দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে পেরোতে হবে হ্রদ। তবে পারিতোষিক হিসেবে পাওয়া যাবে মেবার রাজ্যের অর্ধেক! ঈষৎ নেশাতুর মেবারের রানা জওয়ান সিংহ (১৮২১-১৮৩৮) কথা দিয়ে বসলেন ট্রাপিজের খেলা দেখানো নটিনীকে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
দড়ি বাঁধা হল হ্রদের পশ্চিম পাড়ের এক গ্রামে। আর এক প্রান্ত পূর্ব তীরে, প্রাসাদের সঙ্গে। শুরু হল খেলা দেখানো। মাঝ বরাবর গিয়ে হ্রদের জলে পড়ে গেল ওই তরুণী। কথিত, ষড়যন্ত্র করে দড়ি ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, সম্বিৎ ফিরতে রানা বুঝেছিলেন নেশার ঘোরে কী বলে ফেলেছেন তিনি। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
জনশ্রুতি, সেই নটিনীর অভিশাপ থেকে এখনও মুক্তি পায়নি মেবারের রাজবংশ। প্রধানত দত্তকপুত্রের উপর ভরসা করেই চলছে বংশ। জওয়ান সিংহের পর সাত বারের মধ্যে মোট ছ’বারই উত্তরসূরির জন্য দত্তক নিতে হয়েছে অপুত্রক রানাদের। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
যে হ্রদকে ঘিরে এই জনশ্রুতি, তার নাম পিছোলা। রাজপুতানার প্রাচীন মেবার বংশের প্রাচীন রাজধানী উদয়পুরের প্রাণকেন্দ্রের মূল আকর্ষণ। ১৩৬২ খ্রিস্টাব্দে এই হ্রদ তৈরি করেছিল বানজারা সম্প্রদায়ের লোকজন। কৃষির সেচ ও পানীয় জলের সমস্যা দূর করতেই এই উদ্যোগ। পরে ষোড়শ শতকে এই হ্রদ ঘিরেই মেবারের রাজধানী উদয়পুর প্রতিষ্ঠা করেন দ্বিতীয় উদয় সিংহ (১৫২২-১৫৭২)। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
‘পিচ্ছু’ সম্প্রদায়ের বানজারা গোষ্ঠী বা তৎকালীন স্থানীয় গ্রাম ‘পিছোলি’ থেকেই হ্রদের নামকরণ। হ্রদে চারটি দ্বীপ আছে। জগ নিবাস, জগ মন্দির, মোহন মন্দির এবং আরশি বিলাস। প্রতিটায় রয়েছে প্রাসাদ। তার মধ্যে সবথেকে বিখ্যাত জগ নিবাসের হ্রদ প্রাসাদ বা লেক প্যালেস। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
এই প্রাসাদ ছিল মেবার বংশের রানাদের গ্রীষ্মকালীন নিবাস। তৈরি হয়েছিল মেবার রাজবংশের ৬২তম উত্তরসূরি মহারানা দ্বিতীয় জগৎ সিংহের শাসনকালে। ১৭৪৩ থেকে ১৭৪৬, মোট তিন বছর লেগেছিল নির্মাণে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
পরবর্তী কালে এই প্রাসাদ ছিল মূলত রানাদের গ্রীষ্মকালীন আবাস। সেখানেই বসত দরবার। সাদাকালো মার্বেলে তৈরি প্রাসাদের দেওয়াল সজ্জিত মূল্যবান পাথরে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহের সময়ে এই প্রাসাদে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন বহু ব্রিটিশ আধিকারিক। তাঁদের কাছে বিদ্রোহীরা যাতে পৌঁছতে না পারে, তাই নগরের সব নৌকো নষ্ট করে দিয়েছিলেন মেবারের তৎকালীন মহারানা স্বরূপ সিংহ। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
উনিশ শতকের দ্বিতীয় অর্ধ থেকে প্রাসাদের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। বিদেশি অতিথিরা এসে হ্রদ প্রাসাদের করুণ দশা দেখে হতাশ হতেন। অবশেষে মেবারের রাজবংশের উত্তরাধিকারীরা এই প্রাসাদকে হোটেলে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
জার্মান-মার্কিন বাস্তুবিদ ডেলিয়া নারায়ণ কন্ট্র্যাক্টরের নক্সায় প্রাসাদ থেকে হোটেলে সেজে ওঠে মেবারের এই স্থাপত্য। ১৯৭১ সালে হোটেলের মালিকানার হাতবদল হয়। মেবারের রানা বংশের কাছ থেকে লেক প্যালেসের নতুন কর্ণধার হয় তাজ গ্রুপ। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
নামী ভ্রমণ পত্রিকার বিচারে পিছোলা হ্রদের কোলে হোটেল লেক প্যালেস বর্তমানে বিশ্বের সেরা হোটেলের তালিকায় তৃতীয় স্থানে। এই হোটেলের প্রায় সম্পূ্র্ণটাই সাজানো রাজস্থানি হস্তশিল্পে। হোটেল থেকে শহরে ঘুরতে যাওয়ার জন্য পর্যটকদের জন্য মজুত থাকে ভিন্টেজ গাড়ি। হোটেল কর্মরত রয়্যাল বাটলারদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন মেবারের রানাদের খাস পরিচারক। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
লর্ড কার্জন থেকে প্রয়াত প্রাক্তন মার্কিন ফার্স্ট লেডি জ্যাকলিন কেনেডি, বিশ্বের নামী সেলেব্রিটিরা অতিথি হয়েছেন এই হোটেলের। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
অপরূপ ও রাজকীয় পরিবেশের জন্য এই প্রাসাদে বহু হিন্দি ও ইংরেজি ছবির শুটি হয়েছে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম ‘গাইড’, ‘রামলীলা’, ‘মেরা সায়া’, ‘ইয়াদে’, ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’, ‘হিট অ্যান্ড ডাস্ট’ এবং জেমস বন্ড সিরিজের ‘অক্টোপুসি’। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
যে নটিনীর অভিশাপের কিংবদন্তি প্রচলিত এই প্রাসাদকে ঘিরে, তার নামে এখানে একটি অঙ্গন বা চত্বর আছে। লোকমুখে তার নাম ‘নটিনী চবুতরা’। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
লেক প্যালেস হোটেলে এক দিন থাকার ন্যূনতম দক্ষিণা, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। প্রাসাদসম এই হোটেলে আছে মোট ৬৫ টি বিলাসবহুল ঘর এবং ১৮ টি সুইট। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)