ছবি: পিটিআই।
সোমবার দোল, মঙ্গলে হোলি। আজকের পর চার দিন ছুটি সংসদ। বুধবার অধিবেশন শুরু হলে দিল্লি-হিংসা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়েছে সরকার। জবাব দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে আজও অচল রইল সংসদ। বুধবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তারও ইঙ্গিত মিলল না।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের দাবি, জট কাটাতে অমিত শাহ সনিয়া গাঁধী-রাহুল গাঁধীর সঙ্গে কথা বলতে রাজি ছিলেন। কিন্তু সদর্থক বার্তা আসেনি, বিশেষত রাহুলের কাছ থেকে। রাহুল আজ সকালে হাতে কালো ফিতে বেঁধে সংসদ চত্বরে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে সাসপেন্ড হওয়া কংগ্রেসের সাত সাংসদকে নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সেখানে অমিতের ইস্তফার দাবিতে স্লোগান ওঠে। পরে অধিবেশন মুলতুবি হতেই দলীয় সাংসদদের রাহুল বলেন, ‘‘আদর্শের লড়াই চালিয়ে যাব। বিজেপি যা করেছে, দেশকে তার খেসারত দিতে হবে। তাদের সঙ্গে আপস নয়।’’ কংগ্রেসের সাংসদদের আচরণে ‘ব্যথিত’ স্পিকার ওম বিড়লা আজও লোকসভায় আসেননি। এই নিয়ে তৃতীয় দিন। কিন্তু নিজের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছেন, যে কমিটিতে প্রায় সব দলের সাংসদকে রাখা হবে। আর ২-৫ মার্চ পর্যন্ত ঘটনার তদন্ত করে কমিটি রিপোর্ট দেবে। ‘চেয়ার’ থেকে আজ এই ঘোষণা করা হয়। যদিও সরকারের সূত্রের মতে, সাংসদদের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তৈরি হবে পাকাপাকি নিয়ম, তবে এই কমিটি কংগ্রেসের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের পাকাপাকি বার করে দেওয়ার সুপারিশ করবে না। তৃণমূল, ডিএমকে, এনসিপির মতো দল আজ কংগ্রেসের পাশেই দাঁড়িয়েছে।
‘লঘু পাপে গুরু দণ্ড’ যাতে এই সাংসদদের না-হয়, স্পিকারের অনুপস্থিতিতে আজ ‘চেয়ার’কে সেই আবেদন জানাতে গিয়ে কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী অন্য বিতর্ক তৈরি করলেন। প্রথমত, স্পিকারের চেয়ারকে তিনি ‘ভ্যাটিকানের পোপ’-এর সঙ্গে তুলনা করেন। পরে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের শাস্তি মকুবের আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘‘জেবকটুয়াদের ফাঁসিকাঠে তোলা হয় না।’’ সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বললেন, ‘‘বিরোধী দলের সাংসদদের বাইরে রেখে নরেন্দ্র মোদীর সংসদ চালানোর ইচ্ছা নেই। স্পিকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু সাসপেন্ডদের ‘পকেটমার’ বলবেন না দয়া করে।’’ বিজেপির আরও প্রশ্ন, কংগ্রেসের সব ক্ষেত্রে কেন ‘ভ্যাটিকান’, ‘ইটালি’ মনে পড়ে? দিল্লি-হিংসা নিয়ে সনিয়ার তৈরি করা কংগ্রেসের কমিটি রিপোর্ট তৈরি করে ফেলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে তাঁরাও দেখেছেন, দিল্লি পুলিশ ও প্রশাসন সময়মতো পদক্ষেপ না করায় বিপদ বেড়েছে। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘বুধবার আলোচনা হলে অমিত শাহকে ছেড়ে কথা বলা হবে না। তাতে আরও সাংসদকে সাসপেন্ড করলে করুক।’’ আজ বিকেলে বৃষ্টিভেজা দিল্লিতে অমিতের ছাতা মাথায় দিয়ে সংসদ থেকে বেরোনোর ছবি দেখে কংগ্রেসের সাসপেন্ড হওয়া এক সাংসদ মানিকম টেগোর বললেন, ‘‘ইনি সংসদেই ছিলেন? আর আমরা প্রশ্ন করায় বাইরে! দিল্লি জ্বলছে, আর দেশলাই এঁর হাতে।’’
আরও পড়ুন: অফিসারদের দায়ী করল দিল্লি পুলিশ
সব মিলিয়ে বুধবার কতটা আলোচনা হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে শাসক শিবিরেও। যদিও ১৭ মার্চ অর্থবিল পাশ করার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। হইচইয়ের মধ্যে আজও পাশ করিয়ে নিয়েছে দুটি বিল। বিজেপির এক সাংসদ বললেন, ‘‘হল্লা হলেও আমাদের লাভ!’’