Karimpur Blood Test

ঘণ্টাখানেকের মধ্যে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট, কারবারে রাশ কবে?

স্থানীয় বাসিন্দদের একাংশের অভিযোগ, পাড়ায় পাড়ায় রক্ত সংগ্রহের জন্য অনেকে ঘুরে বেড়ান। তাঁরা রক্ত নেওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই রিপোর্ট দিয়ে দিচ্ছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৯
Share:

Sourced by the ABP

অধিকাংশ কেন্দ্রে ল্যাব টেকনিশিয়ান ও প্যাথলজিস্ট নেই। তার পরেও রক্ত পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। কোথাও আবার তা ঘণ্টা খানেকের মধ্যে! অনেক চিকিৎসকই আবার সেই রিপোর্টকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এরই মাঝে পড়ে হাজার হাজার টাকা গচ্চা যাচ্ছে রোগী ও রোগীর পরিবারের। তাই করিমপুরে রমরমিয়ে চলা রক্ত পরীক্ষার কারবারে রাশ টানতে প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দদের একাংশের অভিযোগ, পাড়ায় পাড়ায় রক্ত সংগ্রহের জন্য অনেকে ঘুরে বেড়ান। তাঁরা রক্ত নেওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই রিপোর্ট দিয়ে দিচ্ছেন। তা কী করে সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। তাঁদের আরও অভিযোগ, একাধিক রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনও প্যাথলজিস্টের আগাম সই করে রাখা কাগজের উপরে রক্তের রিপোর্ট লিখে রোগীকে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষা পিছু নয়শো থেকে হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। অথচ বাড়তি অর্থ খরচ করে তৈরি সেই রিপোর্ট অনেক সময়েই কাজে আসছে না। চিকিৎসাতেও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

করিমপুর এলাকায় বেশ কিছু দিন ধরে জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত এক মাসে ৩৫০ জন জ্বর নিয়ে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দশ জনের ডেঙ্গি ধরা পড়ে। হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা অধিকাংশ রোগী ও তাঁর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, জ্বর হওয়ায় বাইরে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিলেন। সেখানে ডেঙ্গি হয়েছে বলা হয়েছিল। অথচ হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করানোর পর রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসে।

Advertisement

করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরেছেন এমন কয়েক জন রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁদের এক জন সেনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা গণেশ মণ্ডল বলছেন, ‘‘দিন দশেক আগে আমার জ্বর হয়েছিল। করিমপুর বাজারের এক কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষা করাই। আমাকে ওরা ডেঙ্গি হয়েছে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে রক্ত পরীক্ষার পর জানতে পারি ডেঙ্গি হয়নি।’’ সুন্দলপুর গ্রামের স্মৃতিকণা বিশ্বাস, বাঁশবেড়িয়ার হোসেন শেখের অভিযোগ, ‘‘বাইরে রক্ত পরীক্ষার জানতে পারি ডেঙ্গি হয়েছে কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করার পর আমরা জানতে পারলাম যে ডেঙ্গি হয়নি।’’

এ ব্যাপারে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার মনীষা মণ্ডল বলেন, ‘‘হাসপাতালের বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে অনেকে ডেঙ্গি হয়েছে বলে এলাকাতে প্রচার করে ফেলছেন। তাতে আশপাশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, করিমপুরের বেশির ভাগ রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনও টেকনিশিয়ান কিংবা প্যাথলজিস্ট নেই। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের চিকিৎসক সনৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘একটি প্যাথলজি কেন্দ্রে অবশ্যই এক জন ল্যাব টেকনিশিয়ান ও প্যাথলোজিস্ট থাকতে হবে। তাঁদের অনুপস্থিতিতে কোনও ভাবেই রক্তের নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা রিপোর্ট দেওয়া বৈধ নয়।’’ এমন অবস্থায় করিমপুরের রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির বৈধ ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব‌্লিশমেন্ট লাইসেন্স’ আছে কি না তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখার আর্জি উঠছে। এই লাইসেন্স পেতে গেলে দূষণ, অগ্নিরোধক শংসাপত্র ও ‘ট্রেড লাইসেন্স’ দরকার, সেই সঙ্গে ল্যাব টেকনিশিয়ান ও প্যাথলজিস্ট তো আছেই।

করিমপুর বাজারের একটি রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রের মালিক বৃন্দাবন পোদ্দার বলেন, ‘‘কোথায় কী হচ্ছে আমার জানা নেই। তবে আমি কলকাতার একটি নামী সংস্থার ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে করিমপুর এলাকায় রক্ত সংগ্রহ করে গুরুত্ব সহকারে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্যাকিং করে কৃষ্ণনগরের সংস্থার শাখায় পাঠিয়ে দিই। রিপোর্ট সেখান থেকে আসে।’’

করিমপুর বাজারের আর এক রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রের মালিক বিভাস পাল বলেন, ‘‘ল্যাব টেকনিশিয়ান ও প্যাথলজিস্ট রাখা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সেই সঙ্গে রক্ত সংগ্রহের সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক জিনিস নিরাপদে সংরক্ষিত করতে আরও হাজার তিনেক টাকা খরচ হয়। সেই তুলনায় করিমপুরে রোগীর সংখ্যা কম। যে কারণে আমরা রক্ত সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে দিই। সেখান থেকে রিপোর্ট এলেই রোগীকে দিই।’’

অধিকাংশ রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্র যদি ল্যাব টেকনিশিয়ান ও প্যাথলজিস্ট ছাড়াই চলে তা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না-কেন সেই প্রশ্নের উত্তরে করিমপুর হাসপাতালের সুপার মনীষা মণ্ডল বলেন, ‘‘এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে।’’

অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বাপ্পা ঢালি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে নজরদারি চালানো হয়। খুব শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement