রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার মণিপুর সফরে আসছেন রাহুল গান্ধী। সকাল সাড়ে ১১টার সময়ে পৌঁছে লামকা (চূড়াচন্দ্রপুর)-য় বেশ কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার কথা তাঁর। সেখানে আশ্রিতদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। পরে তিনি বিষ্ণুপুরের শরণার্থী শিবিরে যাবেন। রাত কাটাবেন মৈরাংয়ে। শুক্রবার তিনি ইম্ফলে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে যাবেন। একটি হোটেলে তিনি মেইতেই, কুকি ও নাগাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। দিল্লি ফেরার আগে কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারেন তিনি। কিন্তু রাহুলের সফরের বিরোধিতা করে মণিপুর পেট্রিয়টিক পার্টি তাঁর উদ্দেশে খোলা চিঠি দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, আদতে কংগ্রেসের আমলেই মণিপুরের এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এখন রাহুল ঘোলা জলে মাছ ধরতে আসছেন।
তাদের দাবি, কংগ্রেস সরকারই ১৯৪৯ সালে স্বাধীন মণিপুরকে জোর করে ভারতে অঙ্গীভূত করেছিল। মণিপুরবাসী কখনও সেই একত্রীকরণ মানতে পারেনি বলেই রাজ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের সূচনা হয়। ওই সংগঠনের আরও দাবি, কংগ্রেসই বরাবর কুকিদের ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে ব্যবহার করেছে এবং পৃথক কুকিল্যান্ডের স্বপ্ন দেখিয়েছে। তার জেরেই আজ পাহাড় থেকে মেইতেইদের বহিষ্কার করে পৃথক রাজ্যের দাবি তুলছে কুকিরা। তাদের আরও অভিযোগ, কুকি জঙ্গিদের দমন না করে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করার আড়ালে কংগ্রেস সরকার আসলে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নাগা ও মেইতেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছিল।
কংগ্রেসের দাবি, বিজেপির কলকাঠিতেই এমন বিবৃতি দিয়েছে ওই সংগঠন।
এ দিকে, মণিপুরে কুকিরা পৃথক রাজ্য বা পৃথক প্রশাসনের জন্য যখন সরব, তখনই সেই দাবিতে ইন্ধন জুগিয়ে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা বললেন, ১৯৬১ সাল থেকেই তাঁর দল সব জো গোষ্ঠীকে এক ছাতার তলায় আনার জন্য লড়ছে। সরাসরি সব জো-কুকি জনগোষ্ঠীকে একজোট করার কথা বলে জোরাম শাসকদল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের সভায় বলেন, আমি প্রতিবেশী মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহকেও জানিয়েছি, এমএনএফের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল সব জো-কুকিদের একত্রীকরণের উদ্দেশ্যে। উল্লেখ্য, মণিপুরের প্রায় ১২ হাজার জো-কুকি এখন মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন। মণিপুরের কুকি এলাকায় বৃহত্তর মিজোরামের দাবি লেখা দেওয়াল লিখন, পোস্টার চোখে পড়ছে। সেখানকার ১০ জন বিধায়ক একজোট হয়ে পৃথক প্রশাসন দাবি করেছেন। কেন্দ্রের তৈরি শান্তি কমিটিকে ইতিমধ্যেই বয়কট করেছে কুকি সংগঠনগুলি। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, পৃথক কুকি এলাকা তথা পৃথক প্রশাসন বাদে তাদের আলোচনার আর কোনও জায়গাই নেই। এই পরিস্থিতিতে জোরাম আগেও কুকিদের একত্রীকরণের কথা বলেছিলেন। প্রতিবাদে অসমের মেইতেইরা মিজোরামের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের ডাক দিয়েছিল। তখনকার মতো চুপ করে গেলেও দেখা যাচ্ছে জোরাম কুকিদের একত্রীকরণের স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। যদিও তিনি বলেন, “মণিপুরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমার হস্তক্ষেপ করার কোনও জায়গা নেই। কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্যের সমগোষ্ঠীয় ভাইবোনেরা তা চাইতেই পারেন।”
এ দিকে ইম্ফলে পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে লুঠ হওয়া অস্ত্র বিক্রির চেষ্টার সময় সেনা ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছে ৭টি অস্ত্র ও ২১৮ রাউন্ড গুলি মেলে। এখন পর্যন্ত লুট হওয়া ৪ হাজারের বেশি অস্ত্রের মধ্যে ১১১০টি অস্ত্র, প্রায় ১৪ হাজার গুলি এবং ২৫০টি বোমা উদ্ধার হয়েছে।