ভোটে দাগ কাটতে পারেননি বিজেপির বিদ্রোহীরা। ফাইল ছবি
গুজরাত হোক কিংবা হিমাচল প্রদেশ, দুই রাজ্যেই বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির চিন্তা বাড়িয়েছিলেন বিদ্রোহীরা। টিকিট না পেয়ে দলের সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছিলেন অনেকেই। জনপ্রিয় নেতাদের হারিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল গেরুয়া শিবিরের কপালে। তবে বৃহস্পতিবার ভোটের ফলাফলে দেখা গেল, ‘বিদ্রোহে’ লাভ হয়নি। বরং লোকসানই হয়েছে বেশি।
গুজরাত কিংবা হিমাচলের ভোটের আগে বিজেপি ছেড়ে অন্য দলে চলে গিয়েছিলেন অনেক নেতা। কেউ কংগ্রেসের হাত ধরেছিলেন, কেউ গিয়েছিলেন আম আদমি পার্টিতে। অনেকেই আবার ভোটে লড়েছেন নির্দল প্রার্থী হিসাবে। তবে ভোটের ফলাফলে দাগ কাটতে পারেননি তাঁরা কেউ। এক মাত্র ব্যতিক্রম হিমাচল প্রদেশের নলাগড় কেন্দ্র। বিজেপি থেকে বেরিয়ে নির্দল প্রার্থী হিসাবেও সেখানে জয় ছিনিয়ে নিতে পেরেছেন কেএল ঠাকুর।
বাকি কেন্দ্রগুলিতে কোন বিজেপি-বিদ্রোহী প্রার্থীর ফলাফল কেমন?
গুজরাতে ভোটের মুখে দলের অন্দরে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল বিজেপিকে। ১৯ জন নেতাকে ভোটের আগে সাসপেন্ড করেছিল গেরুয়া শিবির। তাঁদের মধ্যে থেকে ৩ জন কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে লড়েন। ১ জন চলে যান আপে। বাকিরা নির্দল হিসাবে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
গুজরাতে বিজেপি টিকিট না দেওয়ায় কংগ্রেসে গিয়েছিলেন খাতুভাই পাগি। শেহরা কেন্দ্র থেকে তিনি লড়েছেন। কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা গেল ৪৭ হাজার ২৮১ ভোটে বিজেপির কাছে হেরে গিয়েছেন তিনি। বিজেপি থেকে কংগ্রেসে যাওয়া আরও এক প্রার্থী গুঞ্জরিয়া ছত্রসিন শঙ্করভাই, ধ্রাংগধ্রা কেন্দ্র থেকে লড়াই করে হেরে গিয়েছেন বিজেপির প্রার্থীর কাছে। তাঁদের ভোটের ব্যবধান ৩৩ হাজারের বেশি। সাভলি কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে দাঁড়ানো কুলদীপসিন রাহুলজিও পরাজিত। বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ৩৬ হাজার ৯২৬। এ ছাড়া, পারদি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে আপের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন বিজেপির আর এক ‘বিদ্রোহী’ কেতনভাই পটেল। বিপুল ভোটে হারতে হয়েছে তাঁকেও।
বিজেপির টিকিট না পেয়ে গুজরাতে যাঁরা নির্দল হিসাবে ভোটে লড়েছেন, তাঁদের মধ্যে পাদ্রা কেন্দ্রে দীনেশভাই পটেল হেরেছেন বিজেপি এবং আপের কাছে। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৫১ হাজারের কিছু বেশি। বাঘোডিয়ায় নির্দল মধুভাই শ্রীবাস্তব বিপুল ভোটে হেরেছেন। তিনি পেয়েছেন মাত্র ১৪ হাজার ৬৪৫টি ভোট। হরশদভাই বাসব নান্দোদ কেন্দ্রে লড়ে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ভোট। বিজেপি এবং কংগ্রেস প্রার্থীর পরে তাঁর স্থান।
লুণাবাডা কেন্দ্র থেকে বিজেপির ২ জন বিদ্রোহী নেতা নির্দল হিসাবে লড়েছিলেন। তাঁরাও কেউ দাগ কাটতে পারেননি। শাখানভাই মোতিভাই খান্তের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১০ হাজার পেরোয়নি। জেপি পটেল পেয়েছেন ৪২ হাজার ভোট। এ ছাড়া, উমরেঠ কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়ানো রমেশভাই জ়ালা পেয়েছেন ২ হাজার ৪২৩টি ভোট। খাম্বাত কেন্দ্রে লড়া অমরসিন জ়ালা পেয়েছেন ৪ হাজারের কাছাকাছি ভোট।
হিমাচল প্রদেশের ভোটে সার্বিক ভাবে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। গেরুয়া শিবির ছেড়ে বেরিয়ে আসা কেএল ঠাকুর নলাগড় কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়েছিলেন। এক মাত্র তিনিই স্রোতের বিপরীতে দাগ কাটতে পেরেছেন। জিতেছেন ১৩ হাজার ২৬৪ ভোটে।
হিমাচলের ভোটের আগে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে গিয়েছিলেন ‘বিদ্রোহী’ বিজেপি নেত্রী দয়াল পেয়ারী। পছাড় কেন্দ্র থেকে তিনি ৩ হাজার ৮৫৭ ভোটে বিজেপির রিনার কাছে হেরে গিয়েছেন।
এ ছাড়া, বিজেপির টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন কৃপাল সিংহ পরমার। ফতেহপুর কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৮১১টি ভোট। ইন্দোরা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী মনোহর লাল পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৪২টি ভোট। জসবান-পরাগপুর কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী সঞ্জয় প্রসর পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪০৫টি ভোট। এ ছাড়া, হিমাচলের বঞ্জর কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিতেশ্বর সিংহের প্রাপ্ত ভোট প্রায় ১৫ হাজার।