(বাঁ দিকে) অগ্নিমিত্রা পাল এবং প্রতিমা মণ্ডল (ডান দিকে)। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
“পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয়? আপনাকে জবাব দিতে হবে দিদি!” তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। দৃশ্যত বচসায় জড়ালেন সাংসদ ও বিধায়ক। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে কার্যত আঙুল উঁচিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকলেন অগ্নিমিত্রা। আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ককে হাত জোড় করে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করলেন প্রতিমা। কিন্তু লাভ হল কি না, বোঝা গেল না। অগ্নিমিত্রা বলতেই থাকলেন, “আপনি এখানকার সাংসদ। আপনি অভিভাবক। আপনাকে জবাব দিতে হবে।” সাংসদকে ঘিরে গো ব্যাক স্লোগানও উঠল ভিড়ের মধ্যে থেকে।
নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে উত্তাল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর। শনিবার দুপুরে হাসপাতালের সামনে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা এবং বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা। বিক্ষোভের মুখে পড়ে বিজেপির ‘সংস্কৃতি’ নিয়ে পাল্টা বিঁধতে দেখা গেল প্রতিমাকে। পাল্টা ক্ষোভ উগরে দিয়ে সাংসদ বললেন, “এটাই ওঁদের শিক্ষা। আমি কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু ওঁরা শেখাচ্ছে, আমার শাড়ি খুলে দেওয়া হোক। এতে আমি ভয় পাই না।”
শুক্রবার রাতে নাবালিকার দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও। চতুর্থ শ্রেণীর ওই পড়ুয়া শুক্রবার দুপুরে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়েছিল। তার পর থেকেই আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না নাবালিকার।
এই নিয়ে প্রথমে পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে গেলে, সেখানে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পরে রাতের দিকে উদ্ধার হয় নাবালিকার দেহ। পরিবারের দাবি, পুলিশ প্রথম থেকে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিলে মেয়েটিকে প্রাণে বাঁচানো যেত। তা নিয়ে সকাল থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত জয়নগর। থানা ঘেরাও করেছিলেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ ফাঁড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় র্যাফ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। লাঠিচার্জও করা হয়েছিল বলে দাবি স্থানীয়দের একাংশের।
সকালে বামেদের তরফেও একপ্রস্ত বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়েছিল হাসপাতালের সামনে। পরে অগ্নিমিত্রার নেতৃত্বে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা পৌঁছে যান হাসপাতালের সামনে। বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরাও। কিছু সময় পরে তৃণমূল সাংসদ প্রতিমাও পৌঁছন সেখানে। দুই বিপক্ষ শিবিরের সাংসদ-বিধায়ক মুখোমুখি হতেই উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। প্রতিমার উদ্দেশে আঙুল উঁচিয়ে দৃশ্যত বচসায় জড়িয়ে পড়েন অগ্নিমিত্রা।
জয়নগরের ওই হাসপাতালে দুপুরে নাবালিকার দেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়া চলছিল। বাইরে উত্তেজিত জনতার ভিড়। ছিলেন অগ্নিমিত্রারাও। পুলিশি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে হাসপাতালের বাইরে। ঠিক সেই সময়েই জয়নগরের সাংসদ হাসপাতালের সামনে পৌঁছন। প্রতিমা সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি মৃত নাবালিকার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু অগ্নিমিত্রার সঙ্গে বচসা এবং বিজেপি সমর্থকদের বিক্ষোভের জেরে হাসপাতালের বাইরেই অপেক্ষা করতে হয় সাংসদকে।
শুক্রবার রাতের ওই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যে এক জনকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি জানিয়েছেন, অভিযুক্ত খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে ধর্ষণের যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই অভিযোগ স্বীকার করেননি ধৃত যুবক।