মিষ্টিমুখ: রাজ্যসভা নির্বাচনে জয়ের পরে দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে পীযূষ গয়াল। শনিবার মুম্বইয়ে। ছবি পিটিআই
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে যখন বিরোধী শিবির এককাট্টা হওয়ার চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময়ই মহারাষ্ট্রে রাজ্যসভা নির্বাচনে শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোটকে ধাক্কা দিল বিজেপি। তিন দলের শাসক জোট ‘মহা বিকাশ আঘাড়ী’ সরকার তাদের সমর্থনকারী সব বিধায়কের ভোট জোগাড় করতে না পারায় রাজ্যসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রের ছ’টি আসনের মধ্যে তিনটিই জিতে নিল বিজেপি। কংগ্রেস, এনসিপি একটি করে আসন জিতেছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের দল শিবসেনা দু’জন প্রার্থীকে মাঠে নামালেও একটি আসন জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হল তাদের।
একই ভাবে কর্নাটকেও কংগ্রেস এবং জেডি-এসের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে রাজ্যের চারটির মধ্যে তিনটি আসনই বিজেপি জিতে নিয়েছে। কংগ্রেস একটি আসন জিতেছে। কিন্তু কংগ্রেস, এইচ ডে দেবগৌড়ার দল জেডি-এসের বোঝাপড়া হলে তারা একটি আসন বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিতে পারত। কিন্তু বোঝাপড়ার অভাবে কংগ্রেসের দ্বিতীয় প্রার্থী ও জেডি-এসের প্রার্থী, দু’জনকেই হার মানতে হয়েছে।
মহারাষ্ট্র, কর্নাটকে রাজ্যসভা নির্বাচনের পরে তাই রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যসভা নির্বাচনেই যেখানে বিরোধী শিবির এককাট্টা হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে পারছে না, সেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কী ভাবে তারা লড়বে?
বিজেপিকে সরিয়ে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোট তৈরিতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন শরদ পওয়ার। এনসিপি সুপ্রিমো পওয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও বিরোধী জোটকে এককাট্টা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পওয়ার আজ মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীসের প্রশংসা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, বিজেপির দু’টি আসনে জয়, কংগ্রেস, এনসিপি, শিবসেনার একটি আসনে জয় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু ষষ্ঠ আসনেও বিজেপির প্রার্থীকে জিতিয়ে এনে ফডণবীস অলৌকিক কাণ্ড ঘটিয়েছেন। শাসক জোটকে সমর্থনকারী নির্দল বিধায়কদের সমর্থন জিতে নিয়েছেন। পওয়ারের অবশ্য দাবি, এতে শাসক জোটে ধাক্কা লাগবে না। উদ্ধব ঠাকরের সরকারেরও সমস্যা হবে না। উল্টো দিকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপির ফডণবীসের দাবি, শাসক জোটের হাল কতখানি খারাপ, তা প্রমাণিত। বিজেপির তৃতীয় প্রার্থী ধনঞ্জয় মহাডিকও শিবসেনার প্রথম প্রার্থী, সঞ্জয় রাউতের থেকে বেশি ভোট পেয়েছেন।
মহারাষ্ট্র থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল ও অনিল বোন্দে জিতেছেন। এনসিপি-র প্রফুল্ল পটেল, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, কংগ্রেসের ইমরান প্রতাপগঢ়ি জিতেছেন। ষষ্ঠ আসনে শিবসেনার সঞ্জয় পওয়ারকে হারিয়ে বিজেপির মহাডিক রাজ্যসভায় যাচ্ছেন। শরদ পওয়ারের দাবি, ‘‘আমি ফলাফল দেখে অবাক হইনি। শাসক জোটের প্রার্থীরা বিধায়কদের সংখ্যা অনুযায়ীই ভোট পেয়েছেন। বিজেপি নেতা ফডণবীস নির্দল প্রার্থী ও ছোট দলের ভোট ছিনিয়ে নিয়েছেন, তা সে যে উপায়েই হোক। আমরা ভোট কম থাকা সত্ত্বেও চতুর্থ আসন জয়ের চেষ্টা করেছিলাম। উদ্ধব ঠাকরে ঝুঁকি নিয়েছিলেন। রাজনীতিতে ঝুঁকি নিতেই হয়।’’
পওয়ার মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে দাঁড়ালেও কংগ্রেস, এনসিপি নেতাদের মত, উদ্ধব ঠাকরে অনেক দেরিতে রাজ্যসভার নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় হন। নিজের দলের প্রার্থীকে জেতাতেই তিনি প্রথমে সক্রিয় হননি। পরে পওয়ারের ঠেলায় শাসক জোটের বিধায়কদের বৈঠক ডাকা হয়।
বিজেপি বহু দিন ধরেই মহারাষ্ট্রের শাসক জোটে সমস্যা তৈরির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ। যদিও পওয়ারের দাবি, সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বিজেপি নেতারা মনে করছেন, বৃহম্মুম্বই পুরসভার নির্বাচনের আগে বিজেপি রাজ্যসভায় ভাল ফল করে শাসক জোটকে ধাক্কা দিল। অন্য দিকে কর্নাটকে কংগ্রেস-জেডিএসের বোঝাপড়ার সুযোগ নিয়ে বিজেপি তিনটি আসন জেতায় নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। একমাত্র রাজস্থানে বিজেপির বিধায়ক শোভারাণী কুশওয়াহা কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ায় তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।