জয়পুর-মুম্বই এক্সপ্রেসে গুলির দাগ (বাঁ দিকে)। চার জনকে গুলি করে হত্যায় অভিযুক্ত আরপিএফ কর্মী চেতন সিংহ। ছবি: টুইটার।
ট্রেনে টহল দেওয়ার সময় স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে চার জনকে হত্যা করে সংবাদ শিরোনামে এসেছেন আরপিএফ কর্মী চেতন সিংহ। কেন তিনি এই কাজ করলেন, তা নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আরপিএফের ইনস্পেক্টর জেনারেল (পশ্চিম রেল) প্রবীণ সিন্হা সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, অল্পতেই মাথা গরম করে ফেলতেন ওই আরপিএফ কর্মী। কোনও ঝগড়া কিংবা বিবাদ ছাড়াই চেতন চার জনকে গুলি করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রবীণ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “অল্পতেই মাথা গরম করে ফেলতেন ওই আরপিএফ কর্মী। কোনও ঝগড়া, অশান্তি ছাড়াই সামনে যাঁকে দেখতে পেয়েছেন, তাঁকেই গুলি করে মেরেছেন চেতন।” আরপিএফের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, চেতনের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের হাথরসে।
সোমবার ভোর ৫টা ২৩ মিনিটে রাজস্থানের জয়পুর থেকে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ের উদ্দেশে যাওয়া জয়পুর এক্সপ্রেসে টহল দেওয়ার সময় নিজের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েই চলন্ত ট্রেনে চার যাত্রীকে হত্যা করেন আরপিএফ কর্মী চেতন। হত চার জনের মধ্যে রেল পুলিশের এক সাব-ইনস্পেক্টর এবং ট্রেনটির প্যান্ট্রি কারের এক কর্মীও রয়েছেন। রেলের তরফে জানা গিয়েছে, সোমবার ভোর ৫টা ২৩ মিনিটে যখন ট্রেনটি পালঘর স্টেশন দিয়ে যাচ্ছিল, সে সময় হঠাৎই নিজের স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন ওই পুলিশকর্মী।
সংবাদ সংস্থা এএনআই পশ্চিম রেলকে উদ্ধৃত করে জানায়, জয়পুর এক্সপ্রেসের বি ফাইভ কোচে যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন অভিযুক্ত পুলিশকর্মী। গুলি চালিয়ে চার জনকে হত্যা করার পরেই পালঘরের পরের স্টেশন দাহিসারে ট্রেনের চেন টেনে এবং ঝাঁপ দিয়ে নামার চেষ্টা করেন তিনি। তার আগেই অবশ্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়।
কী কারণে ওই আরপিএফ কর্মী এমন কাণ্ড ঘটালেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে এক জন ওই আরপিএফ আধিকারিকের পূর্বপরিচিত হলেও, কারও সঙ্গেই বিবাদ ছিল না তাঁর। পুলিশ সূত্রে অবশ্য জানা যায়, মানসিক ভাবে সুস্থ ছিলেন না অভিযুক্ত ব্যক্তি। বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি চাইছিলেন। ঘটনার আগের দিন তিনি নাকি বলেছিলেন, তাঁর অসহিষ্ণু লাগছে। তখন তাঁকে বিশ্রাম নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। পরে নাকি তিনি জানিয়েছিলেন, একদম সুস্থ রয়েছেন।
মৃত পুলিশকর্মী, টিকারাম মীনার বাড়ি রাজস্থানে। ২০২৫ সালে তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল। রেলের তরফে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে, আরপিএফের উচ্চ পদে কাজ করা ওই আধিকারিককে ২৫ লক্ষ টাকা এবং ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এই ঘটনায় নিহত অন্য তিন যাত্রীকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।