Rahul Gandhi on Opposition Alliance

‘দরকার হলে আমি সরে যাচ্ছি, কিছুতেই জোট ভাঙবেন না’, ১৭টি বিরোধী দলের বৈঠকে আর্জি রাহুলের

রাহুল বলেছেন দেশবাসীর কাছে গিয়ে আদানি কাণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। তাঁর বক্তব্য, বিজেপি ভয় পেয়েছে, এটাই সুযোগ ২০২৪-এর যুদ্ধে জেতার।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৩ ০৬:৩৫
Share:

মল্লিকার্জুন খড়্গের বাড়িতে নৈশভোজে যোগ দিতে সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে রাহুল। নয়াদিল্লিতে সোমবার। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূল-সহ ১৭টি বিরোধী দলের কাছে রাহুল গান্ধীর সনির্বন্ধ আর্জি— বিরোধী ঐক্য জোরদার করাটাই এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। বিরোধীদের সামনে সুযোগ এসেছে। এমন একটা সময়ে বিরোধী নেতারা যেন কেউ কারও বিরুদ্ধে কথা না বলেন। রাহুলের বক্তব্য, দরকার হলে তিনি সরে যেতে রাজি আছেন। কিন্তু ২০২৪-এর লোকসভায় বিজেপিকে হারানোর যে সুযোগ পাওয়া গিয়েছে, তাকে কোনও ভাবেই হাতছাড়া করা চলবে না। আজ সন্ধ্যায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাসভবনে বিরোধী দলের বৈঠকে রাহুল এই মন্তব্য করেছেন বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর। তিনি বলেন, “গণতন্ত্র বাঁচলে ভারতের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের মূল ভাবনাটিকে বাঁচানো সম্ভব হবে। এটাই সময়ের লড়াই।” উল্লেখযোগ্য ভাবে বিরোধীদের এই বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব দলের দুই সাংসদকে অংশ নিতে পাঠান।

Advertisement

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সনিয়া গান্ধীও। রাহুল নিজেই গাড়ি চালিয়ে সনিয়াকে নিয়ে আসেন খড়্গের বাড়ি। তবে সনিয়া নিজে কোনও কথা বলেননি। আর এক প্রবীণ নেতা এনসিপি-র শরদ পওয়ারও সমস্ত বিরোধী দলকে এক ছাতার তলায় থেকে বিজেপি-বিরোধী কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা বলেছেন। স্থির হয়েছে, শীঘ্রই এই দলগুলির প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসে পরবর্তী কর্মসূচি স্থির করবেন। তার আগে দেখে নেওয়া হবে বাজেট অধিবেশন কত দিন চলে‌। তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুই সাংসদ, জহর সরকার এবং প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা বৈঠকে জানিয়েছেন, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী তৃণমূল গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে আছে। প্রসূন বলেন, “আমি ফুটবলার হিসেবে চিরকাল টিম গেমে বিশ্বাস করি।” সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে দৌড়নোর প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। জহর সরকার বলেন, “বিরোধী দলের যৌথ বৈঠক হচ্ছে খুবই ভাল। কিন্তু প্রতিটি দলের সঙ্গে অন্য দলের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ তৈরি হওয়াও প্রয়োজন। সে ব্যাপারেও কংগ্রেস ভাবনাচিন্তা করুক।” ডিএমকে-র টি আর বালু এই প্রসঙ্গে বলেন, পারস্পরিক আলোচনার পরে তিক্ততা শুরু হলে তার সুবিধা আবার বিজেপি নেবে। বড় দল হিসাবে জোটে বাড়তি দায়িত্ব পালনের জন্য কংগ্রেসকে ভেবে দেখতে বলেন এস পি নেতা রামগোপাল যাদব। আপ ও তৃণমূল তাঁকে সমর্থন করে।

সূত্রের খবর, রাহুল বলেছেন দেশবাসীর কাছে গিয়ে আদানি কাণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। তাঁর বক্তব্য, বিজেপি ভয় পেয়েছে, এটাই সুযোগ ২০২৪-এর যুদ্ধে জেতার। ঐক্য অটুট রাখার উপরে জোর দিয়ে রাহুল এ কথাও বলেন, দরকার হলে তিনি সরে যাবেন। কিন্তু উপস্থিত দলগুলির কেউ যেন কারও বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে‌। বাসভবনের এই বৈঠকে তৃণমূল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডিএমকে, বিআরএস, জেডিইউ, বাম, বিআরএস, আপ, আরজেডি, এনসিপি-সহ বিরোধী দলগুলির নেতারা।

Advertisement

মনে করা হচ্ছে, কারও বিরুদ্ধে কথা না-বলার যে বার্তা রাহুল দিয়েছেন, তা মূলত তাঁর নিজের দল এবং তৃণমূলের সাম্প্রতিক সংঘাতকে মাথায় রেখেই। সাগরদিঘির উপনির্বাচনের পরে এই সংঘাত আর আড়ালে নেই। এটাও ঘটনা, এই প্রথম কংগ্রেসের পাশে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে। দু’দিন আগে রাহুলের সদস্যপদ খারিজ হওয়ার পরে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। এর পর সমস্ত বিরোধী দলকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান রাহুল নিজে। আজ এই অধিবেশনে প্রথম বার একই দিনে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের দু’টি বৈঠকে হাজিরা এবং ১৭টি দলের বিরোধী মিছিলে হাঁটতে দেখা গেল তৃণমূল সাংসদদেরও। তবে তৃণমূলের সংসদীয় নেতারা যাননি।

কেন সিদ্ধান্ত বদলে কংগ্রেসের পাশে প্রকাশ্যেই দাঁড়াল তৃণমূল? লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বিরোধী জোটের নেতৃত্ব কংগ্রেসের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয় এটি নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের উপরে আঘাত আসছে। সেটা ঐক্যবদ্ধ ভাবে মোকাবিলা করার জন্যই আমরা বিরোধী দলের বৈঠকে হাজির থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকারের ইশারা ছাড়া কোনও সাংসদের পদ খারিজ করা সম্ভব নয়।”

তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, সব দলকেই উদার হতে হবে। রাহুল তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে বিরোধী দলগুলিকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে সেই উদারতা দেখিয়েছেন। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, “বিজেপি সীমা ছাড়িয়েছে। গণতন্ত্র, সংসদ, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এবং সংবিধানকে বাঁচাতেই হবে।এই কারণেই বিরোধী দলগুলি একজোট হয়েছে।”

তবে কংগ্রেস সাংসদেরা কালো পোশাক পরে প্রতিবাদ জানালেও তৃণমূল বৈঠকেই জানিয়ে দিয়েছে তারা স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখবে। এর আগেও তৃণমূল কালো কাপড় পরে সংসদের অচলবাস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। আজ রঙিন পোশাক পরলেও তৃণমূল সদস্যদের মুখে দেখা গিয়েছে কালো মুখোশ। মঙ্গলবারের বিক্ষোভেও তৃণমূল সাংসদদের অংশগ্রহণ চেয়ে রাতে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন খড়্গে।

রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, আজ তৃণমূল বিরোধী জোট রাজনীতির প্রশ্নে কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা করল। শুক্রবার পর্যন্ত সংসদে একসঙ্গে উঠতে বসতে দেখা গিয়েছে ১৬টি বিরোধী দলকে। কিন্তু তৃণমূল প্রতিবাদ কর্মসূচি করেছে আলাদা ভাবে। দলের যুক্তি ছিল, কংগ্রেসের নেতৃত্বে কোনও আন্দোলনে তারা যাবে না। কংগ্রেস রাজ্যে মমতার বিরোধিতা করে যাচ্ছে। কিন্তু রাহুলের সদস্যপদ খারিজ হওয়ার পর সামগ্রিক ভাবে যে সহানুভূতির হাওয়া বিরোধী শিবিরে তৈরি হয়েছে, তা থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চাইলেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। অন্য দিকে সংসদীয় নেতারা খড়্গের বৈঠকে যোগ না-দিয়ে রাজ্যে বার্তা দিলেন, রাজনৈতিক শত্রু কংগ্রেসের কাছে তৃণমূল নতজানু নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement