ফাইল চিত্র
২০০৩ সাল। কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও)-এর জঙ্গি আন্দোলন তখন তুঙ্গে। সেই সময়ে কি তাদের সঙ্গে তালিবানের যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল? এখন তালিবান ফের আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করেছে। তার ফলে কি কেএলও নতুন ভাবে উজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারে? গোয়েন্দা সূত্র বলছে, প্রাক্তন কেএলও জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যে সব তথ্য মিলেছে, তাতে এক সময়ে তাঁদের সঙ্গে তালিবানের যোগ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেই সূত্র ধরেই গোয়েন্দাদের আরও বক্তব্য, এখন কেএলও প্রধান জীবন সিংহ যে ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, তাতে নতুন করে যোগাযোগের সন্দেহ তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। পুলিশ ও গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এই সব কারণে কড়া নজর রাখা হয়েছে জীবনের গতিবিধির উপরে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘নতুন করে আমরা কিছু পাইনি। তবে সব কিছুই আমরা নজরে রয়েছে।’’
প্রাক্তন কেএলও-দের একাংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে ভুটানে ‘ফ্লাশ আউট’-এর ঠিক আগে কয়েক জন কেএলও জঙ্গির আফগানিস্তানে যাওয়ার কথাবার্তা এগিয়েছিল। তাঁদের দাবি, তালিবানের কাছেই প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা ছিল তাঁদের। সেই মতো ভিসাও হয়ে গিয়েছিল বলে তাঁদের কারও কারও দাবি। কী ভাবে তা সম্ভব হয়েছিল? ওই প্রাক্তন জঙ্গিদের একাংশের কথা থেকে মনে করা হচ্ছে, অসমে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন আলফা-র মাধ্যমে যোগাযোগ হয়ে থাকতে পারে। আলফা-র সঙ্গে সেই সময়ে কেএলও-র নিবিড় যোগাযোগ ছিল। ওই প্রাক্তন জঙ্গিদের দাবি, জীবন সিংহ তখন বাংলাদেশে। তিনিই শেষ পর্যন্ত এই পরিকল্পনা স্থগিত রেখে ওই জঙ্গিদের এক-দু’জনকে ভুটানে কেএলও গোপন শিবিরের দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। যদিও ভুটানের সেই গোপন শিবির বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কিছু দিনের মধ্যে ‘অপারেশন ফ্লাশ আউট’ হয়। বাকিদের সঙ্গে ওই জঙ্গিরাও ধরা পড়েন। তাঁদের কারও কারও এখন দাবি, ওই ঘটনার আগে বা পরে আর কারও আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার সুযোগ আসেনি।
এই সব তথ্য একত্রিত করে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারের জেলা পুলিশ তো বটেই, উত্তরবঙ্গে গোয়েন্দা বিভাগও এর মধ্যেই সতর্ক হয়ে গিয়েছেন। সম্প্রতি জীবন সিংহের কয়েকটি ভিডিয়ো বার্তা সামনে এসেছে। প্রায় একই সঙ্গে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করেছে তালিবান। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জীবন আপাতত এই শেষ ভিডিয়ো বার্তায় কামতাপুর নামে আলাদা রাষ্ট্রের দাবি করেন। এক সময়ে কামতাপুর রাষ্ট্রের যে মানচিত্র তৈরি করা হয়েছিল, তাতে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অসম, বিহারের অংশ তো ছিল, আরও ছিল বাংলাদেশ ও নেপালের অংশ।
সম্প্রতি তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা বলছেন, দেখা যাচ্ছে, আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা দখলের পরেই জীবন কামতাপুর রাষ্ট্রের দাবি তোলেন। তালিবানের সঙ্গে কেএলও নতুন করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে কি না, এই পরিস্থিতিতে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারী অফিসারদের একটি অংশ মনে করছে, এই ধরনের জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য প্রচুর অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রয়োজন হয়। এই শতকের প্রথম দিকে আন্দোলনের সময়ে কেএলও-কে আলফা কালাশনিকভ রাইফেল জুগিয়েছিল বলেই গোয়েন্দাদের দাবি। এ বারে কি এমন অস্ত্র জোগাড়েই তালিবানের দিকে ঝুঁকবেন জীবন? রাজ্য পুলিশের এক অফিসারের কথায়, ‘‘জীবনের সংগঠন এখনও দুর্বল। তিনি নানা ভাবে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। আমরাও তাঁর গতিবিধির উপরে নজর রাখছি।’’
(সহ-প্রতিবেদন: রাজু সাহা)