রাহুল গান্ধীর সঙ্গে পদযাত্রার পথে ঋজু ঘোষাল (বাঁ দিকে)। মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে পদযাত্রার পথে সৌরভ প্রসাদ (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর যাত্রা-পথে এ বার বাংলা পড়েনি। কিন্তু বাংলার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি যে খোঁজখবর রাখছেন, হাঁটতে হাঁটতেই এ রাজ্যের কংগ্রেস প্রতিনিধিদের বুঝিয়ে দিলেন রাহুল গান্ধী। দলের নেতাদের প্রতি তাঁর বার্তা, সংগঠনকে চাঙ্গা করা ছাড়া কংগ্রেসের সামনে আর কোনও পথ নেই। আর তাঁর কাছে বাংলার নেতাদের আর্জি, জোট হয়েছে অনেক! এখন কংগ্রেস বরং একাই লড়াই করুক। কথা প্রসঙ্গে বাংলায় বিধানসভা ভোটে শূন্য হয়ে যাওয়ার পরে রাস্তায় নেমে বামেদের লড়াই এবং ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার প্রশংসাও করেছেন রাহুল।
যে সব রাজ্য দিয়ে রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ যাচ্ছে না, সেখানকার কংগ্রেস নেতা-কর্মীরাও কোনও না কোনও অংশে যাত্রায় শামিল হচ্ছেন। রাস্তায় হাঁটার ফাঁকেই দলীয় সহকর্মীদের কথা শুনছেন ওয়েনাড়ের সাংসদ। সেই ভাবেই মধ্যপ্রদেশের সুসনেরে রাহুলের সঙ্গে পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করে কথা বলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ঋজু ঘোষাল। একই ভাবে উজ্জয়িনে কথা বলেছেন ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তথা যুব কংগ্রেসের অন্যতম সহ-সভাপতি সৌরভ প্রসাদ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছাত্র পরিষদের ১২ জনের প্রতিনিধিদল। ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র পদযাত্রী পূজা পরাজিতা রায়চৌধুরীর সঙ্গেও এর আগে বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছিল রাহুলের। এঁদের সকলেরই আর্জি, আর যেন কোনও ভাবেই তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরা না হয়! রাহুল তাঁদের বলেছেন, এই যাত্রায় বেরিয়ে সকলের কথা তিনি শুনছেন।
ঋজু-সৌরভদের দাবি, গোয়া, ত্রিপুরা-সহ নানা রাজ্যে তৃণমূল যে আসলে কংগ্রেসের ভোট কেটে দিয়ে বিজেপিরই সুবিধা করে দিচ্ছে, এই মত রাহুলের কাছে জানিয়েছেন তাঁরা। বাংলায় তৃণমূলের আমলে শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়ার অভিযোগও তাঁরা তুলেছেন। ঋজুর দাবি, রাহুল জানতে চেয়েছেন, ২০১১ সালে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করা ভুল হয়েছিল বলে কি তাঁরা মনে করেন? ঋজু বলেছেন, ২০১০ সালেও রাজ্যে কংগ্রেসের প্রায় ২০% ভোট ছিল, এখন যা তলানিতে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি এখানে কংগ্রেসের যা ক্ষতি করেছে, তৃণমূল কংগ্রেসকে ভেঙে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। তৃণমূলের নীতি ও কাজকর্মে লাভবান হয়েছে বিজেপিই।’’ সৌরভকে রাহুল প্রশ্ন করেছেন, একা লড়ার শক্তি কি কংগ্রেসের আছে? সৌরভ বলেছেন, উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে কংগ্রেস যদি একা লড়াই করতে পারে, বাংলায় কেন পারবে না?
কংগ্রেস সূত্রের খবর, দলের পুনরুজ্জীবনে মন দিতে পরামর্শ দিয়েছেন রাহুল। সেই কাজে সমস্যা কোথায় কোথায়, সে সব শুনেছেন। ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ হয়ে গেলে দলকে উজ্জীবিত করতে বাংলায় আসার আশ্বাসও দিয়েছেন। সৌরভের কথায়, ‘‘লোকসভা ভোট যত কাছে আসবে, তৃণমূল নেত্রী সনিয়া গান্ধী-রাহুল গান্ধীদের সঙ্গে দেখা করবেন। সৌজন্যের খাতিরে দেখা করলেও এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের সঙ্গে জোট যেন না হয়, সেই আর্জি জানিয়েছি রাহুলজি’র কাছে।’’ আর এই আলোচনায় বাম প্রসঙ্গে রাহুলের মত, মতাদর্শের কারণেই বামেরা হারিয়ে যাবে না। তবে মতাদর্শের সঙ্গে সময়োপযোগী বিষয়ের মিশ্রণ ঘটিয়ে এগোতে হবে।