Bharat Jodo Yatra

‘টি শার্টের রং লাল করার সুযোগ দেওয়া যাক’

পঁচাত্তর বছর আগে এই দিনেই নাথুরাম গডসের গুলি মোহন দাস কর্ম চন্দ গান্ধীর শরীর রক্তে ভাসিয়ে দিয়েছিল। স্কুলে বসে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার সংবাদ শুনে বাড়ি ফিরে এসে ঠাকুমার রক্ত দেখতে হয়েছিল।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:৫৯
Share:

বরফ নিয়ে খুনসুটি রাহুল-প্রিয়ঙ্কার। সোমবার শ্রীনগরে। পিটিআই

পেঁজা তুলোর মতো বরফ অকাতরে নেমে আসছে। সঙ্গে বৃষ্টি। ভরদুপুরে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির আশেপাশে। নাক-মুখ দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে মেরুদণ্ডে ছোবল মারছে। গোটা শ্রীনগর কয়েক ইঞ্চি সাদা বরফে ঢাকা। শের-ই-কাশ্মীর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঠ তুষারাবৃত। মাঠের এক ধারে ভারত জোড়ো যাত্রার সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চও বরফে ঢেকে যাচ্ছে। চারদিকে শুধুই সাদা আর সাদা নরম বরফ।

Advertisement

এই সাদায় ঢেকে যাওয়া মাটিতে দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধীর মনে আজ লাল রক্তের স্মৃতি ফিরে এল।

পঁচাত্তর বছর আগে এই দিনেই নাথুরাম গডসের গুলি মোহন দাস কর্ম চন্দ গান্ধীর শরীর রক্তে ভাসিয়ে দিয়েছিল। স্কুলে বসে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার সংবাদ শুনে বাড়ি ফিরে এসে রাহুল গান্ধীকে ঠাকুমার রক্ত দেখতে হয়েছিল। বরফ-বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই রাহুল আজ জানালেন, কাশ্মীরে পায়ে হেঁটে ঢোকার আগে তাঁকে প্রশাসনের কর্তারা সতর্ক করে বলেছিলেন, তাঁর উপরে গ্রেনেড হামলা হতে পারে। কিন্তু তিনি অন্য কিছু ভেবেছিলেন। কী? রাহুল বলেন, “ভেবেছিলাম, আমাকে যাঁরা ঘৃণা করেন, তাঁদের না হয় একটা সুযোগ দেওয়া যাক আমার টি-শার্টের সাদা রং বদলে লাল করে দিতে।”

Advertisement

ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল গান্ধী বার বার বলেছিলেন, তাঁর যাত্রা নাথুরাম গডসে, বিজেপি-আরএসএসের ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসার নীতির বিরুদ্ধে। সোমবার যাত্রার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে রাহুল গান্ধী হিংসা ছড়ানোর জন্য সরাসরি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, আরএসএসের নেতাদের দিকে আঙুল তুলেছেন। একই বন্ধনীতে টেনে এনেছেন মোদীর আস্থাভাজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকেও। রাহুল বলেছেন, ঠাকুমার হত্যার মতো বাবা রাজীব গান্ধীর মৃত্যুসংবাদও তিনি আমেরিকায় বসে টেলিফোনে জানতে পেরেছিলেন। রাহুল বলেন, “যাঁরা হিংসা করেন, যেমন মোদীজি, অমিত শাহ, অজিত ডোভাল, আরএসএসের নেতা, ওঁরা কোনও দিনও পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানের বা নিহত কাশ্মীরিদের সন্তানদের মনের যন্ত্রণা বুঝতে পারবেন না।” হাতের মোবাইল দেখিয়ে রাহুল বলেন, “এটা আমাদের কাছে শুধু ফোন নয়। এই ফোনে যখন মৃত্যুসংবাদ আসে, তখন কেমন লাগে, সেটা আমি বুঝি। আমার বোন প্রিয়ঙ্কা বোঝে। এই ভারত জোড়ো যাত্রার একটা লক্ষ্য ছিল, সেনা, সিআরপি, কাশ্মীরিদের পরিবারের ফোনে মৃত্যুসংবাদ পাওয়া বন্ধ করা।”

