মোদী শ্রমিক-বিরোধী, তকমা দিলেন রাহুল

গরিব কৃষকের পরে এ বার অস্ত্র শ্রমিকদের স্বার্থ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কৃষক-বিরোধী তকমা দিয়ে উগ্র আন্দোলনে নেমে ক’দিন আগেই সাফল্য পেয়েছে রাহুল গাঁধীর দল। জমি আইনের সংস্কার থেকে হাত গোটাতে বাধ্য হয়েছে মোদী সরকার। পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) বিলও সংসদে পাশ হবে কি না সেটা নির্ভর করছে, এ ব্যাপারে রাহুলের তিন আপত্তির কতটা সরকার মেনে নেবে তার উপরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:০৬
Share:

আইএনটিইউসি-র সমাবেশ মঞ্চে রাহুল গাঁধী। শনিবার। নয়াদিল্লিতে।— পিটিআই

গরিব কৃষকের পরে এ বার অস্ত্র শ্রমিকদের স্বার্থ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কৃষক-বিরোধী তকমা দিয়ে উগ্র আন্দোলনে নেমে ক’দিন আগেই সাফল্য পেয়েছে রাহুল গাঁধীর দল। জমি আইনের সংস্কার থেকে হাত গোটাতে বাধ্য হয়েছে মোদী সরকার। পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) বিলও সংসদে পাশ হবে কি না সেটা নির্ভর করছে, এ ব্যাপারে রাহুলের তিন আপত্তির কতটা সরকার মেনে নেবে তার উপরে। কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল এ বার মোদীকে শ্রমিক-বিরোধী তকমা দিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপানোর হুমকি দিলেন।

Advertisement

কংগ্রেস সহসভাপতির দাবি, শ্রম আইন লঘু করে দেশের শ্রমিকদের ওপর বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে মোদী সরকার। কিন্তু শ্রমিক স্বার্থে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বে না কংগ্রেস। এ ব্যাপারে বিজেপি এবং আরএসএসের বিরুদ্ধে লড়ে যাবেন তিনি। রুখবেন মোদী সরকারের শ্রম আইন সংস্কারের চেষ্টা। দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-র ৩১তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন হল আজ। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়েই দেশ জুড়ে তামাম শ্রমিক-মজুরকে আজ ‘মোদী-জুজু’ দেখানোর চেষ্টা করেন রাহুল। সেই সঙ্গে নিত্যনতুন স্লোগান দেওয়া ও পরের পর প্রকল্প ঘোষণা করে চলার জন্যও রাহুল আজ দলের শ্রমিক সংগঠনের মঞ্চ থেকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে টিপ্পনি কাটেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে।

কৃষক-শ্রমিকের স্বার্থ দেখার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ‘ধারাবহিকতা’র সঙ্গে মোদী সরকারের ‘হুজুগেপনা’র তফাতটা তুলে ধরতে রাহুল বলেন, ‘‘আজকাল খবরের আয়ু মাত্র এক দিন। ফেসবুক, টুইটার, সেলফির জমানা চলছে। এ এমন একটা সময়, যখন মানুষের কল্পনা প্রকাশে শব্দের ব্যবহার হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সেই শব্দের পিছনে যে ভাব রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। ফের নতুন শব্দ ও স্লোগান এসে যাচ্ছে। আর মানুষের দৃষ্টি সে দিকে ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ এই সূত্র ধরেই প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘শুরুটা হয়েছিল ‘অচ্ছে দিন’ দিয়ে। তার পর এল ‘স্বচ্ছ ভারত’। কিছু দিন পর কথা শুরু হল স্মার্ট সিটি নিয়ে। তার পরে মেক ইন্ডিয়া, ডিজিট্যাল ইন্ডিয়া। আর এখন আমরা রয়েছি অ্যাকসেসিবল ইন্ডিয়ায়। ঈশ্বর জানেন, এর পরে নতুন কী ভাঁওতা আসছে!’’

Advertisement

আদতে মোদী সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বা ‘স্কিল ইন্ডিয়া’র মতো প্রকল্পকে বিঁধতে এটা ছিল রাহুলের গৌরচন্দ্রিকা। এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘উৎপাদনে ভারত যে চিনকে ছাপিয়ে যেতে পারে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি এক মত। কিন্তু ওঁর সঙ্গে আমার মিল শুধু ওইটুকুই। এর প্রক্রিয়াটা কী হবে, সেটা নিয়ে আমাদের মধ্যে মৌলিক ফারাক রয়েছে।’’ এর পরেই মোদীর উদ্দেশে রাহুলের পরামর্শ, ‘‘শুধু শিল্পপতিদের ওকালতি না করে উৎপাদন বাড়াতে শ্রমিকদের কথা শুনুন প্রধানমন্ত্রী।’’

এর আগে জমি অধ্যাদেশের বিরোধিতায় নেমে সনিয়া গাঁধীরা বুঝিয়েছিলেন, মোদী জমানায় দেশের কৃষকরা বিপন্ন, শ্রমিকদের উদ্দেশে আজ ঠিক একই বার্তা দিলেন রাহুল। শ্রম আইন সংস্কারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মনে করেন ভারতের শ্রমিকরা বেইমান। তাঁরা দুর্বল। তাঁদের কেবল লাঠি মেরে কাজ করানো সম্ভব। তিনি মনে করেন, শ্রমিকদের শৃঙ্খলাপরায়ণ করে তুলতে শ্রম আইনকে লঘু করে তোলা দরকার। যাতে বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন, ‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’ নীতি প্রণয়ন ও শ্রমিক সংগঠনগুলিকে দুর্বল করতে পারলেই শ্রমিকরা কাজ করবে।’’ কিন্তু কংগ্রেস এই অন্যায় চলতে দেবে না বলে ঘোষণা করেন রাহুল। তাঁর অভিযোগ, শ্রমিকদের উপরে আঘাত আসছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও। রাজস্থান, গুজরাত, আর এখন হরিয়ানায় সংশোধিত শ্রম আইন দেখলেই বোঝা যাবে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে জোর হামলা শুরু হয়েছে।

কংগ্রেসের শ্রমিক মঞ্চে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের মন্তব্যও ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে মনমোহনই শ্রম আইন সংস্কারের কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন। তিনিই আজ বলেন, ‘‘শ্রম আইন সংস্কারের নামে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ ও হায়ার অ্যান্ড ফায়ার নীতিতে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে না। এনডিএ সরকারের এই ব্যর্থতার কারণেই শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে। সে দিক থেকে গত ২ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের ডাকা এক দিনের ধর্মঘট অনিবার্যই ছিল।’’ যদিও অসন্তোষ মেটাতে ধর্মঘট বা উগ্র আন্দোলনের পথ ছেড়ে আলোচনার মাধ্যমেই মীমাংসার পরামর্শ দেন মনমোহন।

কিন্তু রাহুল বুঝিয়ে দেন, এ ব্যাপারে উগ্র আন্দোলনে ঝাঁপ দিতেও দ্বিধা নেই তাঁর। মোদী সরকারকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি না, দেশের শ্রমিকরা ফাঁকিবাজ ও বিশৃঙ্খল। ভারতে উৎপাদনের হার কম হওয়ার কারণ হল, শ্রমিকরা প্রতি মুহূর্তে ভয়ে ভয়ে থাকেন। তাঁদের কাজ থাকবে তো! শ্রমিকদের ও তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সেই সুরক্ষা কবচটা দিতে পারলেই তাঁদের থেকে আরও বেশি উৎপাদন পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।’’

সামগ্রিক ভাবে শ্রমিক শ্রেণিকে কাছে টানা এই চেষ্টার পাশাপাশি কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনকে আরও চাঙ্গা করারও দাওয়াই দিয়েছেন রাহুল। খাতায়-কলমে সওয়া তিন কোটি সদস্য থাকলেও মোদী সরকার আইএনটিইউসি-কে দেশের বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠনের স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করছে। এই পরিস্থিতিতে রাহুল এ দিন জানিয়ে দেন, শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা কংগ্রেসেরও সদস্য। আগামী দিনে এই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনেও টিকিট দেওয়া হবে। তাতে শ্রমিকরাও তাঁদের
জন্য কোনও আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।

সন্দেহ নেই বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাতে ভোটের ফল কংগ্রেসকে অনেকটাই অক্সিজেন জুগিয়েছে। রাহুল মনে করছেন, জাতীয় স্তরে ‘মোদী মিথ’ ক্রমেই লঘু হয়ে পড়ছে। এবং এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েই কৃষক, শ্রমিক, আদিবাসী থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন অংশকে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার চেষ্টা শুরু করেছেন তিনি। ফলে আগামী দিনে রাহুল তথা কংগ্রেসের এই আক্রমণের তেজ বাড়বে বই কমবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement