙ্ঘের তরফে দাবি করা হয়েছে। ফাইল চিত্র।
সপ্তাহ তিনেক আগেই মিটে গিয়েছে অনুষ্ঠানটা। সঙ্ঘের মঞ্চে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতি নিয়ে হইচইও থিতিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সঙ্ঘ শিক্ষা বর্গের তৃতীয় বর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে দেশের একমাত্র বাঙালি রাষ্ট্রপতির যোগদান কতটা বদলে দিয়েছে পরিস্থিতি, সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সোমবার তার ব্যাখ্যা দিল আরএসএস। সঙ্ঘে যোগদানের জন্য ‘জয়েন আরএসএস’ পোর্টালে রোজ গড়ে যে সংখ্যক আবেদন জমা পড়ত, নাগপুরে প্রণবের ভাষণের দিনে সেই সংখ্যা প্রায় পাঁচগগুণ হয়েছে। জানিয়েছে আরএসএস।
আজীবন কংগ্রেসি তথা দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে ইতিমধ্যেই ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সঙ্ঘ। সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় নাগপুরে সঙ্ঘ শিক্ষা বর্গের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বলেই তাঁকে এই ধন্যবাদ জ্ঞাপন। আরএসএস-এর কাজ নিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের বিরোধীরা যা কিছু বলেন, সে সব আসলে অপপ্রচার— প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে সঙ্ঘের মঞ্চে আজীবন কংগ্রেসি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই। সঙ্ঘের বক্তব্য এখন এমনই। ৭ জুন নাগপুরের অনুষ্ঠানে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের ভাষণ পরস্পরের পরিপূরক ছিল বলে সঙ্ঘের তরফে দাবি করা হয়েছে। সঙ্ঘের সহসরকার্যবাহ মনমোহন বৈদ্য সে নিয়ে বিশদ নিবন্ধও প্রকাশ করেছেন। রাজ্যে রাজ্যে সংবাদমাধ্যমের হাতে সে নিবন্ধ তুলে দিয়েছে সঙ্ঘ। সোমবার কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করেও এ রাজ্যের সঙ্ঘ কার্যকর্তারা একই কাজ করেছেন। মনমোহন বৈদ্যের লেখা নিবন্ধের বাংলা অনুবাদ তাঁরা সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দিয়েছেন।
সেই নিবন্ধেই জানানো হয়েছে, সঙ্ঘের মঞ্চে প্রণববাবুর উপস্থিতির দিনে কী ভাবে সঙ্ঘে যোগদানের আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল দেশের নানা প্রান্তে। সঙ্ঘে যোগদানের জন্য সবচেয়ে বেশি আবেদন সে দিন জমা পড়েছিল বাংলা থেকেই। এ কথাও জানিয়েছেন এ রাজ্যের সঙ্ঘ নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন: পঁচাত্তরের ইন্দিরা যেন হিটলার: অরুণ
আরও পড়ুন: ভোটের আগেই রাম মন্দির গড়ার ডাক
সঙ্ঘ শিক্ষা বর্গের তৃতীয় বর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল ৭ জুন। সঙ্ঘের তরফে সোমবার জানানো হয়েছে, ১ জুন থেকে ৬ জুন পর্যন্ত ‘জয়েন আরএসএস’ পোর্টালে গড়ে ৩৭৮টি করে আবেদন জমা পড়ছিল সঙ্ঘে যোগদানের জন্য। কিন্তু প্রণববাবুর ভাষণের দিনে এক লাফে প্রায় পাঁচগুণ হয়ে যায় সেই সংখ্যা। সঙ্ঘে যোগদানের জন্য ৭ জুন ১৭৭৯টি অনলাইন আবেদন জমা পড়ে। জানানো হয়েছে সঙ্ঘের তরফে। বাংলা থেকে আবেদনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে বলেও সঙ্ঘ সূত্রের খবর।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রশিক্ষণ শিবিরের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
সঙ্ঘের জনপ্রিয়তা কি তা হলে বেড়ে গেল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মুখ দেখিয়ে? সঙ্ঘ নেতৃত্ব বলছেন, সঙ্ঘ তার ক্রিয়াকলাপের মধ্যে দিয়েই জনপ্রিয়, কারও মুখ দেখিয়ে জনপ্রিয়তা বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। তা হলে সঙ্ঘের মঞ্চে প্রণববাবুর উপস্থিতির দিনে সদস্যপদের আবেদন হু হু করে বাড়ল কেন? সঙ্ঘ সে তথ্য এমন ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচারই বা করছে কেন? আরএসএস-এর বাংলার প্রচার প্রমুখ বিপ্লব রায় বললেন, ‘‘চিরকাল কংগ্রেসের সঙ্গে থাকা প্রণব মুখোপাধ্যায় সঙ্ঘের মঞ্চে আসায় সঙ্ঘ সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে, সে কথা ঠিক। কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ নয়। সঙ্ঘের কাজের জন্যই সঙ্ঘ সম্পর্কে জনসাধারণের আগ্রহ বাড়ছে।’’
আরএসএস যা-ই বলুক, নাগপুরে সঙ্ঘের মঞ্চে প্রণবের উপস্থিতি যে সঙ্ঘের পালে নতুন বাতাস জুগিয়েছে, সে কথা সঙ্ঘের দেওয়া হিসেবে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হচ্ছে। সঙ্ঘের মঞ্চে এক ফ্রেমে প্রণব আর ভাগবৎ— এই ছবি আরএসএস-এর ‘রাজনৈতিক অস্পৃশ্যতা’কেও অনেকটা কাটিয়ে দিয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো শীর্ষস্থানীয় বাঙালি রাজনীতিক সঙ্ঘের মঞ্চে পা রাখায়, বাংলাতে প্রভাবটা ভাল মতোই পড়েছে বলেও রাজনৈতিক শিবিরের মত।