রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র
ক্ষমা চেয়ে আদালত অবমাননার শাস্তি এড়িয়েছেন বটে, কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে রাফাল-দুর্নীতির অভিযোগে অটল রইলেন রাহুল গাঁধী। বিচারপতি কে এম জোসেফের পৃথক রায়কে হাতিয়ার করে তদন্তের দাবিতে তেড়েফুঁড়ে উঠলেন আগের মতোই।
রাফাল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে বিদেশে থাকা প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেননি। কিন্তু অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ থেকে শুরু করে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা আজ আসরে নেমে পড়েছেন রাহুলকে চাঁদমারি করে। বিজেপি বলেছে, রাহুল এক বার সুপ্রিম কোর্টে পরাস্ত হয়েছেন। তার পর লোকসভা নির্বাচনে মানুষ তাঁকে পরাস্ত করেছেন। এ বারে সুপ্রিম কোর্ট আরও এক বার হারাল। প্রধানমন্ত্রীকে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ বলেছিলেন। শীর্ষ আদালতের অবমাননাও করেছিলেন। নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ‘তিহাড় সফর’ এড়িয়েছেন। এ বারে জনতার কাছেও ক্ষমা চান রাহুল।
গত এপ্রিলে রাফাল চুক্তি সংক্রান্ত নতুন নথি প্রকাশের পরে রাহুল বলেছিলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টও বলেছে, চৌকিদার চোর।’’ শীর্ষ আদালত বলে, ক্ষমা চাওয়াতে রাহুলের বিরুদ্ধে অবমাননার অভিযোগ বাতিল করা হল। তবে একই সঙ্গে তাঁকে ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্য করার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিজেপির দাবি, ক্ষমা না-চাইলে রাহুলের ৬ মাস জেল হতে পারত। সাংসদ পদও খোয়াতে পারতেন তিনি। বিজেপি ভেবেছিল, এ বার কংগ্রেস ঢোক গিলবে। কিন্তু কোথায় কী?
টুইট করলেন রাহুল। বিচারপতি জোসেফের রায়ের উল্লেখ করে বললেন, ‘রাফাল দুর্নীতির তদন্তের একটি বড় দরজা খুলে দিয়েছেন বিচারপতি জোসেফ। পুরোদস্তুর একটা তদন্ত শুরু হওয়া উচিত। সে জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গড়তে হবে।’ এই টুইটে হ্যাশট্যাগ দিলেন ‘রাফালে বিজেপির মিথ্যা’। রাহুল দিল্লিতে নেই। তাই টুইট করলেন। যদিও তাঁর নির্দেশে পাল্টা মোদীকে নিশানা করে নামল গোটা দল। এআইসিসিতে এসে প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা জানালেন, ‘‘রাহুল ভারতেই আছেন।’’
এর পরেই বিঁধলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর ভয় কিসের? জেপিসি-তে তো বিজেপি সদস্যের সংখ্যা বেশি হবে। সব কিছু পাশ কাটিয়ে তিন গুণ দামে রাফাল কিনেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেটি তো দুর্নীতিই।
জেপিসি-তে সব ফাইল যাচাই হবে। দরকারে প্রধানমন্ত্রীকেও তলব করা হবে। আমেরিকার মতো প্রকাশ্যে হোক জেপিসি-র জেরা। সকলে দেখুক, সত্য কী?’’
কংগ্রেসের আগেই বিজেপির রবিশঙ্কর প্রসাদ অভিযোগ করেছেন, প্রতিযোগী সংস্থার (ইউরো ফাইটার) স্বার্থ দেখতেই রাফালের বিরোধিতা করেছেন রাহুল। দুর্নীতি ধরার কোনও লক্ষ্য ছিল না। রণদীপের জবাব, ‘‘রাহুল গাঁধী শুধু মানুষের স্বার্থ দেখেছেন। ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান এখনও বহাল।’’
গোটা লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে রাফাল নিয়ে সরব ছিলেন রাহুল। দলের অনেকে বলেছিলেন, রাফাল দাগ কাটছে না মানুষের মনে। রাহুল শোনেননি। বরং ভোট বিপর্যয়ের পরে অভিযোগ
করেন, দল পাশে থাকেনি। আজ রণদীপ যুক্তি দিলেন, ‘‘ভোটের ইস্যু না হোক, রাফাল দেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তার বিষয়। ফলে না জেনেবুঝে বিজেপির আগাম উৎসবের কোনও মানে নেই।’’ এ মাসের শেষ দিনে দিল্লিতে একটি বড়সড় জনসভা করতে চলেছে কংগ্রেস। সেখানে সরব হতে পারেন রাহুল।