সংসদে মোদীকে বিদ্রুপ, আজ রাহুল বিদর্ভে

মাস দুই ছুটি কাটিয়ে ফেরার পর নিজের রাজনীতির ধরনধারণই বদলে ফেলেছেন তিনি। আম আদমির সঙ্গে মিশে তাঁদের স্বার্থে সরব হওয়া ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চাঁচাছোলা আক্রমণ— নিরন্তর দু’টি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেসের রাজনৈতিক লড়াইয়ের মুখ হয়ে উঠছেন দলের শীর্ষপদে মায়ের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে মেলে ধরার লক্ষ্যে। যে কারণে, গত কাল পঞ্জাব ঘুরে এসেই আজ তিনি সংসদে বিঁধেছেন মোদীকে। কাল শুরু করছেন পদযাত্রা। কৃষক আত্মহত্যার জন্য সব চেয়ে কুখ্যাত বিদর্ভ থেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৬
Share:

মাস দুই ছুটি কাটিয়ে ফেরার পর নিজের রাজনীতির ধরনধারণই বদলে ফেলেছেন তিনি। আম আদমির সঙ্গে মিশে তাঁদের স্বার্থে সরব হওয়া ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চাঁচাছোলা আক্রমণ— নিরন্তর দু’টি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেসের রাজনৈতিক লড়াইয়ের মুখ হয়ে উঠছেন দলের শীর্ষপদে মায়ের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে মেলে ধরার লক্ষ্যে। যে কারণে, গত কাল পঞ্জাব ঘুরে এসেই আজ তিনি সংসদে বিঁধেছেন মোদীকে। কাল শুরু করছেন পদযাত্রা। কৃষক আত্মহত্যার জন্য সব চেয়ে কুখ্যাত বিদর্ভ থেকে।

Advertisement

ট্রেনের সাধারণ কামরায় চেপে কাল পঞ্জাবে গিয়েছিলেন রাহুল। সেখানে বাজারে গিয়ে গমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে আজ সকালে সটান সংসদে চলে আসেন। সেখানে কৃষকদের দুর্দশার প্রশ্নে মোদীর উদ্দেশে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এখন হিন্দুস্থান সফরে এসেছেন! কিছু দিন এখানে থাকবেন। আমি বলি কি, ফাঁক পেলে এক বার নিজেই পঞ্জাবে ঘুরেআসুন। কৃষকদের কষ্ট কতটা, নিজেই বুঝতে পারবেন!’’

চলতি বছরে ইতিমধ্যেই তিন বার বিদেশ সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ক’দিন বাদেই যাবেন চিনে। এর পরে যাওয়ার কথা রাশিয়ায়। প্রধানমন্ত্রীর এত ঘন ঘন বিদেশযাত্রা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা টিপ্পনি উড়ে আসছে ইদানীং। সেই টিপ্পনিই রাহুল আজ তুলে আনেন সংসদে। বোঝাতে চান, অকালে ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও বর্ষণে ফসল নষ্ট হওয়ায় গোটা উত্তর ভারতে কৃষকরা সঙ্কটে, তার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে খামতি নেই! রাহুলের কথায়, ‘‘এমনিতেই শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে, সার সঙ্কট তীব্র, তা চাইতে গেলে লাঠি পড়ছে কৃষকদের উপরে। যেটুকু গম ওঁরা ফলাতে পেরেছেন তা-ও সরকার নায্যমূল্যে কিনছে না।’’

Advertisement

কৃষক আত্মহত্যার প্রসঙ্গে গত কাল বিজেপি-শাসিত হরিয়ানার কৃষিমন্ত্রী ও পি ধনকার মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘যে কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন তাঁরা কাপুরুষ। তাঁরা অপরাধ করছেন। অপরাধী ও কাপুরুষদের পাশে দাঁড়ানোর দায় সরকারের নেই।’’ আজ বিজেপি সরকারের ওই মন্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলেও সংসদে শাসক দলকে কোণঠাসা করতে চান রাহুল।

তবে আজও রাহুলকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেয়নি বিজেপি। তাঁর আক্রমণের জবাব দিতে চার জন মন্ত্রী মাঠে নামেন। প্রথমে মুখ খোলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তার পর কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী তথা পঞ্জাবে অকালি-বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলের পুত্রবধূ হরসিমরত কউর। তিনি বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী এক দিন বাজারে গিয়ে নাটক করছেন। যখন শিলাবৃষ্টি হচ্ছিল, তখন তিনি কোথায় ছিলেন? উনি ছুটি কাটাচ্ছিলেন। এমনকী, নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র অমেঠিতে পর্যন্ত যাননি।’’

