সোমবার ধানবাদ ডিভিশনের নিচিতপুর স্টেশনের কাছে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে রেল এবং পুলিশকর্তারা। —নিজস্ব চিত্র।
ধানবাদ রেল ডিভিশনে হাইভোল্টেজ ওভারহেড তারে বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে ছ’জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় ঠিকাদারের গাফিলতির অভিযোগ উঠল। পোল বসানোর কাজের জন্য রেলের ‘নির্দিষ্ট নিয়ম মানা হয়নি’ বলে সোমবার মন্তব্য করলেন ওই ডিভিশনের ডিআরএম কমল কিশোরকিশোর সিন্হা। যদিও গোটা বিষয়টি তদন্তের পর স্পষ্ট হবে বলে মত তাঁর। সেই সঙ্গে এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সোমবার ধানবাদ ডিভিশনের গোমোর কাছে নিচিতপুর স্টেশনের অদূরে হাওড়া-নয়াদিল্লি রেল রুটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ছ’জন শ্রমিকের। ধানবাদ এবং গোমোর মধ্যে নিচিতপুর হল্টের কাছে ২৫ হাজার ভোল্টেজের ওভারহেজ তারের সংস্পর্শে এসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তাঁরা। ঝলসে গিয়েছেন আরও কয়েক জন।
রেল সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার সময় ধানবাদ বিভাগের প্রধানখণ্ডা থেকে বান্ধুয়া পর্যন্ত প্রায় ২০০ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বাড়ানোর হচ্ছিল। নিচিতপুর হল্টের রেলগেটের কাছে ঠিকাদার দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর কাজ চলার সময় দুর্ঘটনা হয়। ২৫ হাজার ভোল্টেজে হাইটেনশন ওভারহেড তারের দিকে বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়ে। তা সামলানোর চেষ্টার করার সময় খুঁটিটি হাইটেনশন তারে ছুঁয়ে গেলেই বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই ছ’জনের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পরেই ঠিকাদারের খোঁজ মিলছে না বলে পুলিশ সূত্রে খবর। অন্য দিকে, ওই ঠিকাদার প্রয়োজনীয় নিয়ম মানেননি বলে দাবি ধানবাদ ডিভিশনের ডিআরএম কমলকিশোর। তাঁর কথায়, ‘‘এ ধরনের কাজে সাধারণত পোল বসানোর জন্য প্রথমে মাপমতো গর্ত করে নিয়ে ওই লাইনে পাওয়ার ব্লক (বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন) করে দেওয়া হয়। এর পর পোল বসিয়ে ঢালাই করে আবার বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়, যাতে ট্রেন চলাচল করে। ঢালাইয়ের দু’তিন দিন পর পোলে তার লাগানোর কাজ হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পাওয়ার ব্লক না করেই কাজ হয়েছে, যা নিয়মবিরুদ্ধ। ফলে এখানে নিয়ম-বহির্ভূত কাজ হয়েছে। তবে এর তদন্ত করার পর বিষয়টি স্পষ্ট হবে।’’ এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলে মনে করেন ডিআরএম। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ছোট পোল (খুঁটি) লাগানোর কথা ছিল। তবে এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। ঠিকাদার বড় পোল ব্যবহার করেছেন। যদিও এটি তদন্তের বিষয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, খুঁটি বসানোর জন্য এলাকায় মোট ২২ জন শ্রমিক আনা হয়েছিল। তাঁদের ধানবাদের ভুলিতে থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত লাতেহারের সঞ্জয় ভুঁইয়া, প্রয়াগরাজের সুরেশ মিস্ত্রি, পলামুর গোবিন্দ সিংহ এবং নামদেব সিংহকে শনাক্ত করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।