Research and Analysis Wing

চিনের সাহায্যে অধিকৃত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি বানাচ্ছে পাকিস্তান

‘র’-এর রিপোর্ট বলছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ওই ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটির কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকবেন পিএলএ-র তিন অফিসার-সহ ১০ সেনা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৫৬
Share:

ইমরান খান এবং শি চিনফিং— ফাইল চিত্র।

লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) ভারতকে চাপে রাখতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে এ বার ‘অস্ত্র’ করছে চিন। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’ (র)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে চিনের সহায়তায় ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্র-সহ নানা সামরিক পরিকাঠামো বানাচ্ছে পাক সেনা।

Advertisement

কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি, গত মাসে কেন্দ্রের কাছে ‘র’-এর তরফে ওই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের লাসাডন্না ঢোক অঞ্চলে চিনের ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’ (পিএলএ)-র সহায়তায় ‘ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র’ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র বানানো হচ্ছে। বাঘ জেলায় মোতায়েন পাক ফৌজের একটি ব্রিগেডের সদর দফতরের অদূরের ওই ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি বানানোর কাজে ১৩০ জন পাক সেনা এবং জনা চল্লিশেক অসামরিক নির্মাণকর্মী জড়িত রয়েছেন বলেও প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছে।

‘র’-এর রিপোর্ট বলছে, লাসাডন্না ঢোকের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটির কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকবেন পিএলএ-র তিন অফিসার-সহ অন্তত ১০ জন সেনা। অধিকৃত কাশ্মীরের হট্টিয়ান বালা জেলার চকোঠী, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের ঝিলম জেলার চিনারীতেও চিনা সহায়তায় একই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণের কথাও বলা হয়েছে রিপোর্টে। ভারতীয় বায়ুসেনার সম্ভাব্য বিমানহানা ঠেকানোই এর উদ্দেশ্য বলে সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।

Advertisement

লাদাখে চিনা ফৌজের অনুপ্রবেশ ঘিরে সঙ্ঘাতের আবহেই অধিকৃত কাশ্মীর এবং গিলগিট-বালটিস্তানে পাক সেনার তৎপরতার খবর সামনে এসেছিল। নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি)-র কাছে অধিকৃত কাশ্মীর ও গিলগিট-বালটিস্তানে অতিরিক্ত ২০ হাজার পাক সেনা মোতায়েনের সেই খবরের জেরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করা হয়েছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে। ‘র’-এর রিপোর্ট উদ্ধৃত করে জুন মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দ্বিপাক্ষিক সামরিক সমন্বয় বাড়াতে বেজিংয়ে পিএলএ-র সদর দফতরে একজন উচ্চপদস্থ পাক সেনা অফিসারকে নিয়োগ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: লাদাখে চিনের ‘একতরফা আগ্রাসন’-এর সব তথ্য ওয়েবসাইট থেকে মুছল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক

গত ৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের জলসীমায় চিনা যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর নজরে এসেছিল। জিয়াংওয়ে-২ নামে চিনা ফ্রিগটটির অবস্থান গুজরাতের পোরবন্দর উপকূল থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না বলেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর। জানুয়ারিতে ওই এলাকায় যৌথ মহড়াও চালিয়েছিল পাক ও চিনা নৌবাহিনী।

আরও পড়ুন: ভীমা-কোরেগাঁও হিংসায় গ্রেফতার ৮৩ বছরের মিশনারি স্টান স্বামী

ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে গত বছর পাকিস্তানি নৌবাহিনীর হাতে যুদ্ধজাহাজ বিধ্বংসী আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র সিএম-৩০২ তুলে দিয়েছে চিন। সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ২০০৬ সালে ভারতীয় নৌসেনার হাতে ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্র আসার পর থেকে সমুদ্রে পাকিস্তানের উপর ভারতীয় নৌসেনার যে আধিপত্য তৈরি হয়েছিল, তা এ বার অনেকটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘ব্রহ্মসের’ সঙ্গে তুলনীয় ৩০০ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র আদতে চিনা ওয়াইজে-১২-র নতুন সংস্করণ। নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে শব্দের তিন গুণ দ্রুতগতিতে আঘাত হানতে পারে সিএম-৩০২ (সামরিক পরিভাষায় যাকে ‘ম্যাক থ্রি’ বলা হয়)।

কূটনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, ভারতকে চাপে রাখার জন্য চিনের ‘বৃহত্তর কৌশলে’রই একটি অংশ পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে এই সাম্প্রতিক তৎপরতা। গোটা অঞ্চলে চিনের একাধিপত্য মেনে নেওয়া, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) নিয়ে নিজেদের সুবিধাজনক শর্ত ভারতকে মানতে বাধ্য করা এবং বেজিং-বিরোধী মার্কিন অক্ষ থেকে ভারতকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যে ইমরান খানের সরকারকে ব্যবহার করছেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং।

এই পরিস্থিতিতে দু’টি ফ্রন্টে এক সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ভারতীয় সেনা। গত ৩ সেপ্টেম্বর ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’ জেনারেল বিপিন রাওয়ত চিন-পাক সামরিক অক্ষকে প্রতিরোধ করার কথা বলেছেন। চলতি সপ্তাহে বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আর কে এস ভাদৌরিয়াও জানিয়ে দিয়েছেন, যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ভারত প্রস্তুত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement