প্রতীকী ছবি।
ধর্মান্তর-বিরোধী আইন নিয়ে আরও সক্রিয় হল সঙ্ঘ পরিবার। এ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপরেও চাপ বাড়াল তারা। কর্নাটকের ধারওয়াড়ে সঙ্ঘ পরিবারের কর্মসমিতির বৈঠকের শেষে সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে জানান, কেবল জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ধর্ম পরিবর্তন হলে তা কোনও ভাবেই মেনে নেবে না সঙ্ঘ পরিবার। হোসবলের বক্তব্য, অনেকেই ফায়দা নিতে ধর্ম পরিবর্তন করেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, সেই ব্যক্তি উভয় ধর্ম থেকেই ফায়দা নিচ্ছেন। তাই হোসাবলের দাবি, যাঁরা ধর্ম পরিবর্তন করছেন, তাঁদের উচিত তা প্রকাশ্যে জানানো। তিন দিনের ওই বৈঠকে সঙ্ঘ পরিবার দাবি জানিয়েছে, দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে দ্রুত আইন আনুক কেন্দ্র।
সঙ্ঘ পরিবারের এমন দাবির সমালোচনা করে বিরোধীদের বক্তব্য, ধর্ম একান্তই কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয়। ভারতীয় সংবিধান প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাঁর পছন্দ মতো ধর্ম বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবার এখন নাগরিকদের ধর্মও ঠিক করে দিতে চাইছে। ধর্মের নামে সঙ্ঘ পরিবার তথা বিজেপি ফের আমআদমির ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ করার পরিকল্পনা নিচ্ছে বলেই মনে করছেন বিরোধী নেতারা। একই সঙ্গে তাঁদের অভিমত, পাঁচ রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা ভোটের আগে মেরুকরণের লক্ষ্যেই এই পরিকল্পনা নিয়েছে সঙ্ঘ পরিবার।
ধর্মান্তরের বিরোধিতায় দীর্ঘদিন ধরে সরব সঙ্ঘ পরিবার। ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ-সহ একাধিক বিজেপি-শাসিত রাজ্যে ধর্ম পরিবর্তন রোধী আইন পাশ হয়েছে। সূত্রের মতে, এ বার মোদী সরকার যাতে কেন্দ্রীয় ভাবে ওই আইন আনে, তা নিয়ে চাপ বাড়িয়েছে সঙ্ঘ। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে হোসাবলে বলেন, কেউ স্বেচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তন করলে সঙ্ঘের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু কেবল দেশে জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য বা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ধর্ম পরিবর্তনের বিপক্ষে সঙ্ঘ পরিবার। হোসাবলের দাবি, অনেকে ফায়দার লোভে ধর্ম পরিবর্তন করে তা গোপন রাখেন, যাতে দু’দিক থেকেই সুবিধা নিতে পারেন। তাই কেউ ধর্ম পরিবর্তন করলে স্বচ্ছতার স্বার্থে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি করেছেন ওই সঙ্ঘ নেতা।
সূত্রের মতে, সঙ্ঘের বৈঠকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিলটি দ্রুত আনার দাবি ওঠে। এ নিয়ে বেশ কয়েক বছর আগেই সঙ্ঘের কর্মসমিতির বৈঠকে প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। সঙ্ঘ চায় দ্রুত এ নিয়ে কেন্দ্রীয় আইন আনুক মোদী সরকার। হোসাবলের কথায়, ‘‘প্রত্যেক দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন থাকা উচিত। যা সে দেশের সব নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য হবে।’’ সূত্রের মতে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল আনার পক্ষপাতী মোদী-অমিত শাহেরা। সূত্রের মতে, আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই বিলটি আনার চিন্তাভাবনা রয়েছে বিজেপির। অনেকের মতে, এতে এক দিকে বিনা প্রচেষ্টায় হিন্দু ভোটের মেরুকরণ হবে, অন্য দিকে বিরোধীদের পক্ষে ওই বিলের সরাসরি বিরোধিতা করা সম্ভব হবে না। কারণ ওই বিলের বিরোধিতা করলে জনমানসে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘বিশেষ এক সম্প্রদায়কে নিশানা করার উদ্দেশ্যেই উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করার কৌশল নিয়েছে সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপি। লক্ষ্য একটাই— হিন্দু ভোটের মেরুকরণ।’’