হরসিমরতের পরে রাহুলকে কটাক্ষ করেন কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান। শ্লেষের সঙ্গে বলেন, ‘‘নখ কেটে শহিদ হতে চাইছেন রাহুল।’’ এর সঙ্গে পাসোয়ান ফিরিস্তি দেন, কৃষকদের জন্য সরকার কী কী করছে। জানান, কৃষকদের সব গম ও আখ কেনার এবং তুলোর সহায়ক-মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

রাহুল তাতেও দমেননি। সংসদ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘সরকার মেক-ইন-ইন্ডিয়া নিয়ে লাফালাফি করছে। কিন্তু পঞ্জাবের কৃষকরা যে ফসল ফলাচ্ছেন, তা কি মেক-ইন-ইন্ডিয়া নয়? দেশের গরিব মজুররা যা করেন, তা কি মেক-ইন-ইন্ডিয়া নয়? আসলে মেক-ইন-ইন্ডিয়ার নামে সরকারের ঘনিষ্ঠ ৫-৬ জন পুঁজিপতিকে সুবিধে পাইয়ে দিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী।’’

রাহুল কাল গিয়েছিলেন বিজেপি-অকালি শাসিত পঞ্জাবে। আজ কৃষকদের অধিকারের প্রশ্নে সংসদে সরব হওয়ার পরে সন্ধেয় তিনি রওনা দেন আর এক বিজেপি-শাসিত রাজ্য মহারাষ্ট্রের উদ্দেশে। গন্তব্য বিদর্ভ। রাতে নাগপুর পৌঁছন তিনি। কাল অমরাবতীর ৪-৫টি গ্রামে ১৫ কিলোমিটারের বেশি পদযাত্রা করে চাষিদের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। রাহুল যাওয়ার আগের দিনই সেখানে এক চাষি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। গজানন শেষরাও খোঙ্গল নামে ওই চাষি সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তাঁর ৪ একর জমিতে চাষ করেছিলেন। ফসল নষ্ট হওয়ায় তিনি কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশের সন্দেহ। দেশের যে সব জায়গায় গত কয়েক বছর ধরে সব চেয়ে বেশি কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে এই বিদর্ভ তার অন্যতম।

রাহুল এত ঘন ঘন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খোলায় এখন ঘরে- বাইরে নতুন প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। দলে ভাবনা, এত কথা বললে দু’দিন বাদে তা একঘেয়ে হয়ে যাবে না তো মানুষের কাছে! তবে কংগ্রেস সূত্রই বলছে, কৌশলগত কারণেই মোদীর বিরুদ্ধে রাহুল ধারাবাহিক ভাবে আক্রমণ শানাচ্ছেন ও অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছেন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রাহুল যখনই সংসদে মুখ খুলছেন, তখন সনিয়া গাঁধী সভায় উপস্থিত থাকছেন না। কংগ্রেস সভাপতি পদে এ বছরের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হবে রাহুলের। সেই পদ তিনি অর্জন করেছেন, এটা প্রমাণ করার লক্ষ্যেই রাহুলের এই অতিসক্রিয়তা। সনিয়া না রাহুল, কার হাতে দলের রাশ নিরাপদ— দলে মূল এই বিতর্কের মুখটাই বন্ধ করে দিতে চাইছেন সনিয়া। কৌশলে রাহুলকে জমি ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি।

বিজেপি এই নতুন রাহুলকে নিয়ে বিভ্রান্ত! গোড়ায় দলে বিতর্ক ছিল, রাহুলকে পাল্টা আক্রমণ না করে কেন চুপ থাকছে দল। আজ আবার ৪ জন মন্ত্রীকে রাহুলের পাল্টা বলার জন্য মাঠে নামিয়েও চিন্তায় বিজেপি। কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে যাচ্ছে না তো!

এই সাত-পাঁচ রাজনীতির মধ্যে আরও একটি বিষয় রয়েছে। মূলত যাকে কেন্দ্র করে এই বিতর্কের উৎপত্তি। তা হল মোদী সরকারেরজমি অধ্যাদেশ! সরকারের শীর্ষ নেতারাই মানছেন, চলতি অধিবেশনেও এর শিকে ছিঁড়বে না। শহিদ হতে চলেছে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত দ্বিতীয় অধ্যাদেশটিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement