Bihar Assembly Election

মোদীর মন্দির তাস, রাহুলের পকোড়া কটাক্ষ

এ দিন দ্বারভাঙায় প্রচারে গিয়ে সেখানকার মিথিলা অঞ্চলকে ‘জনক রাজা এবং সীতা মায়ের পবিত্র ভূমি’ হিসেবে প্রণাম জানিয়েছেন মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ০৪:১৭
Share:

ফাইল চিত্র।

দিন পাঁচেক আগে বিধানসভার ভোট প্রচারে প্রথম বার বিহারে পা রেখে ভরা জনসভায় সেনা, সীমান্ত, এমনকি জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের প্রসঙ্গ টেনেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আর আজ দ্বিতীয় দফার প্রচারে এসে তাঁর মুখে সেই রামমন্দির।

Advertisement

অযোধ্যায় ওই মন্দির নির্মাণ শুরুর কথা তুলে হয়তো কৌশলে ধর্মীয় ভাবাবেগকে উস্কে দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তার মধ্যে মঞ্চে বসা জোটসঙ্গী নীতীশ কুমারের প্রতি সূক্ষ্ম খোঁচাও প্রচ্ছন্ন রইল কি না, সেই জল্পনাও ভোটের বিহারে ঘুরপাক খেল দিনভর। অন্য দিকে, কেন্দ্র ও বিহার সরকারের যুগলবন্দিতে ওই রাজ্যে উন্নয়নের রথ ছোটার যে দাবি মোদী প্রত্যেক জনসভায় করছেন, তা উড়িয়ে দিয়ে তাঁর দিকে ‘পকোড়া-কটাক্ষ’ ছুড়ে দিয়ে গেলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী।

এ দিন দ্বারভাঙায় প্রচারে গিয়ে সেখানকার মিথিলা অঞ্চলকে ‘জনক রাজা এবং সীতা মায়ের পবিত্র ভূমি’ হিসেবে প্রণাম জানিয়েছেন মোদী। রামমন্দির প্রসঙ্গও টেনেছেন সেই সূত্রে। তাঁর কথায়, “মা সীতা নিশ্চয় এখন খুশি মনে মিথিলা এবং অযোধ্যার দিকে তাকাচ্ছেন।…কয়েক শতাব্দী অপেক্ষার পরে রামমন্দির নির্মাণ শুরু হয়েছে অযোধ্যায়। যাঁরা (কটাক্ষের সুরে তা আর কবে হবে বলে) বার বার তারিখ জিজ্ঞাসা করতেন, এখন তাঁরাই বাধ্য হচ্ছেন হাততালি দিতে।…আপনাদের সকলকে রামমন্দিরের জন্য অভিনন্দন।”

Advertisement

আরও পড়ুন: ভোটে বিহার: মোদীর নাম নিতেও নারাজ পরিযায়ীরা

হিন্দু ভোট টানার চেনা কৌশল তো বটেই, মোদীর এই মন্তব্যে মঞ্চে বসা জোটসঙ্গী তথা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের প্রতি খোঁচাও খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আরজেডি ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে বিহারের তখতে থাকাকালীন ২০১৫ সালে কটাক্ষের সুরে নীতীশ বলেছিলেন, “বিজেপি এবং আরএসএস শুধু বলে, রামলালা হম আয়েঙ্গে, মন্দির ওহি বনায়েঙ্গে। পর তারিখ নেহি বাতায়েঙ্গে।” অর্থাৎ, প্রতি বার ভোটের মুখে মন্দিরের কথা বললেও, তা তৈরির নির্দিষ্ট দিন কখনও শোনা যায় না বিজেপির মুখে।

রাজনৈতিক মহলের অনেকের ধারণা, এ দিন নীতীশকে সেই কটাক্ষ ফিরিয়ে দিয়েছেন মোদী। প্রচ্ছন্ন বার্তা, ১৫ বছর বিহার শাসনের পরে যখন সরকারবিরোধী হাওয়া জোরালো ভাবে বইছে, তখন নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সেই মোদী এবং বিজেপির উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে নীতীশকে। মঞ্চে বসে হাততালি দিতে হচ্ছে রামমন্দির শুরুর ঘোষণাতেও। মোদীর দাবি, অযোধ্যা-মিথিলাকে কেন্দ্র করে প্রস্তাবিত রামায়ণ পর্যটন সার্কিটের দৌলতে কাজের সুযোগ তৈরি হবে স্থানীয় মানুষের জন্য। কিন্তু কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, “মিথিলার মানুষকে ধোঁকা! ২০১৫ সালে ওই খাতে ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার পর থেকে তো আর এক টাকাও বরাদ্দ জোটেনি।”

আরও পড়ুন: এক ডজন জেলায় ঊর্ধ্বমুখী মৃত-আক্রান্তের পরিসংখ্যান

আজ প্রথম দফায় ভোট হয়েছে বিহারের ৭১টি আসনে। ভোট পড়েছে ৫৪.২৬ শতাংশ। নির্বাচনী বিধি বাঁচিয়ে বিজেপি, কংগ্রেস-সহ প্রায় সমস্ত দলের প্রথম সারির নেতারাই এ দিন প্রচারে চষে বেরিয়েছেন বাকি বিহারের বিভিন্ন এলাকা। লক্ষ্য, পরের দফার নির্বাচন।

যেমন, প্রতি জনসভায় নাগাড়ে উন্নয়নের তালিকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দাবি করেছেন, নির্বাচনী ইস্তেহারে দেওয়া সমস্ত প্রতিশ্রুতি ঝড়ের গতিতে পূর্ণ করছে তাঁর সরকার। কখনও বিহারকে তথ্যপ্রযুক্তি হাব হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন, কখনও বলেছেন বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের দৌলতে কাজের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনার কথা।

কিন্তু ওই কাজ না-থাকার অস্ত্রেই মোদীকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছেন এ দিন পশ্চিম চম্পারণ ও দ্বারভাঙায় প্রচারে আসা রাহুল। লকডাউনে বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা এবং এ রাজ্যে চাকরির অভাবের কথা মনে করিয়ে বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী এখন আর ২ কোটি চাকরির কথা বলেন না। উনি জানেন, মিথ্যে বলেছিলেন। মানুষও তা জানে। আবার বললে লোকে তাড়া করবে।” এই মন্তব্যের পরেই ভিড়ের মধ্যে থেকে এক জন চিৎকার করে বলেন, “উনি তো এখন পকোড়া ভাজতে বলছেন।” প্রবল হাততালির মধ্যে হাসিমুখে রাহুলের কটাক্ষ, “আপনারা পকোড়া ভেজেছেন? পরের বার নীতীশজি, মোদীজি এলে খেয়ে যেতে বলবেন।”

চম্পারণে আবার রাহুল মনে করিয়েছেন, পঞ্জাবে দশেরায় মোদীর কুশপুতুল পোড়ানোর কথা। বলেছেন, এই ঘটনা দুঃখজনক। কিন্তু এর কারণ হল, নীতীশ কুমার বিহারে ২০০৬ সালে যে কৃষি আইন চালু করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী এখন সারা দেশে সেই ব্যবস্থা চালু করতে চান। চাকরির অভাব আর কৃষি আইনকেই এ দিন ভোট-বাজারে রামমন্দিরের পাল্টা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement