উদ্ধব ঠাকরে এবং দেবেন্দ্র ফডণবীস। ইদানীং ভারতীয় রাজনীতির চালচিত্রে এই দু’টি নাম সবথেকে বেশি আলোচিত। মহা-নাটকের পরে একজন প্রাক্তন ও একজন সদ্য মুখ্যমন্ত্রী। জানেন কি, এঁদের নেপথ্যের শক্তিদের? আসুন, পরিচয় করি এঁদের স্ত্রীদের সঙ্গে।
রশ্মির সঙ্গে প্রথম আলাপের সময় রাজনীতিতে আসার কোনও ইচ্ছে ছিল না উদ্ধবের। পরে রাজনীতিতে আসার পরে উদ্ধবের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন সহধর্মিণী, রশ্মি।
রাজনীতিক তথা সদ্য নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী রশ্মির নিজস্ব পরিচয় আছে। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। দু’টি সংস্থার ডিরেক্টর রশ্মি আরও তিনটি সংস্থার অংশীদার।
রশ্মি নিজেও ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে। তাঁর বাবা মাধব পতনকর পারিবারিক ব্যবসা চালান। মা, মীনাতাই গৃহবধূ। রশ্মি এবং তাঁর বোনের উপর মায়ের প্রভাব গভীর।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্রের স্ত্রী অমৃতা আবার ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে নন।তাঁর বাবা শরদ রাণাডে চক্ষুরোগবিশেষজ্ঞ। মা, চারুলতা একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। নাগপুরের সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলের পরে অমৃতা স্নাতক হন জিএস কলেজ অব কমার্স অ্যান্ড ইকনমিক্স থেকে। এমবিএ করেন পুণের সিমবায়োসিস ল’ স্কুল থেকে।
একটি বিষয়ে প্রাক্তন ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীদের সাদৃশ্য আছে। দু’জনেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। দু’জনেই লড়াই করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। বিখ্যাত স্বামীর পরিচয়ের বাইরে গড়ে তুলেছেন নিজেদের পরিচয়। আবার দু’জনেই ভীষণ ভাবেই রয়েছেন তাঁদের স্বামীর পাশে।
১৯৮৭ সালে চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে এলআইসি-তে যোগ দেন রশ্মি। সেখানেই রাজ ঠাকরের বোন জয়জয়ন্তীর সূত্রে তাঁর আলাপ উদ্ধবের সঙ্গে। দু’জনে বিয়ে করেন ১৯৮৯ সালে। উদ্ধব-রশ্মির ছেলেদের নাম আদিত্য ও তেজস।
দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে অমৃতার বিয়ে হয় ২০০৫ সালে। সে সময় দেবেন্দ্র ছিলেন নাগপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক। দেবেন্দ্র-অমৃতার একমাত্র মেয়ের নাম দ্বিবিজা।
একজিকিউটিভ ক্যাশিয়ার হিসেবে অমৃতা অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কে যোগ দেন ২০০৩ সালে।পরে তিনি নাগপুরের অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের বিজনেস ব্রাঞ্চের প্রধান হন।
২০১৪ সালে প্রথমবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন দেবেন্দ্র ফডণবীস। তারপরেও ব্যাঙ্কের চাকরি ছাড়েননি অমৃতা। ‘মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী’ পরিচয়কে সর্বস্ব না করে নিজের কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। বর্তমানে তিনি অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের পশ্চিম ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট-কর্পোরেট হেড।
অমৃতা একজন একজন প্রশিক্ষিত ধ্রুপদী সঙ্গীতশিল্পী। প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে অমৃতার প্রথম ছবি প্রকাশ ঝা-র পরিচালনায় ‘জয় গঙ্গাজল’। গোপীনাথ মুণ্ডের বায়োপিকেও তিনি গান গেয়েছেন। তাঁর প্রথম মিউজিক ভিডিয়ো ‘ফির সে’ সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
গান শুনতে ভালবাসেন রশ্মিও।তাঁর অবসরের প্রিয় সঙ্গী উস্তাদ গুলাম আলির গজল।তবে ইচ্ছে থাকলেও ধ্রুপদী সঙ্গীতের তালিম নেওয়া হয়নি তাঁর।
বাইরে দক্ষ ব্যবসায়ী রশ্মি আবার ঘরে সুনিপুণ গৃহকর্ত্রী। ‘মাতুশ্রী’-তে যে কোনও অনুষ্ঠানে তিনিই ভরকেন্দ্র। যে কোনও ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য পারিবারিক মেলবন্ধনের বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
রশ্মির মতো অমৃতাও স্বামীর লড়াইয়ের প্রতি ধাপের সহযোদ্ধা। পাশাপাশি, তিনি একজন সক্রিয় সমাজকর্মী।তিনি মহিলাদের স্বনির্ভরতা ও গ্রামীণ বিকাশ নিয়ে বেশ কিছু কল্যাণমূলক প্রকল্পে যুক্ত।অ্যাসিড-হামলায় আক্রান্তদের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনার বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পেও অমৃতা অগ্রণী।
রশ্মি এবং অমৃতা, দু’জনেই তাঁদের স্বামীদের পরিচয়ের বাইরে নিজস্ব বৃত্ত গড়ে তুলেছেন। হেভিওয়েট রাজনীতিকের স্ত্রী এবং নিজের স্বকীয় পরিচয়, এই দু’টি দিকের মধ্যে সুসামঞ্জস্য রক্ষা করে চলা রশ্মি ঠাকরে এবং অমৃতা ফডণবীস দু’জনেই দেশের আধুনিক প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।