ক্ষমা চেয়েও রাজীবদের তির সিবিআইকে 

সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও ‘নাতিদীর্ঘ’ হলফনামায় আইনি রীতি মেনে লেখা হয়েছে যে, যদি ভুলবশত কোনও ভাবে তাঁদের দ্বারা আদালত অবমাননা হয়ে থাকে, তা হলে তিন জনেই নিঃশর্ত ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৬
Share:

রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।

সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিলেন রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের তিন শীর্ষ কর্তা। মুখ্যসচিব মলয় দে, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার এ দিন ওই হলফনামা জমা দেন। মঙ্গলবার তা খতিয়ে দেখে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর বেঞ্চ সিদ্ধান্ত নেবে, বুধবার শুনানির দিন ওই তিন জনকে সশরীরে হাজির হতে হবে কি না।

Advertisement

সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও ‘নাতিদীর্ঘ’ হলফনামায় আইনি রীতি মেনে লেখা হয়েছে যে, যদি ভুলবশত কোনও ভাবে তাঁদের দ্বারা আদালত অবমাননা হয়ে থাকে, তা হলে তিন জনেই নিঃশর্ত ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। সরকারি সূত্রের খবর, পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা আত্মপক্ষ সমর্থনে অবশ্য আগের অবস্থানেই অনড়। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা তদন্তে বাধা দেননি। বেআইনি অর্থলগ্নি কেলেঙ্কারির তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেননি। মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নামঞ্চেও বসেননি।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুরু হওয়া সারদা-রোজ ভ্যালির তদন্তে রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসন বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে আদালত অবমাননার মামলা করেছিল সিবিআই। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট রাজীব কুমারকে সিবিআইয়ের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিলেও, অবমাননার প্রশ্নে কোনও রায় দিতে চায়নি। তার বদলে মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারের জবাবদিহি চেয়ে নোটিস দেওয়া হয়। হলফনামা তৈরি করতে শনিবারই পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার ও ডিজি বীরেন্দ্র দিল্লি এসেছিলেন। আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকের পর রবিবার তাঁরা কলকাতায় ফিরে যান।

Advertisement

হলফনামায় তাঁরা কী বলেছেন? সরকারি সূত্রের দাবি, তাঁরা শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চ ২০১৮-এর ১৬ জুলাই নির্দেশ দিয়েছিল, সারদা-রোজভ্যালি কেলেঙ্কারির তদন্তে রাজ্যের তরফে কোনও বাধা এলে বা সহযোগিতা না পেলে সিবিআইকে কলকাতা হাইকোর্টে যেতে হবে। সিবিআই তা কখনও করেনি। রাজ্য সরকার তদন্তে বাধাও দেয়নি। বস্তুত সিবিআই এর আগে কখনও রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগও তোলেনি। তাঁর নাম এফআইআর-এও নেই। তাঁকে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬০ ধারা অনুযায়ী সাক্ষী হিসেবে ডাকা হয়েছিল। তিনি না গেলে সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারত। কিন্তু সিবিআই করেনি। রাজীব সিট-এর প্রধান ছিলেন। তথ্যপ্রমাণ যদি কিছু নষ্ট হয়েও থাকে, সেটা সিট-এর তদন্তকারী অফিসারেরা বলতে পারবেন। রাজীবের তা জানা নেই বলে হলফনামায় দাবি।

হলফনামায় রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের আরও যুক্তি, সিপি তথা অন্য পুলিশ কর্তাদের উদ্দেশে সিবিআইয়ের নোটিসে কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও সিবিআই রাজীব কুমারের বাড়িতে হানা দেয়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই জোর করে সিপি-র বাসভবনে ঢোকার চেষ্টা হয়। সিবিআই অফিসারদের হেনস্থায় নিজেদের দায় অস্বীকার করেছেন তিন কর্তা। তাঁরা এও দাবি করেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নামঞ্চে তাঁরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। ধর্নায় যোগ দেননি।

সূত্রের দাবি, এদিন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা হলফনামায় জানিয়েছেন, ২০১৭-র ২৩ অক্টোবর রাজীব কুমারকে সাক্ষী হিসেবে ডাকার পর এক বছরের ব্যবধানে ফের ২০১৮-র ৮ ডিসেম্বর নোটিস পাঠায় সিবিআই। রাজীব নিজেই সিবিআইকে তাঁর দফতরে ডেকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সিবিআই চাইলে কলকাতারই অন্য কোথাও এসআইটি-র সব সদস্যদের একদিন ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ সেরে ফেলতে পারে। সিবিআই তার কোনও জবাবই দেয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement