সেদিন তাঁরা ছিলেন পাশাপাশি—সচিন পাইলট ও অশোক গহলৌত। ফাইল চিত্র।
জয়পুরে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে ১০২ জন বিধায়ক হাজির হয়ে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বলে দাবি করল কংগ্রেস। যদিও সোমবার দুপুরে ওই বৈঠক চলাকালীনই গুরুগ্রাম থেকে ‘বিদ্রোহী’ উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলট বললেন, ‘অশোক গহলৌতের দাবি ভুল। আমার পাশে ২৫ জন বিধায়ক বসে রয়েছেন। আমরা কেউই কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে যোগ দিতে জয়পুরে যাইনি।’’ বিধায়কদের একজোট রাখতে ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু হয়েছে রাজস্থান কংগ্রেসের তরফে। তাঁদের আজ বিকেলে বাসে করে জয়পুরের একটি হোটেলে পাঠানো হয়েছে। কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে আস্থা প্রস্তাব পাশা করানো পর্যন্ত তাঁদের সেখানেই রাখা হবে।
এদিন গহলৌতের বাসভবনে আয়োজিত বৈঠকে হাজির হওয়ার জন্য কংগ্রেস বিধায়কদের উদ্দেশে হুইপ জারি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গরহাজিরদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও বেশ কয়েকজন বিধায়ক যে এদিন জয়পুরে ছিলেন না, গহলৌত শিবিরের দাবি থেকেই সে হিসেব স্পষ্ট। তবে কংগ্রেসের পাশাপাশি কয়েকজন নির্দল বিধায়কও হাজির ছিলেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ১০০ পেরনোয় আপাতত গহলৌত কিছুটা ‘অ্যাডভান্টেজে’ বলে মনে করছে রাজনীতির কারবারিদের অনেকেই। পাশাপাশি, এটাও অনেকটা স্পষ্ট, সচিন শিবিরের কাছে এখনও সরকার ফেলার মতো প্রয়োজনীয় ‘সংখ্যা’ নেই। সচিন অবশ্য এদিন বিকেলে বলেছেন, ‘‘গহলৌতের সঙ্গে এখন ৮৪ জনের বেশি বিধায়ক নেই। বাকিরা আমার পাশে রয়েছেন।’’ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘‘প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে রাজ্যপালের কাছে প্রমাণ পেশ করুন।’’
পরিষদীয় দলের বৈঠকের পরে বাসে চড়ে হোটেলে যাওয়ার সময় গহলৌত শিবিরের বিধায়কেরা আঙুল তুলে ‘ভিকট্রি সাইন’ দেখান। তাঁদের দাবি, সরকার পুরো মেয়াদই টিকবে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বিধায়কদের ‘রিসর্ট-বন্দি’ করলেও আয়কর বিভাগ বা ইডি’র ‘হানাদারি’র সম্ভাবনার কথাও মাথায় রাখছে গহলৌত শিবির। বস্তুত, এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় পরিষদীয় দলের বৈঠক শুরুর কথা থাকলেও আয়কর হানার জেরেই তা কয়েক ঘণ্টা পিছিয়ে যায় বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। কারণ, প্রদেশ কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাজীব অরোরা এবং গহলৌত ঘনিষ্ঠ ধর্মেন্দ্র রাঠৌর জয়পুরের কয়েকটি ঠিকানায় বিধায়কদের রেখেছিলেন। তার মধ্যে একটি হোটেলে এদিন সকালে আয়কর দফতর অভিযান চালায়।
আরও পড়ুন: সনিয়া-রাহুল আলোচনায় রাজি, সচিনকে বার্তা সুরজেওয়ালার
এই পরিস্থিতিতে সচিন পাইলট-সহ বিদ্রোহী বিধায়কদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টাও চালাচ্ছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। জয়পুরে হাজির সনিয়া গাঁধীর ‘দূত’ রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা এদিন সকালেই কংগ্রেস সভানেত্রী এবং রাহুলের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য সচিনকে বার্তা দিয়েছেন। যদিও দিনভর দিল্লিতে থাকলেও সচিনের সঙ্গে সনিয়া বা রাহুলের কোনও কথা হয়নি বলে তাঁর শিবিরের খবর। সোমবার সচিন এবং তাঁর অনুগামী বিধায়কদের অনুপস্থিতিতেই কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে রাজস্থানে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য বিজেপি এবং ‘দলবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত’ বিধায়কদের বিরুদ্ধে নিন্দাপ্রস্তাব গৃহীত হয়। এ বিষয়টি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সচিন শিবির।
দিল্লিতে সচিনের সঙ্গে রাহুল ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা রাজীব সাতভের আলোচনা হয়েছে বলে কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে। ওই সূত্রের খবর, সচিন এদিন সমঝোতার জন্য তিনটি শর্ত দিয়েছেন— অর্থ এবং স্বরাষ্ট্র দফতর তাঁর শিবিরকে দিতে হবে। তাঁর অনুগামী চার বিধায়ককে মন্ত্রী করতে হবে এবং উপমুখ্যমন্ত্রী পদের পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদেও তাঁকে বহাল রাখতে হবে। কিন্তু দল বাঁচাতে সক্রিয় হলেও কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সচিনের প্রস্তাব মানতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, পরিষদীয় পাটিগণিত বলছে, এখনও মরুরাজ্যের বেশিরভাগ কংগ্রেস বিধায়কও গহলৌতের পাশে রয়েছেন। ফলে তাঁকে চটাতে গেলে আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা।
রাজস্থান বিধানসভার ২০০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা ১০৭। এছাড়া সিপিএমের ২, ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টির ২, আরএলডি’র ১ এবং ১২ জন নির্দলের সমর্থন ছিল আশোক গহলৌত সরকারের দিকে। সম্প্রতি, তাঁদের মধ্যে তিন নির্দল বিধায়ক প্রকাশ্যেই বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন। কংগ্রেস ও নির্দল মিলিয়ে সচিনের দিকে অন্তত ১৬ জনের সমর্থন রয়েছে বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর। কংগ্রেসের দাবি, মোট ১০৯ জন বিধায়কের সমর্থনের চিঠি রয়েছে গহলৌতের কাছে। তবে সেই তালিকায় বেশ কয়েকজন সচিন ঘনিষ্ট রয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিজেপির পাল্টা চাপ? গহলৌতের ২ ঘনিষ্ঠের বাড়িতে আয়কর হানা
রবিবার রাতে দিল্লিতে সচিনের সঙ্গে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বৈঠক হয়েছিল বলে খবর মিললেও সচিন এদিন বলেছেন, ‘‘আমি বিজেপিতে যাচ্ছি না।’’ চাপের মধ্যেও সচিনের এই বার্তা সামান্য হলেও ভরসা দিচ্ছে কংগ্রেসকে। এদিন দুপুরে জয়পুরের প্রদেশ কংগ্রেস দফতর থেকে সভাপতি সচিনের ছবি দেওয়া যাবতীয় পোস্টার-ফেস্টুন সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর ফের সচিনের কয়েকটি ছবি ঝোলানো হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা ‘ইঙ্গিতবাহী’ বলে মনে করছেন অনেকেই। যদিও পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার বিষয়ে বার্তা দিয়েছেন রাজস্থানের বিজেপি সভাপতি সতীশ পুনিয়া। সোমবার বিকেলে তিনি বলেন, ‘‘অনেক পথ খোলা রয়েছে। আমরা সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছি।’’