রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।
ক্যালিফোর্নিয়ায় সিলিকন ভ্যালির সাইবার প্রযুক্তির শীর্ষ কর্তাদের সামনে প্রধানমন্ত্রীকে ছদ্ম ফোন করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী! ঠাট্টার ছলেই আমেরিকার মঞ্চ থেকে বার্তা দিলেন, ফোনে আড়ি পাতায় সিদ্ধহস্ত মোদী সরকার। তুললেন পেগাসাস প্রসঙ্গ। অন্য একটি অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর বক্তব্য, সংসদীয় রাজনীতির সূচনায় ভাবেননি, তাঁর সদস্যপদই খারিজ হয়ে যাবে। তবে আখেরে তাঁর সামনে যে মানুষের কাছে পৌঁছনোর বড় দরজা খুলে গিয়েছে, এ কথাও একই সঙ্গে জানান রাজীব-পুত্র। আলোচনায় চিন প্রসঙ্গও ওঠে। ভারত-চিন পরিস্থিতিকে ‘কঠিন’ হিসেবে বর্ণনা করলেও, অন্য বারের মতো মোদীর চিন-নীতিকে নিশানা করতে দেখা যায়নি কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতিকে।
ছ’দিনের আমেরিকা সফরে গিয়ে প্রথম দিন থেকেই আক্রমণাত্মক রাহুল গান্ধী। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সে দেশের অনাবাসী ভারতীয়দের সামনে মোদীর ‘বিশ্বগুরু’ ভাবমূর্তিতে চিড় ধরানোর পাশাপাশি লোকসভা ভোটের আগে আন্তর্জাতিক স্তরেও কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাইছেন রাহুল। আজ ক্যালিফোর্নিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা, মেশিন লার্নিং-এর মতো বেশ কিছু প্রযুক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনায় যোগ দেন রাহুল গান্ধী। সেখানেই তিনি বলেন, তাঁর ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে এবং তা তিনি ভাল করেই জানেন। তথ্য সুরক্ষার প্রসঙ্গ উঠতেই পেগাসাসের ঘটনা মনে করিয়ে দেন রাহুল। নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতাদের ফোনে আড়ি পাততে পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। কথা বলার ফাঁকেই ফোন কানে দিয়ে রাহুলকে কিছুটা নাটকীয় ভাবে বলে উঠতে দেখা যায়, “হ্যালো মোদীজি, মনে হয় আমার ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে! আমি কী ভাবছি, কী করছি সমস্ত কিছুই সরকার জানতে পারছে। তবে মনে হয়, দেশ ও ব্যক্তি সকলের জন্যই তথ্যসুরক্ষা ক্ষেত্রে কড়া আইন প্রণয়ন করা দরকার।” রাহুলের মতে, “ভারতে যদি প্রযুক্তির বিস্তার ঘটাতে চান, তা হলে এমন একটা সরকার থাকা দরকার যারা ক্ষমতা নিজের হাতের মুঠোয় ধরে রাখে না।” প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদের আক্ষেপ, “বর্তমান যুগে তথ্য আসলে সোনার সমান, কিন্তু ভারত তার গুরুত্ব বুঝতে পারেনি।”
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ভারতীয় পড়ুয়াদের প্রশ্নের জবাবে, কংগ্রেস নেতা বলেছেন যে রাজনীতিতে যোগদানের সময় তিনি কখনও কল্পনাও করতে পারেননি যে লোকসভা থেকে তাঁর সদস্যপদ খারিজ হবে। তাঁর কথায়, “তবে আমি মনে করি, এটি আসলে আমাকে বিশাল সুযোগ দিয়েছে। সম্ভবত আমি যে সুযোগ পেতাম, তার থেকে অনেক বড়। এই ভাবেই রাজনীতি কাজ করে।” তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, নাটকটি সত্যিই শুরু হয়েছিল, প্রায় ছয় মাস আগে। আমরা লড়াই করছিলাম। বিরোধীরা ভারতে লড়াই করছে বিশাল আর্থিক আধিপত্য, প্রাতিষ্ঠানিক দখলের বিরুদ্ধে।”
তবে বিদেশনীতি নিয়ে কেন্দ্রকে এ বার এখনও নিশানা করেননি রাহুল। পাশাপাশি, ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গেও মোদী সরকারের কূটনৈতিক অবস্থানকে কার্যত সমর্থন জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দেশগুলির প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে নয়াদিল্লির বিরত থাকার নীতি সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভারতের এখন নিজের স্বার্থ দেখার সময়।’’ অতীতে অনেক বারই নরেন্দ্র মোদী সরকারের চিন-নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি। তিন বছর আগে লাদাখের গালওয়ানে চিনা ফৌজের হামলায় কুড়ি জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পরে ভারতীয় ভূখণ্ডে ‘চিনের দখলদারি’ নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন রাহুল। আমেরিকা সফরে গিয়ে অবশ্য কূটনৈতিক ঐতিহ্য মেনেই মোদী সরকারকে নিশানা করলেন না তিনি। বরং বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে ভারত-চিন সম্পর্কের পরিস্থিতি কঠিন।’’ গত এক দশক ধরেই এমনটা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভারতকে ধাক্কা দিয়ে সরানো যাবে না।’’