Cow

গো+এষণা: পরীক্ষা দেশ জুড়ে

সরকার চায় ‘গবেষণা’। আদি অর্থে। তাই হবে সর্বভারতীয় পরীক্ষার।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:১৮
Share:

—ফাইল চিত্র

সিলেবাস বলছে, দেশি গরুর দুধে আছে সোনা। তাই তার রং হালকা হলদেটে। বলছে, পশু জবাইয়ের সঙ্গে ভূমিকম্পের সরাসরি যোগ রয়েছে। আরও বলছে, ভোপালে গ্যাস দুর্ঘটনার সময়ে যাঁরা গোবর-লেপা দেওয়ালের বাড়িতে ছিলেন, তাঁদের কোনও ক্ষতি হয়নি।

Advertisement

সরকার চায় ‘গবেষণা’। আদি অর্থে। তাই হবে সর্বভারতীয় পরীক্ষার। বসতে পারেন ছেলে-বুড়ো সকলেই। উপরের লাইনগুলো সেই পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রকাশিত পাঠ্যাংশের অন্তর্গত। এটি রয়েছে গো-কল্যাণের স্বার্থে গঠিত রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগের সাইটে। আর তাতে গরু নিয়ে গবেষণার এমন নমুনা দেখে বিস্মিত অনেকেই।

‘গবেষণা’ শব্দের উৎসেও যদিও সেই ‘গো’ বা গরু। সন্ধিবিচ্ছেদে পাওয়া যাচ্ছে, গো+এষণা। অনেক ভাষাবিদ বলেন, অতীতে প্রকৃত ধন ছিল ‘গোধন’। তাই গরু হারালে খোঁজ চলত তন্নতন্ন করে। এ ভাবেই এসেছে ‘গবেষণা’। নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বে কামধেনু আয়োগের তোড়জোড় ওই আক্ষরিক অর্থটিকে নিয়েই। ‘গোমাতা’-র বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে তাঁরা ২৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে এক ঘণ্টার একটি অনলাইন পরীক্ষার আয়োজন করেছেন বলে জানিয়েছেন আয়োগের প্রধান বল্লভভাই কথীরিয়া। জানিয়েছেন, চারটি শহরে মৃদু উপসর্গের ৮০০ জন কোভিড রোগীকে পরীক্ষামূলক ভাবে ‘পঞ্চগব্য’ (দুধ, গোমূত্র, গোবর, দই, ঘিয়ের মিশ্রণ) দেওয়া হয়েছিল। রোগ সারাতে সেটি ৯৬% সফল।

Advertisement

‘কামধেনু গো-বিজ্ঞান প্রচার প্রসার পরীক্ষা’। পরীক্ষায় বসাটা ঐচ্ছিক হলেও সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীদের চিঠি লিখে আয়োগের অনুরোধ— সেখানে যেন পরীক্ষাটা হয়। সাংবাদিক বৈঠকে কথীরিয়া বলেন, ‘‘গোমাতা একটি সম্মাননীয় শব্দ। কিন্তু সেটি যেন শাস্ত্রেই আটকে রয়েছে। প্রয়োজনীয় সচেতনতা নেই। তাই পরীক্ষার কথা ভাবা হয়েছে। এতে শুধু জ্ঞান বাড়বে না, দুধ দেওয়া বন্ধ হলেও ব্যবসায়িক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গরু কী ভাবে কাজে আসতে পারে, সে বিষয়েও মানুষ সচেতন হবেন। গোবর বা গোমূত্রের মতো তথাকথিত বর্জ্যকেও লাভজনক ভাবে ব্যবহার করতে পারেন উদ্যোগপতিরা। তাতে দেশের অর্থনীতির লাভ।’’

প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি, কলেজ স্তর ও সর্বসাধারণ (বিদেশিরা-সহ)— এই চারটি স্তরে হবে পরীক্ষা। ইংরেজি ছাড়াও ১২টি আঞ্চলিক ভাষায় পরীক্ষা দেওয়া যাবে। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কিছু পাঠ্যাংশ ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে আয়োগের ওয়েবসাইটে। থাকবে ভিডিয়ো এবং ব্লগও। অবজেক্টিভ প্রশ্নোত্তরে এই পরীক্ষার ফল জানা যাবে সঙ্গে-সঙ্গেই। মিলবে শংসাপত্র, পুরস্কারও। পিডিএফ আকারে প্রকাশিত পাঠ্যাংশ নিয়ে চর্চা চলছেই। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘দেশি গরুর স্বাস্থ্য জার্সি গরুর চেয়ে ভাল। তারা কখনও নোংরা জায়গায় বসে না। অচেনা লোক কাছাকাছি এলেই উঠে দাঁড়ায়, যেটা জার্সি গরু করে না।’’

গরু ও কোভিড-চিকিৎসার যোগ নিয়ে আয়োগের বক্তব্য শুনেও অনেকে অবাক। কথীরিয়ার দাবি, গত জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৮০০ জন মৃদু উপসর্গের কোভিড রোগীকে নিয়ে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ হয়েছে পঞ্চগব্যের। সকালে পঞ্চগব্য ছাড়াও তাঁদের দেওয়া হত ‘কড়া’ এবং ‘সঞ্জীবনী বটি’-র মতো আয়ুর্বেদিক ওষুধ। কোনও অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ দেওয়া হয়নি। রাজকোট, বডোদরা, বারাণসী ও মুম্বইয়ের ২০০ জন করে কোভিড রোগীকে বেছে নিয়ে এই পরীক্ষা চলেছে। রোগীরা প্রত্যেকেই লিখিত সম্মতি দিয়েছিলেন। চার জনের শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় তাঁদের বাদ দেওয়া হয়। বাকিরা প্রত্যেকেই চার, দশ বা চোদ্দো দিনে সেরে উঠেছেন বলে কথীরিয়ার দাবি। এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফল একটি জার্নালে প্রকাশের লক্ষ্যে আয়ুষ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে কামধেনু আয়োগ। পঞ্চগব্যে সেরে উঠলে কি কোভিডের টিকা লাগবে? কথীরিয়া বলেছেন, সেটা ইচ্ছের ব্যাপার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement