রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
তেলঙ্গানার জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন রাহুল গান্ধী। বললেন, ‘‘কে চন্দ্রশেখর রাও তাঁর দলের নাম বদলে বিআরএস করেছেন। যার আসল অর্থ, বিজেপি রিস্তেদার (আত্মীয়) সমিতি!’’
তেলঙ্গনার খাম্মামে আজ জনসভা ছিল রাহুলের। বিপুল জনতার সামনে দাঁড়িয়ে সরাসরি তাঁর অভিযোগ, বিআরএস আসলে বিজেপির ‘বি দল’, নরেন্দ্র মোদীর রিমোট কন্ট্রোলে চলে। ভোটমুখী রাজ্যে তাঁর অঙ্গীকার, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বয়স্ক এবং বিধবাদের জন্য মাসে ৪ হাজার টাকা দেওয়া হবে। যে জমি বিআরএস ‘কেড়ে নিয়েছে’, তা ফেরত দেওয়া হবে জনজাতিদের।
‘তেলঙ্গনা জনগর্জন সমিতি’ আয়োজিত সভায় রাহুল মঞ্চে ওঠার পরই জনতার গর্জন শোনা যায়— ‘পিএম, পিএম’। শুনে মুচকি হাসতেও দেখা যায় রাহুলকে! বক্তৃতার গোড়া থেকেই ক্ষমতাসীন বিআরএস-কে তিনি আক্রমণ করে বলেন “তেলঙ্গনার স্বপ্ন ছিল গরিব, কৃষক, শ্রমিক, পিছিয়ে পড়া মানুষের স্বপ্ন। আপনারা যখন স্বপ্ন দেখছিলেন, তখন টিআরএস অন্য কিছু করেছে। তারা এই স্বপ্নকে টুকরো টুকরো করে কেটেছে। তারা নামও বদলে বিআরএস করেছে। অর্থাৎ বিজেপি রিস্তেদার সমিতি!” রাহুলের কথায়, “আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী ভাবেন তিনি তেলঙ্গনার রাজা। এই রাজ্য তাঁর জায়গির। যে জমি আমার ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধী দলিত-জনজাতিদের দিয়েছিলেন, টিআরএস তা ফেরত নিয়ে নিয়েছে। এই জমি মুখ্যমন্ত্রীর নয়, আপনাদের। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে আপনাদের হাতেই তা তুলে দেবে।” কেসিআর-এর বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, দুর্নীতির প্রশ্নে ‘‘আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী কিছু করতে বাকি রাখেননি। শুধুমাত্র কালেশ্বরম প্রকল্প থেকেই এক লাখ কোটি টাকা উনি হাতিয়ে নিয়েছেন। সমস্ত প্রকল্পে উনি চুরি করেছেন। কৃষক দলিত জনজাতি যুবকদের সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছেন।”
কর্নাটকে সদ্য জয়ের প্রসঙ্গ বারবার তুলে আজ তেলঙ্গনাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন রাহুল। বলেছেন, “কয়েক মাস আগে আমরা কর্নাটকে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারে বিরুদ্ধে লড়ে জিতেছি। কংগ্রেসের সঙ্গে রাজ্যের সমস্ত গরিব মানুষ একজোট হয়েছে। এক দিকে বিজেপি এবং তার অত্যন্ত ধনবান কিছু বন্ধু, অন্য দিকে ছোট-বড় কৃষক, শ্রমিক, ছোট দোকানদার, জনজাতি। এমনটাই হবে এ বার তেলঙ্গনায়।”
বিরোধী শিবিরের পটনা বৈঠকে যোগ দেয়নি বিআরএস। ভোটের আগে স্বাভাবিক ভাবেই তাদের এবং কংগ্রেসের এক টেবিলে বসা সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে যাতে কোনও ধোঁয়াশা না থাকে, তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাহুল। বলেছেন, “সবাই বলেছিল, বিআরএস-কে ডাকতে। আমরা তাদের বলি বিআরএস এলে কংগ্রেস সেই বৈঠকে যোগ দেবে না। আমরা বিজেপির ‘বি’ দলের সঙ্গে বসব না। সমঝোতা করব না।” তেলঙ্গনার মঞ্চ থেকে রাহুল আজ বার্তা দিয়েছেন, “অনেকে আছেন, যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে গিয়েছেন। তাঁদের বলছি, আপনাদের জন্য দরজা খোলা রয়েছে। যাঁরা কংগ্রেসের বিচারধারায় বিশ্বাসী, তাঁরা ফিরে আসুন।” বিআরএস-এর প্রাক্তন সাংসদ শ্রীনিবাস রেড্ডি আজকের মঞ্চে কংগ্রেস যোগও দিয়েছেন। উপস্থিত ছিলেন তেলঙ্গনা প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। ছিলেন প্রাক্তন নকশাল কবি ও সঙ্গীতশিল্পী গদ্দর। তিনি রাহুলকে জড়িয়ে ধরে সস্নেহে চুমু খান।