রাহুল আজ ফের বলেছেন, বিজেপি-আরএসএসের যে মতাদর্শ দেশের ভিত ভাঙতে চাইছে, তার বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু যাত্রার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ২৩টি বিরোধী দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও কংগ্রেস নেতৃত্বকে হতাশ করে শ্রীনগরের অনুষ্ঠানে ডিএমকে, ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, সিপিআই, আরএসপি, ভিসিকে, কেরল কংগ্রেস, আইইউএমএল-এর মতো কিছু দল হাজির ছিল। ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতি ছাড়া তেমন কোনও বড় নেতাই ছিলেন না। তৃণমূল, এসপি দূরের কথা, এনসিপি, শিবসেনার কোনও নেতাও ছিলেন না। তুষারপাত-বৃষ্টির মধ্যে কংগ্রেস কর্মী এবং কিছু এনসি, পিডিপি সমর্থক ছাড়া আমজনতাও সে ভাবে শের-ই-কাশ্মীর স্টেডিয়াম-মুখো হননি।

তা নিয়ে খোঁচা দিয়ে বিজেপির মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী বলেছেন, “এই যাত্রার সঙ্গে বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদীর কোনও সম্পর্ক ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমার, কে চন্দ্রশেখর রাওদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষার মোকাবিলায় বিরোধী দল হিসেবে কংগ্রেসের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা ছিল। বিরোধীদের সঙ্গে নেওয়ারও চেষ্টা ছিল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নেতা বা বড় দলগুলি কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করেছে।” কংগ্রেস নেতারা পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, টানা তুষারপাতের জন্য অধিকাংশ বিমান বাতিল হয়ে যাওয়ায় অনেকেই আসতে পারেননি।

গোটা ভারত জোড়ো যাত্রায় তাঁর পরিচিত পোশাক সাদা টি-শার্টের বদলে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে রাহুলের পরনে ছিল কাশ্মীরিদের চিরাচরিত পোশাক ‘ফেরন’। কাশ্মীরি পণ্ডিতরা যখন তাঁদের উপরে সন্ত্রাসবাদী নিশানায় কেন্দ্রের উপরে ক্ষুব্ধ, তখন রাহুল বারবার মনে করিয়েছেন, নেহরু-গান্ধী পরিবার আদতে কাশ্মীরি পরিবার। এই কাশ্মীর থেকে তাঁর পরিবার ইলাহাবাদে গিয়েছিল। যাত্রার শেষে কাশ্মীরে আসা এক অর্থে তাঁর কাছে ঘরে ফেরা। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা জানিয়েছেন, কাশ্মীরে আসার সময় রাহুল এই অনুভূতির কথা তাঁকে ও মা সনিয়াকে মেসেজ করে জানিয়েছিলেন। রাহুল আজ দু’হাতে লুকিয়ে রাখা বরফের গোলা প্রিয়ঙ্কায় মাথায় মাখিয়ে দিয়ে কাশ্মীরিতে বরফের শুভেচ্ছা বা ‘শিন মুবারক’-ও জানিয়েছেন।

অতীতে কেন্দ্রে বা জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপির দুই প্রাক্তন জোট শরিক পিডিপি ও এনসি রাহুলের এই ‘ঘরে ফেরা’-কে স্বাগত জানিয়েছেন। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, “গডসের মতাদর্শ জম্মু-কাশ্মীর থেকে যা কেড়ে নিয়েছে, তা রাহুল গান্ধী ফেরাবেন বলে আশা করি। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, তিনি জম্মু-কাশ্মীরে আশার আলো দেখতে পান। আজ দেশ রাহুলের মধ্যে আশার আলো দেখছে।” আর এনসি-র ওমর আবদুল্লা বলেছেন, দক্ষিণ থেকে উত্তরের পরে রাহুল এ বার পশ্চিম থেকে পূর্বে ভারত যাত্রা করুন। তিনি সঙ্গে হাঁটবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement