প্রতিপক্ষের ঘরে ঢুকেই অবশেষে আক্রমণটা বাড়ালেন রাহুল গাঁধী। আজ গুজরাতের মেহসানা-তে নরেন্দ্র মোদীর জন্মভিটেয় দাঁড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন। রাহুলের দাবি, সহারা এবং আদিত্য বিড়লার মতো বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন মোদী। সহারার কাছে থেকে ৪০ কোটি ও বিড়লাদের কাছ থেকে ১২ কোটি। আয়কর দফতর এবং সিবিআইয়ের হাতে আসা সহারার ডায়েরি এবং বিড়লার কম্পিউটার-নথিতে ওই তথ্য রয়েছে বলে দাবি করে তিনি বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন।
বিষয়টা অবশ্য একেবারে নতুন নয়। এর আগে দিল্লি বিধানসভাতেও প্রসঙ্গটা উঠেছিল। তৃণমূলের তরফেও এক বার এই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। আইনজীবী প্রশান্তভূষণও এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন, যা খারিজ হয়ে যায়। সে দিক থেকে রাহুলের আজকের বক্তব্যে নতুনত্ব না থাকলেও গুজরাতে দাঁড়িয়ে যে ভাবে তিনি মোদীর বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন, তাতেই হইচই পড়েছে। বিজেপির তরফে স্বাভাবিক ভাবেই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সব অভিযোগ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি গঙ্গার মতোই পবিত্র।’’ বস্তুত যে দিন রাহুল সংসদ চত্বরে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, সে দিনই বিজেপি বুঝতে পেরেছিল যে, সহারা আর বিড়লা প্রসঙ্গ নিয়েই বোমা ফাটাতে চান তিনি। যে কারণে তৎক্ষণাৎ সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমারকে দিয়ে লোকসভায় ভিভিআইপি কপ্টার কেলেঙ্কারিতে গাঁধী পরিবারের নাম থাকার বিষয়টি তোলা হয়। এ দিন রবিশঙ্কর প্রসাদের কটাক্ষ, ‘‘ইউপিএ আমলে কপ্টার, টু’জি, কমনওয়েলথ দুর্নীতির কথা লোকে ভোলেনি।’’ পাশাপাশি দলীয় সূত্রে খবর, সহারার ডায়েরিতে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়-সহ দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের নামেও টাকা নেওয়ার কথা আছে।
কিন্তু সে সব পরের কথা। আপাতত রাহুল প্রকাশ্যে মোদীকে বিঁধে আলোড়ন তৈরি করেছেন। নোট বাতিল নিয়ে সংসদে বলার সুযোগ না পেয়ে বারবার হুমকি দিচ্ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি নিয়ে তিনি মুখ খুললে ভূমিকম্প হবে! কিন্তু সংসদ শেষ হওয়ার পরে গোয়া, কর্নাটকে জনসভা করলেও তেমন কিছু বলেননি। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, পরিকল্পনা করেই মোদীর ঘরের মাটিতে আক্রমণ শানিয়েছেন রাহুল। তাঁর কৌশল হল, দুর্নীতি বন্ধের বার্তা দিয়ে ক্ষমতায় আসা মোদীকে সেই অস্ত্রেই বধ করা। এবং দুই, জাতীয় স্তরে রাজনৈতিক দ্বৈরথকে মোদী-বনাম রাহুলে পর্যবসিত করা। আর সেই কারণেই কাল যখন প্রধানমন্ত্রী বারাণসীতে সভা করবেন, তার কিছু পরেই উত্তরপ্রদেশের বাহারাইচে পাল্টা সভা করার কথা রাহুলের।
আজ রাহুলের জনসভা ছিল গুজরাতের সেই মেহসানা জেলায়, যার ভদনগরে মোদী জন্মেছেন, স্টেশনের পাশে চা বেচে বড় হয়েছেন। সেখানে কী বলেছেন রাহুল? মানুষের দৈনন্দিন নোট-যন্ত্রণা, গরিবের টাকা ব্যাঙ্কে ঢুকিয়ে ব্যবসায়ীদের ফায়দা পাইয়ে দেওয়ার মতো রুটিন বিষয়গুলি ছুঁয়েই রাহুল বলেন, ‘‘২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর সহারার দফতরে তল্লাশি চালিয়ে আয়কর দফতরের হাতে একটি ডায়েরি আসে। তাতে লেখা রয়েছে, ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে নরেন্দ্র মোদীকে আড়াই কোটি টাকা দিয়েছে সহারা। অক্টোবর থেকে পরের বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ন’টি এন্ট্রি রয়েছে, যেখানে নরেন্দ্র মোদীকে সহারার পক্ষ থেকে পাঁচ মাসে মোট ৪০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।’’ সহারার পাশাপাশি আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর কাছ থেকেও মোদী ১২ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে রাহুলের প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যখন আয়কর দফতরের হাতে কাগজ রয়েছে, তখন তাঁর উচিত দেশকে জানানো যা অভিযোগ উঠেছে তা সত্যি না মিথ্যা?
বিজেপি নেতারা মনে করছেন, রাহুল এত দিন এই অভিযোগ সংসদে করতে চাইছিলেন যাতে সাংসদদের রক্ষাকবচ পান। সেই আড়ষ্টতা ঝেড়ে রাহুল আজ জনসভায় অভিযোগটি এমন সুকৌশলে করেছেন যেখানে মানহানির মামলা করা কঠিন। কারণ তিনি গোটা অভিযোগই তুলেছেন আয়কর দফতরের নথির উল্লেখ করে।
কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘এ তো সবে শুরু। রাহুল গাঁধীর ভাঁড়ারে আরও অনেক খাজানা রয়েছে। উপযুক্ত সময়ে সেই সব ভূমিকম্প মোদীর পায়ের তলায় মাটি নড়িয়ে দেবে।’’
এমতাবস্থায় আগামিকাল বারাণসী যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি কী জবাব দেন, সেটাই দেখার।