যোগগুরু রামদেব। — ফাইল চিত্র।
সংবাদপত্রে এ বার দ্বিতীয় বার ক্ষমাপত্র ছাপালেন যোগগুরু রামদেব এবং তাঁর সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণ। মঙ্গলবারও তাঁরা একই ক্ষমাপত্র ছাপিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ক্ষমাপত্রের আকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়েন যোগগুরুরা। তার পরই তড়িঘড়ি দ্বিতীয় ক্ষমাপত্র ছাপালেন তাঁরা। প্রথম ক্ষমাপত্রের তুলনায় বুধবার ক্ষমাপত্রের আকার অনেকটাই বড়!
বুধবার পতঞ্জলির তরফে রামদেব এবং বালকৃষ্ণ যে ক্ষমাপত্র ছাপিয়েছেন তা সংবাদপত্রের একটি পাতার এক চতুর্থাংশ। শিরোনামে লেখা, ‘জনগণের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা’। তার পর সেই ক্ষমাপত্রে লেখা হয়েছে, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে চলমান বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ব্যক্তিগত ভাবে এবং আমাদের কোম্পানির তরফ থেকে অবাধ্যতার জন্য নিঃশর্ত ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা একই ধরনের ভুল আর দ্বিতীয় বার করব না। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে চলার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’’
মঙ্গলবারও পতঞ্জলির তরফে একটি ক্ষমাপত্র প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে তার আকার এতটাই ছোট ছিল, যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় রামদেবদের। ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা’ বিজ্ঞাপন মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি হিমা কোহলির পর্যবেক্ষণ, ‘‘ক্ষমা চেয়ে বিজ্ঞাপনটি কি সঠিক ভাবে ছাপানো হয়েছিল? নিজেদের বিজ্ঞাপন যত বড় করে ছাপাতেন, তত বড় করেই কি ক্ষমাপত্রও ছাপানো হয়েছে?’’ মকুল রোহতগি রামদেবদের হয়ে সওয়াল করার সময় সুপ্রিম কোর্টে জানান, দেশের ৬৭টি সংবাদপত্রে ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। তা নিয়েও পাল্টা ভর্ৎসনা করেছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি হিমা কোহলি স্পষ্ট জানান, বিজ্ঞাপনের জন্য রামদেবের সংস্থা কত লক্ষ টাকা খরচ করেছে, তা নিয়ে ভাবিত নয় কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টে শুনানির কয়েক ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার সকালে দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে পতঞ্জলির বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ক্ষমা চেয়েছে সংস্থা। লিখেছে, ‘‘উপদেষ্টার পরামর্শের পরেও বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং সাংবাদিক বৈঠক করে আমরা যে ভুল করেছি, তার জন্য ক্ষমা চাইছি। এই ভুল আর হবে না। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’ কেন মঙ্গলবার সকালে এই ক্ষমাপত্র ছাপানো হল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, কেন মঙ্গলবার ক্ষমা চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে পতঞ্জলি, যেখানে তাদের আগেই তা করার কথা ছিল।
২০২০ সালের ২৩ জুন প্রথম বার করোনিল কিট বাজারে এনেছিল পতঞ্জলি। ‘করোনিল’ এবং ‘শ্বাসারি বটি’ নামে দু’ধরনের ট্যাবলেট এবং ‘অণু তৈল’ নামের ২০ মিলিলিটারের একটি তেলের শিশি নিয়ে তৈরি ওই কিটের দাম রাখা হয়েছিল ৫৪৫ টাকা। চাইলে আলাদা ভাবে ট্যাবলেট এবং তেল কেনা যাবে বলেও জানানো হয়েছিল। তার পর ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২৩ লক্ষ ৫৪ হাজার করোনিল কিট বিক্রি হয়েছে বলে সংস্থার তরফে জানানো হয়।
এই বিজ্ঞাপন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে রামদেবের সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল আইএমএ। আইএমএ-র অভিযোগ ছিল, পতঞ্জলির বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা এবং চিকিৎসককে অসম্মান করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগও আনা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, কোভিড প্রতিরোধী না-হওয়া সত্ত্বেও শুধু করোনিল কিট বিক্রি করেই আড়াইশো কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছিল রামদেবের পতঞ্জলি। আর তার জন্য ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা’ বিজ্ঞাপনী প্রচার চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল আইএমএ-র।