রাহুল গান্ধীর পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে নিশানা করলেন বিরোধী নেতারা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল করা হয়েছে। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এই ‘দুর্দিনে’ মতানৈক্য দূরে সরিয়ে সনিয়া-পুত্রের পাশে দাঁড়ালেন বিরোধী নেতারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সীতারাম ইয়েচুরি— রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের প্রতিবাদে এক সুরে গর্জে উঠলেন বিরোধী নেতারা।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে যখন বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে চর্চা চলছে এবং কংগ্রেসকে ছাড়া তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে, সেই আবহে রাহুলের ‘হাত’ ধরে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে যে ভাবে একযোগে আক্রমণ করতে আসরে নামল বিরোধী দলগুলি, তা এই পর্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তা হলে কি মোদী সরকারের এই পদক্ষেপে বিরোধী ঐক্যের পথ প্রশস্ত হয়ে গেল? এই প্রশ্নই উঠছে রাজনৈতিক অলিন্দে।
‘মোদী’ পদবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে বৃহস্পতিবার রাহুলকে ২ বছরের জেলের সাজা শুনিয়েছে গুজরাতের সুরত জেলা আদালত। তারই ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুক্রবার রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের খবর প্রকাশ্যে আসতেই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা জানিয়ে সরব হয়েছে একের পর এক বিরোধী দল।
রাহুলের পাশে থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে তৃণমূল নেত্রী লিখেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর নতুন ভারতে বিরোধী নেতারাই বিজেপির মূল নিশানা হয়ে উঠেছেন। যখন অপরাধের ইতিহাস থাকা বিজেপি নেতাদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, তখন বিরোধী নেতাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে ভাষণ দেওয়ার জন্য! আজ, গণতন্ত্র নতুন নীচতায় পৌঁছল।’’ যদিও রাহুলের নাম নেননি মমতা। তবে তাঁর এই টুইট রাহুলের পাশে থাকার বার্তা বলেই মনে করা হচ্ছে। মমতার মতোই রাহুলের নাম না করে এই নিয়ে টুইটে বিজেপি সরকারকে নিশানা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েক মাস ধরে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি ঘটেছে। এই আবহে রাহুলের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে মমতা এবং অভিষেকের টুইট ভিন্ন মাত্রা যোগ করল।
মমতার মতোই রাহুলের পাশে থেকে বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘বিরোধী নেতাদের কোণঠাসা করতে বিজেপি এখন ফৌজদারি মানহানির পথ নিচ্ছে, যা নিন্দনীয়। যেমনটা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে করা হল।’’ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ‘অপব্যবহার’ নিয়েও সরব হয়েছেন ইয়েচুরি। ইডি, সিবিআইয়ের অপব্যবহারের অভিযোগ প্রায়শই করে থাকেন মমতা। এ বার সেই একই সুর শোনা গেল ইয়েচুরির কণ্ঠে।
তৃণমূল, সিপিএমই নয়। রাহুলের পাশে দাঁড়িয়েছে অন্য বিরোধী দলগুলিও। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল টুইটারে লিখেছেন, ‘‘লোকসভা থেকে রাহুল গান্ধীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত। কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। গোটা দেশে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। ওদের (বিজেপি) অহংকার চূর্ণ করতে ১৩০ কোটি মানুষকে জোটবদ্ধ হতে হবে।’’
বিজেপিকে নিশানা করেছেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। তিনি বলেছেন, ‘‘চোর এবং লুটেরারা স্বাধীন ভাবে ঘুরছেন। কিন্তু শাস্তি পেলেন রাহুল। সরাসরি গণতন্ত্রকে হত্যা করা হল। সমস্ত সরকারি ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণাধীন। এটা একনায়কতন্ত্রের শেষের শুরু।’’ আপ নেতা তথা দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের অনেক মতপার্থক্য রয়েছে... কিন্তু কেন্দ্র যদি বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে চায়, তা হলে মানুষের হয়ে কে সরব হবে? যদি এটা চলতে থাকে, তা হলে বিরোধীদের ছাড়াই সব নির্বাচনে একা লড়াই করুন প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি। এটা স্বৈরাচারী মনোভাব।’’ আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা বলেছেন, ‘‘এটা লজ্জার এবং দুর্ভাগ্যজনক। সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এর চেয়ে বড় চক্রান্ত কিছু হতে পারে না।’’