ফাইল চিত্র।
এক দিকে আসন্ন মণিপুর বিধানসভা নির্বাচন। অন্য দিকে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে থমকে যাওয়া নাগা শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা। এই সন্ধিক্ষণে নাগাল্যান্ডের ওটিংয়ে প্যারা কমান্ডোদের গুলিতে ১৩ গ্রামবাসীর হত্যার ঘটনা ও তার জেরে শুরু হওয়া তীব্র আন্দোলন কি শেষ পর্যন্ত আফস্পা ওঠাতে পারবে?
শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া এনএসসিএন আইএম আজ জানিয়ে দিয়েছে, আফস্পা প্রত্যাহার হলে তবেই রাজনৈতিক আলোচনা সম্ভব। মণিপুরে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার রয়েছে। আফস্পা না উঠলে মণিপুরে বীরেন সিংহ সরকারের ক্ষমতার ফেরা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। নাগাল্যান্ডের পরিষদীয় মন্ত্রী তথা সরকারের মুখপাত্র নেইবা ক্রোনু জানান, এই পরিস্থিতিতে নাগা শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে ৯ ডিসেম্বর কোহিমায় অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা নেডা জোটের চেয়ারম্যান হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিওর নেতৃত্বাধীন শান্তি আলোচনা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক হবে।
তৃণমূল কংগ্রে্সের তরফে আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করে আফস্পার অপব্যবহারের প্রতিবাদে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তাদের বক্তব্য, কাশ্মীর ও উত্তর-পূর্বে আফস্পার অপব্যবহারের ফলে মানবাধিকার ভঙ্গের অজস্র ঘটনা ঘটে চলেছে। বারবার ব্যাহত হয়েছে শান্তি। প্রাণ গিয়েছে নিরীহ মানুষের। সম্মান খুইয়েছেন মহিলারা। মন জেলার সাম্প্রতিক ঘটনা আফস্পার অপপ্রয়োগের নিকৃষ্ট উদাহরণ। কেন্দ্রকে নিশ্চিত করতে হবে আফস্পা যেন মানুষের নিরাপত্তার জন্য কাজে লাগানো হয়, নিরাপরাধদের হত্যার জন্য নয়।
উত্তর-পূর্বে জঙ্গি দমনে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীকে সব ধরনের সুবিধে করে দিতে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফস্পা জারি রয়েছে। মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় থেকে আফস্পা প্রত্যাহার হয়েছে। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে মনোরমার ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনার জেরে মণিপুরে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। কাংলা দুর্গের সামনে মহিলাদের নগ্ন প্রতিবাদের পরে বৃহত্তর ইম্ফলের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রকে আফস্পার আওতার বাইরে আনা হয়। তবে নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অসমে এবং অরুণাচলের তিনটি জেলায় এখনও আফস্পা বহাল।
মণিপুরে মানবাধিকার সংগঠন সিএসসিএইচআর দাবি তুলেছে, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রীদের মতোই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেনকেও আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে সরব হতে হবে। তাদের দাবি, আফস্পার ঢাল সামনে রেখে সবচেয়ে বেশি ভুয়ো সংঘর্ষ মণিপুরে হয়েছে। ১৫২৮টি ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। বীরেন অবশ্য এখনও এ নিয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু তাঁর জোট সরকারের শরিক এনপিপি ইতিমধ্যেই আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে। বীরেনের ক্ষমতায় ফিরতে বড় ভরসা পার্বত্য মণিপুরের ভোটও। কিন্তু সেখানে নাগাদের আধিপত্য, যারা মনের ঘটনার পরে ক্ষিপ্ত।
নাগাল্যান্ডের মতো খ্রিস্টান রাজ্যে বিজেপি শক্তিশালী অস্তিত্ব তৈরি করেছেল পূর্ব নাগাল্যান্ডের উপরে ভিত্তি করেই। সেখানেই এমন ঘটনায় রাজ্য বিজেপির উপরেও আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে যোগ দেওয়ার চাপ বাড়ছে। মন জেলা থেকে আসাম রাইফেলসের ঘাঁটি সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের মুখপাত্র নেইবা ক্রোনু বলেন, এ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সমঝোতায় আসার চেষ্টা হবে। নাগাল্যান্ড মন্ত্রিসভা আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নাগরিক সংগঠনগুলি দাবি তুলেছে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে আফস্পা প্রত্যাহারের প্রস্তাব সর্বসম্মত ভাবে পাশ করানো হোক।